আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিঃস্বার্থ ভালোবাসা-What is joke

জাতীয় সঙ্গীত শুরু হলো, দাঁড়িয়ে এক হাত বুকে দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করছি, আচমকা নারী কন্ঠের আর্তনাদ, ‘হেল্প...হেল্প...হেল্প...প্লিজ হেল্প...’ তব্দা খেয়ে গেলাম হঠাত। চারপাশে উকি দিলাম একবার। শিট, কোন ছেলে নিজের বুকে হাত রাখতে গিয়ে আবার কোন মেয়ের...?আসতাগফিরুল্লাহ।
নাহ্‌, ভুল ভাঙল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে,সিনেমা শুরু হয়ে গেছে। শুরুতেই বখাটেরা এক চাইনীজকে দাবড়ানি দিচ্ছে।

দর্শকরা উত্তেজিত,এমন ড্যাশিং ওপেনিং এই সিনেমা ছাড়া কেবল বাংলাদেশ এর খেলাতেই দেখে লোকজন। এখুনি ফষ্টিনষ্টি হবে হবে ভাব। দর্শকের দাঁতে দাঁত,হাতে হাত,কারো হাত আবার অন্যপথ খুঁজছে। কিন্তু বিধি বাম। মিলা গানে গানে বলেছিল আকাশ থেকে পরী নামে,কিন্তু অনন্ত যে একটা জ্বীন এবং সেও যে আকাশ থেকে নামতে পারে সেটা মিলা মিস করে গেছে।

এইজন্যে অনন্তের কাছে মিলার ক্ষমা চাওয়া উচিত করজোড়ে। সুপারম্যান পর্দা আর প্যান্টের ওপর আন্ডারওয়্যার টা ছাড়া আর স্পাইড্যারম্যান দড়ি ছাড়া উড়তে পারে না,কিন্তু অনন্তের একটা ক্লাস আছে, সে বিজনেস ম্যান। তাই সে বাইক ছাড়া উড়তে পারে না। বিল্ডিং থেকে দড়ি ধরে বেয়ে বেয়ে নামতে হলেও বাইকে চড়ে সে দিব্যি কয়েকতলা উপরে উঠে যায় মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে মিডল ফিঙ্গার দেখিয়ে... নিউটন মরে গিয়ে বেঁচে গেছে। হার্ডব্রেক করে অনন্ত ভাসতেসে আকাশে নীলগিরির মেঘের মতো।

খেয়াল করে দেখলাম বাইকের চাকা ঘুরে না। জড়তা সূত্রের গোয়াটাও মাইরা দিলো। নিউটন বেঁচে থাকলে এই সিন দেখার পর মাস্ট জেল এ থাকতো। কিছু ডিসুম ডিসুম অতঃপর ঢাকার পুলারা ভেরি ভেরি স্মার্ট। দুই পা দুদিকে চ্যাগায়ে ম্যাগায়ে দেওয়া মুভ গুলো দেখে মনে হলো তার পাইলস এর প্রবলেম আছে।


গ্লামারগার্ল এর মুভি তে এন্ট্রি...রংওয়ে তে। দর্শক শিহরিত;যা ড্রেসাপ ছিলো তা দেখে মনে হলো তার বাপে শাকপাতা খাওয়ায়ে তার জিনস আর টপস কেনার ব্যাবস্থা করসে। দেশে এমন মাথা নষ্ট শৌখিন গরীব গুগলে সার্চ দিয়েও মিলবে না সিওর। অবশ্য মেঘলা যে গরীব সেটা অনন্তের অফিসে যাওয়ার পর বুঝা গেসে। কোন ফকিন্নির পুলাও এমনে এতোবার ওয়াও ওয়াও করবে না কারো অফিসে গিয়ে।

অনন্তের সাথে দেখা মেঘলার, অনন্তের মোবাইলে হেল্পলাইনের চেয়েও বেশি কল আসে। কল সেন্টারে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতেসি, ইটস টু মাচ। আমি এক সপ্তাহেও এতো কল ধরিনাই। তার মাঝেও অনন্ত চুপ করে মেঘলার শাকপাতার গল্প শুনতেসে। বিশ্বাস করেন, অনন্ত যে কিছুক্ষণ চুপ ছিলো সেই কিছুক্ষণ ই ছিলো পুরা মুভির বেস্ট মোমেন্ট।


অনন্ত বিশাল এক বিজনেসম্যান কাম মডেল কাম হিরো কাম সমাজসেবক কাম প্রেমিক কাম। তার মারে বাপ...এই জন্যেই দেশে এতো এতো বেকার। সে একা এতো কিছু হয়ে গেলে বাকি ছেলেরা কি করবে? হতাশ হলাম নিজের কথা ভেবে। আর মেয়েরা তার জন্যে যা পাগলা এক্সপ্রেশন দিচ্ছিলো তাতে মেয়ে হয়ে জন্মাই নাই দেখে দুই রাকাত নফল মানায আর সাথে মেয়েদের জন্যে দুয়া করবো বলে ঠিক করলাম মন থেকে।
মেঘলা এজে এর সাথে কথা বলছে-ভাইয়া ভাইয়া করে ডাকতে ডাকতে অস্থির।

রান্না করলো, নিজ হাতে খাওয়ায়ে দিলো। ঠিক আছে ভাই রে বোন খাওয়াই দিতেই পারে কিন্তু দুই মিনিট পর ই অনন্তের বুকে ইয়ে দিয়ে দিলো। কেমনে কি!! ভাই-বোন? ইয়ে...মানে, কেউ ভাইয়া ডাকলেও তো এখন ওই সিনটা... নাহ। আমি বাকরুদ্ধ, শরমে কেউ চোখরুদ্ধ,কারো আবার গলারুদ্ধ, পপকর্ন আটকে গেছে, কোক খাইয়া ছুটাইতেসে।
মুভিতে অনন্তের ড্রেসাপ চোখে পড়ার মত, মেয়েদের স্পর্শকাতর এলাকা কেনও দেখানো হয় তা কিছুটা বুঝতে পারলেও অনন্তের স্পর্শকাতর এলাকা দেখানোর উদ্দেশ্যটা ঠিক ক্লিয়ার না আমার কাছে।

চেহারা ছাড়া গলা থেকে নিচের অংশ দেখলে স্বয়ং অনন্তও ভুল বুঝে বসে থাকবে। আর মাশাল্লাহ সে হাঁটার সময় তো যা মুভমেন্ট হয় তা দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম একবার। ভাগ্যিস টু ডি তে দেখতেসি, থ্রি ডি তে দেখলে কি না কি দেখতাম জামবুরা কদবেল... কে জানে। মুভির এই পর্যায়ে এসে ক্লিয়ার হলাম ময়ূরী কেন সিনেমা ছেড়ে বিএনপি তে যোগ দিসে। আসলে প্রতিদ্ধন্দী জিনিষটা সবাই ইজিলি নিতে পারে না।



মুভিতে মেঘলার ক্যারেক্টার নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। এমন হয় ই...অভাবে স্বভাব নষ্ট। অবশ্য অনন্তের মেঘলার জন্যে অনন্ত পেম দেখে চেয়ারের হাতলে কয়েকবার বারি দিলাম আফসোসে। আমাকে বর্ষা হিসেবে জন্ম না দেওয়াটা আমার বাবা মায়ের সবচেয়ে বড় ব্যার্থতা। আর বার বার অনন্তের ক্ষমা করাটা ভাল্লাগসে।

জ্বলজ্যান্ত একটা ফাদার তেরেসা দেখাটা আমার সাত জনমের ভাগ্য।
মেডিকেল সায়েন্স নিয়ে জানিনা। অজ্ঞ বলেই হইতো খাবলায়া হার্ট বের করাটা তেমন বিশেষ কিছু মনে হয় নাই। ঢাকার পুলারা স্মার্ট আফটার অল। কিন্তু হার্ট এ ছুড়ি চালানো,গুলি মারা আর বোমা মারা দেইখা মনে হইলো ডাক্তারদের সাথে অনন্তের শত্রুতা আছে।

ভাতে মারতে চায় নাইলে তার গার্মেন্টস এর কর্মী বানাইতে চায়। আর মেডিকেল সায়েন্স এর গোয়া মাইরা বেঁচে যাওয়াটাও তেমন কিছু না। অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্তের কাছ। ইয়ে, শিরক হইয়া গেলো নাতো আবার? হেফাজত শুনলে খবর আছে।
জলিল ভাই, পুনশ্চ ১: দুনিয়াতে এমন কোন বিজনেস ম্যান আছে কিনা জানিনা যেইটা আন্ডারটেকার এর বেল্ট পড়ে অফিস করে।

একটু লজিক্যাল হোন বস। অফিসের বাইরে জাঙ্গিয়া পরলেও আপত্তি নাই। পুনশ্চ ২: এজ এক্সপেকটেড, বাংলা সিনেমাতে ইংরেজী সংলাপ ঢুকানোটা ভাবয বাড়ানো কিছুনা। উলটা খ্যাঁত হয়ে যায়। জংলিশ ঢুকানোর চেয়ে শুধু বাংলা টা অনেক বেটার।

পুনশ্চ ৩: শার্ট পইড়েন বা টিশার্ট পরলে গলা ছোট রাইখেন, এইভাবে ক্লিভেজ দেখায় বি গ্রেড মুভির নায়িকারা। আর আপনার এই দুরাবস্থার একটা ব্যবস্থা করেন। দুষ্টু ছেলেরা বলে, আপনার চেষ্ট বিকামিং ব্রে...! থাক... পুনশ্চ ৪: সাউন্ড কোয়ালিটি, স্ক্রিনক্যাপচার আর একশ্যান শট গুলো ইম্প্রেসিভ...বেশ ইম্প্রেসিভ। পুনশ্চ ৫: মুভিতে কথার চেয়ে হাত নাড়ানাড়ি বেশি...বুঝলাম না। এটা কি স্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্যে? পুনশ্চ ৬: এটলাস্ট,অভিনয়টা শিল্প, ঘাউড়ামির জায়গা না।

মুভিতে আপনার কান্না দেইখা কেউ হাইসা দিলে সেই মুভির আর সার্থকতা থাকে না,ইউর একটিং ইজ ফাকড দ্যান। তা আপনে যতোই আর্ন করেন মুভি থেকে, যতই ব্যবসা করুক আপনার মুভি।
নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দর্শন, জীবনের এক অন্যতম মাইলফলক স্পর্শ করলাম।

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.