আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সৌদি আরব



আজ থেকে আট বছরের আগের কথা। আমরা স্বপরিবারে সৌদি আরবে বসবাস করতাম। আব্বা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। আমরা যে শহরে বাস করতাম তার নাম ছিল দোবাহ। এটি একটি ছোট্ শহর।

এটি সৌদি আরবে মানচিত্রে উত্তর পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। সৌদি আরবে উত্তর সীমান্তে ইরাক, জর্দান, কুয়েত দক্ষিন প্রান্তে দুই ইয়ামেন ও ওমান, পূর্ব দিকে ইমারাত, বাহরাইন, কাতার, আরব সাগর এবং পশ্চিম প্রান্ত লোহিত সাগর অবস্থিত। সৌদি আরবে আয়াতন প্রায় বিশ ল্য বর্গমাইল এবং লোক সংখ্যা প্রায় দুই কোটি (1997)। সে দেশে শতকরা 99% লোক ইসলাম ধর্মলম্বী। সে দেশের সাংস্কৃতি পোষাক হচ্ছে লম্বা পাঞ্জাবী, মাথায় টুপি ও উপরে রোমাল (সাদা কিংবা লাল রংয়ের)।

ফিরে যাই সেই ছোট্ শহরের কথা... ... ... দুবা শহরটা ছোট্ হলেও আমার কাছে মনে হয়েছে এটা ঢাকার প্রায় দ্বিগুন। এই শহরের সৌন্দার্য তাজ্জব বনের মতো। সৌদি আরবে প্রতিটা শহর খুবই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এবং আলোক ঝমকালো। রাস্তাগুলো খুবই প্রসস্ত। এই শহরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছে লোহিত সাগর।

প্রতি শ্রুক্রবারে আমরা স্বপরিবারে সাগরের পাশে চলে যেতাম মনোমগ্ধকর দৃশ্য অবলোকলন করার জন্য। বাসা থেকে বের হওয়ার পূর্বে আম্মা বিভিন্ন আইটেমের খাবার রাধিয়ে নিতেন। কোন দিন ছোলা, কোন দিন নডুস্, আবার কোন দিন গরম গরম পেয়াজু। আর চা তো ছিলোই। সাগরের পাশে আমরা চাটি বিসিয়ে বসে পড়তাম।

সাগরের বাতাস মাঝে মধ্যে উত্তাল ডেউ, শিতিল ঢেউ, মাছের লাফালাফি, অক্টোপাশের দৃশ্য, পাখির কিচিরমিচি, বিভিন্ন বাহারের শামুকের দৃশ্য, বিভিন্ন রং বেরংয়ের পাথর আর কত কি দৃশ্য অবলোকন করতাম। আমার বার বৎসরে থাকার অবস্থায় আমি মাত্র দুবার সাগরে গোসল করেছিলাম। অবশ্য তার কারনও ছিল। কারন সাগরটা ছিল পাথরে ভরপুর। যেমন আমাদের দেশে কক্সবাজারের সৈকতে শুধূ মাটির কনা অবস্থিত ঠিক তেমনি সেখানে শুধু পাথর আর পাথর।

আর সাগরের গভীরতাও ছিল প্রচুর। এজন্য পানিতে নামার সময় সাবধানে পা বাড়াতাম কারন কখন পাথরের ধারল আগাতে ফিনকি বের হয়। আমি খুব কমই দেখেছে সৌদি পারিবারের সমুদ্র পাশে ভ্রমন করতে। সৌদি লোকেরা প্রাকৃতির প্রতি মুগ্ধ হওয়ার প্রতি খুবই উদাসীন। এজন্য তাদেরকে বিভিন্ন দেশে ভ্রমন করতে খুবই কম দেখা যায়।

তাদের সম্পদের অভাব নেই, কিন্তু আমরিকা, কানাডার মতো তারা টু্যর করতে অভ্যস্ত নয়। তাদের ভ্রমনটা ছিল ঠিক এরকমন যে এক শহর থেকে আরেক শহরে ভ্রমন করা। অথবা স্বপরিবারে একত্রে কোথাও সাগরের সৈকতে বা মরুভূমিতে কয়েকদিন কাটিয়ে আসা যেটাকে আমরা পিকনিক বলি। মনে পরে যায় একটি ঘটনা। তখন কড়া রৌদ পড়ছিল।

প্রচন্ড গরম। আর সেদেশে গরম পড়লে বোঝার উপায় নেই গরম কি শীত। কারন সেখানে সব জায়গা এয়ারকন্ডিশন ব্যবহুত হয়। দোকানে, অফিসে, হসপিটালে, মসজিদে, সেলুনে, বাসায় এমনকি এমন গাড়ি পাবেননা যে যে গাড়টি এসি ছাড়া ব্যবহুত হয়। বাসা থেকে বের হয়েছিলাম একটি কাজের উদ্দেশ্য।

পথিমধ্যে একটি গাড়ি এসে থামল। গাড়িতে একজন যুবক বসা। আমাকে একটা ঠিকানার কথা জিজ্ঞাসা করলো। বল্লাম এই ঠিকানা এখান থেকে অনেক দূরে। আরেকটি কথা বলা নেই সেটি হলো, যদিও আমি বাঙালি, তবুও সেখানে কালচারের সাথে পুরো মিছে গিয়েছিলাম।

লম্বা পাঞ্জাবী পড়তাম আর আরবী ভাষা তো আমার আয়াত্বে ছিল। এজন্য অনেকেই ধরে নিতে আমি বুঝি মিশ্র সৌদি হিন্দী লোক। হিন্দী লোক এই কারনে অনেকেই বাংলাদেশ বল্লে চিন্তনা। তারা বাংলাদেশকে হিন্দী হিসাবে চিনে। আর ভারতকে তারা হিন্দি বলে।

আমাকে মিনতি করলো গাড়িতে উঠার জন্য। ভাবলাম ভালই হলো অপিরিচিত লোকের সাথে ভেড়ানো যাবে আবার মনে মনে ভাবছিলাম না জানি কোন ফান্দে পড়ি। যাই হোক গাড়ীতে উঠে বসে পড়লাম। সে শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে লাগল। শেষে সে একটা বাগানের সামনে গাড়ী থামল।

আমরা সেখানে কিছুক্ষন বসে আড্ডা দিয়ে আবার গাড়ীর দিকে ফিরে আসলাম। আমাকে অনুরোধ করলো গাড়ী চালানো। বল্লাম গাড়ী চালাতে জানিনা। কিন্তু সে জিদ ধরলো গাড়ী চালানো। শেষ পর্যন্ত তাকেই চালাতে হলো।

আমি মাঝে মধ্যে ভাবছিলাম এই ছেলাটা শহরে নতুন এসেছে, আমি তাকে আগে কখনোও দেখিনি। হঠাৎ করে সে আমার সাথে ঘনিষ্ঠতা হয়ে গেলো তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তোমার আব্বা আম্বা কোথায় থাকে। বল্লো এই শহরের থেকে অনেক দূরে। ভাবছিলাম তাদের জীবনটাই নাকি কিরকম। কোন অভাব নেই, পড়াশুনা না করলেও সে দেশের সরকারের সহযোগীতায় ভাল চাকরির পায়, ভবিষৎে বলতে কোন আশাও নেই ।

এই আছি এই যাচ্ছি ঠিক এরকম অবস্থা। যাই হোক শেষ পর্যন্থ সে আমাকে বাড়ীর সামনেই নেমে দিল এটাই জীবনে তার সাথে প্রথম ও শেষ দেখা। ঐ দেশের লোকেরা মরুভুমিতে বেরাতে পছন্দ করে। মরুভূমিতে তারা টাবু টাঙ্গিয়ে কয়েকদিন অতিবাহিত করে। আরব দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহ্য সব কিছু দেখার আমার সৌভাগ্য হয়েছে।

পিতৃ্যমালে রেখে যাওয়া ঐতিহ্য তারা এখনও লালন করে আছে। এদের এমন একটা ঐতিহ্য হচ্ছে মেহমানদারী। তারা মেহমানদারীর অভ্যর্থনা জানায় ছোট একটা গাহওয়া দ্বারা। গাহওয়াটা হচ্ছে ঠিক আমাদের দেশের মিশ্র চা-কফির মতো। তবে এটা কফির দ্বারা তৈরি নয় এটা খেজুরের তৈরী এবং ছোট্ একটা কাপে, এই কাপের বৈশিষ্ঠ্য হচ্ছে পিরিজ না থাকা, এবং হ্যান্ডেল বিহীন।

এই কাপটা এতই ছোট্ থাকে যে গাহওয়াটা দুই তিন চুমুকেই এটা নি:শেষ হয়ে যায়। আমার মনে আছে ইরাক-কুয়েত যুদ্বের সময় তৎকালীন আমরিকার প্রেসিডেন্ট বুশ যখন সৌদি আরবে সফর করেন তখন বিমান থেকে নেমেই ইয়ারপোর্টে প্রবেশ মুহুর্তে তাকে এই গাহওয়াটাই পান করাতে হয়েছে। তাদের আরেকটা ঐতিহ্য হচ্ছে একত্রে দলভদ্বভাবে নাচা। এটা অবশ্য ভদ্রসূলবভাবে হয়ে থাকে। তাদের এক হাতে একটা নগ্ন তলোয়ার, আরেক হাত থাকে পাশে আরেক ভাইয়ের হাত ধরে নাচতে থাকে এবং গাইতে থাকে।

তারা সবাই একত্রে এক পা উঠিয়ে আরেক পা নামিয়ে এবং আরেক পা উঠিয়ে অন্য পা নামিয়ে তলোওয়ারটা হাল্কা নাচিয়ে গাইতে থাকে। জানিনা তাদের সেই নগ্ন তলোওয়ারটা ধারালো কি না তবে এই তলোয়ারের নাচানো বৈশিষ্ঠ্য হচ্ছে তাদের এই দেশ স্বাধীন করতে অনেক সংগ্রাম ও রক্ত ঝরাতে হয়েছে। তাদের নাচা, তাদের গাওয়া, তাদের ভঙ্গি সবকিছুর মধ্যে একটা শৈল্পিক সৌদার্য রয়েছে। আশেপাশে দশর্করা উৎফুল্ল ্লভাবে তাকিয়ে থাকে। ঐ দেশের রাজা বাদ্শারা পর্যন্ত এই ঐতিহ্য নাচে অংশগ্রহন করতে কাপূন্য বোধ করেনা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।