জাদুনগরের কড়চা
ইদানিং আমার স্প্যাম ফিল্টারগুলো বেশ কার্যকর হয়েছে, কিন্তু কিছুদিন আগে পর্যন্তও নিয়মিত আমার ইনবক্সে মেইল পেতামঃ
"ঘরে বসেই ব্যাচেলর, মাস্টার্স, এমনকি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করুন। এখানে সুলভে অল্প সময়ে ডাক বা ইমেইল যোগে ডিগ্রি প্রদান করা হয়", ইত্যাদি ইত্যাদি।
বলা বাহুল্য, এগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঠগবাজদের একটা ব্যবসা। এসব তথাকথিত "বিশ্ববিদ্যালয়" গুলোর কোনোটারই স্বীকৃতি নাই, অস্তিত্বও নাই। বেকুব গোছের লোকদের ডিগ্রির মুলা দেখানোই এদের কাজ।
অল্প টাকা, যেমন ২০০ - ৩০০ ডলারে বিএসসি, আরেকটু বেশিতে মাস্টার্স, আরো বেশি দিলে পিএইচডি - এরকম কাগজ বেচার কাজ এরা করে থাকে।
গল্পে পড়েছিলাম,
এক লোক রাস্তা দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছিলো। পথে এরকম একটা সাইনবোর্ড দেখলো, "এখানে সুলভে মাস্টার্স ডিগ্রি দেয়া হয়"। লোকটা ঘোড়া থামিয়ে ২০টাকা দিয়ে একটা সার্টিফিকেট কিনে মহানন্দে যাওয়া শুরু করলো।
কিছু দূর যেতেই তার মনে হলো, আরে, এতো সস্তায় দিচ্ছে, ঘোড়াটার জন্যও তো নেয়া যায়।
ফিরে এসে সে তাই চাইলো।
"দুঃখিত স্যার, এখানে শুধু গাধাদেরই ডিগ্রি দেয়া হয়"। বিক্রেতা করুণ স্বরে বললো।
যাহোক, গল্প অনেক হলো, কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষার নামে কী তামাশা চলে, তা দেখা যাক।
বুয়েটে আমাদের সহপাঠী এক ইলেক্ট্রিকালের ছাত্র ছিলো।
প্রচন্ড বুদ্ধি তার, বলা বাহুল্য, সেটা "ধান্ধা" পর্যায়ের বুদ্ধি। ব্যবসায়িক দিকে তার মাথায় সব সময় নানা ফন্দি খেলে। একদিন বুদ্ধি বের করলো, কোচিং সেন্টার খোলার। নাম দিলো, IIT (Institute of Information Technology) । এরকম অনেক প্রতিষ্ঠান ঠিকই আছে, তাই প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে চমক লাগবে।
সে পত্রিকায় বিশাল করে বিজ্ঞাপন দিলো, "ফ্রি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখুন, শুধু প্রথম অল্প কিছু লোককে এই সুবিধা দিবে"। শুধু একটাই ব্যাপার, যেটা বিজ্ঞাপনে ছিলোনা, তা হলো কোর্সটা ফ্রি, কিন্তু ভর্তি ফরমের দাম ৩০০ টাকা।
ফ্রি পেলে বাঙালিরা ছুটে আসে বহু দূর থেকে, তাই অল্প ক'দিনেই ৫০০ ফরম বিক্রি হয়ে গেলো। (হিসাব করে দেখুন!!)। এর পর কয়েকটা কম্পিউটার ভাড়া করে, আর বুয়েটের কিছু ছেলেপেলেকে অল্প কিছু টাকা লেকচার ফি দিয়ে ৫০০ লোককে সি "শিখানো" হলো, এবং ঘটা করে সার্টিফিকেট ধরানো হলো।
এই ধান্ধা সফল হওয়াতে তার মনে বেশ আনন্দ, তাই পরে বড় মাছ শিকারের জন্য কাজ শুরু হলো। কয়েকদিন পরেই শুনলাম, ওর প্রতিষ্ঠানটি এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিবন্ধিত, এবং সেখান থেকে কম্পিউটার সাইন্সে বিএসসি ডিগ্রিও দেয়া হচ্ছে (ওটা অবশ্য ফ্রি না!)। মজার ব্যাপার হলো, এই ছেলে তখনো বুয়েটের ৩য় বর্ষে পড়ে!!!
অনুমতি পেলো কিভাবে, জানতে চেয়েছিলাম। বললো, লাখ কয়েক টাকা খরচ হয়েছে। আরো কিছু টাকা পেলে সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে বসাটাও বিচিত্র কিছু ছিলোনা।
এরকম সব কাগজ-বেচার প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ ভরে গেছে। উত্তর দক্ষিণ, পূর্ব পশ্চিম, কোনো দিকই আর বাদ রাখেনি নামকরণে।
যাহোক, শিক্ষার নামে ব্যবসা নিয়ে আরো অনেক অভিজ্ঞতা আছে, এই থ্রেডের আগামী পর্বগুলোতে তা নিয়ে লিখবো।
[চলবে]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।