আমি অতি সাধারণ মানুষ ১ম পর্বের লিঙ্ক- Click This Link
২য় পর্বের লিঙ্ক- Click This Link
শ্রীলঙ্কার সাথে সাকিবের ৯২* (৬৯)
এই ম্যাচের আগে সাকিবকে এরকম মারমার কাটকাট ব্যাটিং করতে দেখিনি। ও আগে নিয়মিত রান করত, কিন্তু এরকম এক্সপ্লোসিভ ব্যাটসম্যান ছিল না। হঠাৎ করেই যেন রূদ্রমূর্তি ধারণ করে সাকিব। ট্রাইনেশন সিরিজে বাংলাদেশের অবস্থা তখন খারাপ। প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের সাথে হেরে গিয়ে ফাইনালের আগেই বিদায় নেয়ার দারপ্রান্তে আমরা।
বাংলাদেশে খেলা অথচ ফাইনাল খেলবে জিম্বাবুয়ে আর শ্রীলঙ্কা-এটা মেনে নেয়াই কষ্টকর। শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারাতেই হবে। আর হারানোর দায়িত্ব নিলো সাকিব।
ভার্সিটি খোলা। ক্লাস যখন চলছে তখন শ্রীলঙ্কা ব্যাটিঙে।
বৃষ্টিবিঘ্নিত ৩১ ওভারের ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ১৪৭ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। রুবেল এই ম্যাচে স্লগ ওভারে দারুণ বল করে ৪ উইকেট পায়। কিন্তু এই টার্গেট সহজ নয়। একে তো পিচ খুব একটা ব্যাটিং সহায়ক নয়, তার ওপর আবার বৃষ্টি। শুধু তাই নয়, আমাদের জিততে হবে বোনাস পয়েন্টসহ।
নাইলে ফাইনাল খেলবে জিম্বাবুয়ে আর শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশের ব্যাটিং যখন শুরু হয় আমি তখন রাস্তায়, ভার্সিটি থেকে ফিরছি। বাসায় ঢুকে দ্রুত টিভিতে স্কোর দেখলাম। অবস্থা সুবিধার না। ৪৮ রানে ৩ উইকেট।
সাকিব ধুমায়া পিটাচ্ছে। কিন্তু জিতব কিনা বুঝা যাচ্ছে না। সাকিবের দুইটা শর্ট এখনো আমার চোখে ভাসে। প্রথমে কুলাসেকারাকে একটা স্কুপ করে ফাইনলেগ দিয়ে চার মারল। পরের বলে পয়েন্টের ওপর দিয়ে দুর্দান্ত আপার কাটে ছয়।
মুরালি আর মেন্ডিসকে ও যেভাবে খেলল, আমি রীতিমত মুগ্ধ। সাকিব তার ট্রেডমার্ক স্লগ সুইপে মুরালিকে মিড উইকেট দিয়ে চার মারল দুই তিনবার। মুরালি মিড উইকেটে এক্সট্রা ফিল্ডার নিল। যার ফলে অফসাইডে বাউন্ডারিতে কোনো ফিল্ডার নেই। সাকিব স্ট্যাম্প থেকে সরে অফসাইডে জায়গা করে এবার কাভার দিয়ে চার মারল।
দারুণ সব ক্যালকুলেটিভ রিস্ক নিচ্ছিল, আর প্রায় সবই পেইড অফ হচ্ছিল। এতটা ম্যাচিওরড ইনিংস আমি এর আগে বাংলাদেশের কারো কাছ থেকে দেখিনি। এমনকি আমি এত আশাবাদী সাপোর্টার হয়েও এই ধরণের ইনিংস এদেশের কারো কাছ থেকে আশা করিনি। আমার সমবয়সী এই ছেলেটার দারুণ ভক্ত হয়ে যাই আমি।
এরপর আসল সেই ফাইনাল।
আবার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ। সম্পূর্ণ পকেটে ঢুকে যাওয়া ম্যাচটা আমরা হারলাম। মুরালি অবিশ্বাস্য একটা ইনিংস খেলেছে ঐদিন। অথচ ও যখন রুবেলকে প্রথম দুইটা চার মারল, আমি খুশিই হয়েছিলাম। ভাবছিলাম আরে কয়টা আর টাইমিং করবি, মারতে থাক, আর দুএকটা মারলেই বল আকাশে উঠবে।
কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে মুরালির প্রতিটা বলই ব্যাটের মাঝ ব্ল্রেডে লেগে বাউন্ডারির বাইরে গেল। যাও একটা টপ এজ হল, তাও কিপারের মাথার ওপর দিয়ে চার।
সাকিবের এই ইনিংসের মাধ্যমে আমরা আরেকজন সত্যিকার ম্যাচ উইনার পাই। এর আগে সাকিব ছিল অনেকটা হাবিবুল বাশারের টেস্ট ভার্সন টাইপ। বাশার টেস্টে নিয়মিতভাবে রান করে গেছে।
২৩টা ফিফটি, সাথে ৩টা সেঞ্চুরি। কিন্তু বেচারা প্রায় ৩০০০ এর বেশি টেস্ট রান করেও একবারও ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়নি। অথচ যেই গুল্লুকে নিয়ে আমরা এত হাসি তামাশা করি, সেই গুল্লু টেস্টে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছে। এমনকি ইংল্যান্ডে বাংলাদেশের প্রথম সফরে বাংলাদেশের পক্ষে ম্যান অফ দ্য সিরিজও হয়েছে! সাকিবও ছিল অনেকটা সেরকম। রান করত নিয়মিত, কিন্তু প্রতিপক্ষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে যে রান করার একটা ব্যাপার আছে, ওর ব্যাটিঙের সময় প্রতিপক্ষ অধিনায়ক বারবার ফিল্ডিং পরিবর্তন করবে, কনভেনশনাল ফিল্ডিং সেট না করে একটু ভিন্ন ধরণের ফিল্ডিং সেট করবে-এই ব্যাপারগুলি ছিল না।
এই ইনিংসের মাধ্যমে তার ব্যাটিং অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমরা একজন পারফেক্ট ম্যাচ উইনার পেয়েছি। যে কিনা আমাদের পরবর্তিতে অনেক দুর্দান্ত জয় উপহার দিয়েছে।
(চলবে)
©Muhit Alam
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।