যে ঘড়ি তৈয়ার করে - সে - লুকায় ঘড়ির ভিতরে
গঙ্গার ধারের কালীঘাটের মন্দির। লোকে গিজগিজ। মা'য়ের দর্শন (মূর্তি দেখা) হচ্ছে ভিতরে, তিল ধারনের জায়গা নেই। আমি মন্দিরের কাছে যেতেই পান্ডারা (মন্দিরের দালালেরা) এগিয়ে এলো। দাদা, এদিকে আসুন।
মা'য়ের দর্শন দেবেন তো? আমাদের সাথে আসুন। খুশি করে দেবেন, আমার লাইন ছাড়া ভিতরে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। মায়ের জন্য ফুল কিনুন, প্রসাদ কিনুন। লাইনে দাড়ালে দুই ঘন্টা লেগে যাবে।
লোকজনের ভাবসাবে রূচি হলো না।
ঘুরে বেরিয়ে অন্যদিকের দরজা দিয়ে মন্দিরের চত্ত্বরে ঘুরে বেড়ালাম। ধর্ম নিয়ে ব্যবসা বড্ড নোংরা লাগে। এখানেও সেটা চলছিলো। টাকা দাও, ঠাকুর দর্শন করো। ও আমার পোষায় না।
বেরিয়ে আসতে দেখি একটা গাড়ির বনেট খোলা। ফুলের মালা ঝোলানো। ধুপ দিয়ে সেটাকে পবিত্র করা চলছে। ঠাকুরেরা পুজা দিয়ে গাড়িকে আশর্ীবার্দ করছে। টাকা দাও, পুজোর সার্ভিস নাও।
কালী ঘাট মন্দির ছাড়িয়ে পাশে মাদার তেরেসার নির্মল হৃদয়ের ঘর। আমার বন্ধুর সেখানে অবাধ এ্যাক্সেস, তাই ভিজিটর আওয়ার্স ছাড়াও ঢুকতে পারলাম। পাশের মন্দিরে ধর্ম নিয়ে ব্যবসার সাথে এ বড় কনট্রাস্ট। এখানে একেবারে মৃতু্য পথযাত্রী, কুষ্ঠ রোগী, রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া হাড় মাংস একসাথ হয়ে যাওয়া দুস্থদের সেবা দেওয়া হয়। তাদের সেবা করতে দুরদুরান্ত থেকে ভলান্টিয়াররা কাজ করেন।
সাথে আছে মিশনারী খ্রিস্টানরা। খুব ভালো লাগলো ওদের ডেডিকেশন, যীশুর নামে মানবতার সেবা।
অন্যদিনের কথা। আমি যে বাড়িতে ছিলাম সেই এলাকাটা মুসলিম অধু্যষিত। একদিন সন্ধ্যায় লোড শেডিং।
হঠাৎ শুনি মুহাররমের তাজিয়া যাচ্ছে। মুহাররাম চলে গেছে অনেকদিন হলো। গিয়ে জানতে চাইলে বললো মুহাররমের চলি্লশা। পুরো রাস্তা বন্ধ করে শ'খানেক লোক রাস্তার মাঝখানে বুক চাপড়াচ্ছে। পেছনে গাড়ি ঘোড়া যেতে পারছে না।
মিছিলটা একটু যায়, তারপর থামে আর গান গায়। পুরো রাস্তা দিয়ে একটা গাড়িতো ভালো, একটা সাইকেল যাওয়ারও ব্যবস্থা নেই। রাস্তা বন্ধ করে লোক দেখানো ধর্ম পালন হচ্ছে সেখানে।
সেন্ট জোসেফ ওলডেজ হোমে গিয়েছিলাম। একেবারে থুরথুরে বৃদ্ধদের নিবাসস্থল।
ওখানে সিস্টাররা নিরলসভাবে ভলান্টিয়ারদের সাথে নিয়ে সেবা করে যাচ্ছেন গরীব, কারো সব ছেলে মেয়ে মারা গেছে, যাবার কোন জায়গা নেই এরকম বৃদ্ধদের নিয়ে। তখন রাতের খাবারের সময় হয়েছে। অন্যান্য ভলান্টিয়ারদের সাথে মিলে আমরা বুড়ো বুড়িদের খাবার পরিবেশন করলাম। ওরা অল্প বয়স্কদের নিজেদের ভিতরে পেলে খুব খুশি হয়। হাত বুক জড়িয়ে ধরে কথা বলে, ধন্যবাদ জানায়।
ওখানেও মিশনারী সিস্টারদের নিরলস সার্ভিস মুদ্ধ করার মতো।
এই টুকরো ছবিগুলো উদাহরন মাত্র। তবে বিচ্ছিন্ন নয়। আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি ও পর্যবেক্ষন বলে যে অসংখ্য ধর্মের দেশ ভারতে এই মুহুর্তে কেউ যদি সত্যিকারের ভালো কাজ করে থাকে, মানবতার সেবা করে থাকে তবে তা ঐ ক্যাথলিক খ্রিস্টানরাই করছে। বাকি সবাই হয় ধর্মের নামে ব্যবসা করছে, নয়তো স্বার্থপরের মতো নিজের ক্ষুদ্রতা আর আমিত্ব নির্ভর ধর্মপালনেই ব্যস্ত।
ভারতের মুসলিম, ভারতের হিন্দু - উভয় গ্রুপের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। তাদের না আছে বৃহত্তর সমাজ সেবার মানসিকতা, না আছে পরিশীলিত মানবতা বোধ। খালি স্বার্থপরতা। এমনকি সেই স্বার্থপরতার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করতে হলেও সেটাও আছে।
ছবি: মিশনারী অফ চ্যারিটি যাদের জন্য কাজ করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।