জীবন টা একটা বইয়ের পাতার মত যত উল্টাবে ততই জানবে !!!
যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানে হামলা চালাতে বলেছিল সৌদি!
উইকিলিকস ঝড়ে কাবু আমেরিকা, আড়াই লাখ 'অতি গোপন' নথি ফাঁস
০০ ইত্তেফাক ডেস্ক
ইরান ও আরব দেশসমূহ পরস্পর ভাই ভাই -ইরানি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদ গতকাল সোমবারও এই বলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন । কিন্তু বাস্তবতা বলছে অন্য কথা। ইরানে বিমান হামলা চালাতে সৌদি আরব বার বার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিয়েছিল। এমনকি সৌদি আরব ইরানকে সাপের সঙ্গেও তুলনা করে তার মাথা কেটে ফেলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। ইরানি পারমানবিক স্থাপনাসমূহকেও হামলার টার্গেট করতে বলেছিলেন সৌদি বাদশা আব্দুলস্নাহ।
আর এই ইসু্যতে সৌদি বাদশাহ পাশে পেয়েছিলেন বাহরাইন এবং আরব আমীরাতকে।
বিস্ময়কর এসব তথ্য প্রকাশ করে বিশ্বজুড়ে এটম বোমার আওয়াজ তুলেছে ওয়েবনির্ভর সংবাদভিত্তিক সংস্থা উইকিলিকস। নামের সাথে মিল রেখে গোপন তথ্য লিক (ফাঁস) করাই এই সংস্থার মূল বৈশিষ্ট্য। এর আগে ইরাক ও আফগানিস্তান সম্পর্কিত যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক লাখ নথি ফাঁস করে তোলপাড় ফেলা উইকিলিকস রবিবার নতুন করে আড়াই লাখ 'গোপন' ও 'অতি গোপন' নথি ফাঁস করেছে। এসব নথির বেশিরভাগ হয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিদেশী দূতাবাসের উদ্দেশ্যে প্রেরিত নয়তো বিদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে প্রেরিত।
ভারত থেকে পাঠানো সাড়ে তিন হাজারের বেশি নথিও ফাঁস করা হয়েছে।
এসব তথ্য ফাঁস হওয়ায় চরম কুটনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ভারতে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কুটনৈতিক সম্পর্কও হুমকির মুখে পড়েছে। কারণ মার্কিন কুটনীতিকদের হিলারি বলেছিলেন, ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী আসন পাবার যোগ্য কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। অপরদিকে, লজ্জায় লাল হয়েছেন মার্কিন প্রখ্যাত কয়েকজন কুটনীতিক, কারণ বিদেশী কয়েকজন রাষ্ট্রনায়ক সম্পর্কে তাদের অবমাননাকর ও হাস্যকর কিছু বিশেষণও উইকিলিকস ফাঁস করে দিয়েছে।
ইরানে হামলা চালান ঃ সন্দেহজনক ইরানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করতে দেশটির ওপর হামলা চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বেশ কয়েকজন আরব নেতার আহ্বানের কথা বলা হয়েছে মার্কিন কর্মকর্তাদের বার্তায়। ওয়াশিংটনে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আদেল আল-জুবায়ের বাদশাহ'র প্রতিনিধি হিসেবে ইরানের ওপর হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বার বার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে মার্কিন জেনারেল ডেভিড পেত্রাউসের সঙ্গে ওয়াশিংটনে এক বৈঠকে সৌদি রাষ্ট্রদূত ইরানকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র সাপের মাথা কেটে ফেলুক এটাই আমাদের বাদশাহ চান। উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া তথ্য থেকে আরো দেখা যায়, ইরানের ওপর কঠোর অবরোধ আরোপ এবং ব্যাংক লেনদেন সীমিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আহ্বান জানিয়েছিল সৌদি আরব। অন্যদিকে, যে কোনো উপায়ে ইরানকে থামানোর জন্য বাহরাইনের বাদশা হামাদ বিন ইসা আল-খলিফা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আর আবুধাবীর যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ যুক্তরাষ্ট্রকে বলেন, তিনি মনে করেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ আমাদের যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।
ইরানের প্রতিক্রিয়া ঃ সৌদি আরব হামলা চালাতে বলেছিল এমন কথা বিশ্বাস করতে চাইছে না ইরান! ইরানি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদ গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে উইকিলিকসের তথ্য ফাঁসের এই ঘটনাকে মার্কিন শয়তানি ও ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, উইকিলিকসের তথ্য এতই তুচ্ছ যে তা নিয়ে ঘাটাঘাটি করা সময়ের অপচয় ছাড়া কিছু নয়। সৌদি আরব ও ইরান পরস্পরের ঘনিষ্ট বন্ধু এমন মন্তব্য করে আহমেদিনেজাদ বলেন, এসব গাঁজাখুরি গল্প আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক নষ্ট করতে পারবে না। তার মতে, সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের উসকানি দিতে যুক্তরাষ্ট্র এই ষড়যন্ত্র করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের চোখে বিশ্ব নেতারা ঃ বিশ্বের বিভিন্ন নেতা সম্পর্কে মার্কিন কূটনীতিকদের মনোভাব নানা হাস্যকর বিশেষণের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে উইকিলিকসের নথিতে। যেমন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি 'কাপড়বিহীন সম্রাট'। রোমে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের এক কূটনীতিকের মতে, ইতালির প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনি আধুনিক ইউরোপের একজন নেতা হিসেবে দায়িত্বহীন, ব্যর্থ ও অকার্যকর। ২০০৮ সালে মস্কোর রাষ্ট্রদূত এক বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের কাজ সম্পর্কে বলেন, রবিন থেকে (প্রধানমন্ত্রী ভস্নাদিমির পুটিন) ব্যাটম্যান। উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং ইলকে মার্কিন কূটনীতিকরা মনে করেন স্নায়ুরোগে ভোগা 'দুর্বল বুড়ো'।
এছাড়া ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ 'এডলফ হিটলার'। অপরদিকে, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি অত্যন্ত দুর্বল একজন মানুষ যিনি সত্য কথায় কান না দিয়ে লোকের কথায় সহজেই প্রভাবিত হন।
যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য ঃ এসব বার্তা প্রকাশের পর বিবৃতি দিয়েছে হোয়াইট হাউস। এতে বলা হয়েছে, এ ধরনের নথি প্রকাশ আমাদের কূটনীতিক, গোয়েন্দা পেশাজীবী এবং গণতন্ত্র ও খোলামেলা সরকার বিষয়ে প্রচার চালাতে আমেরিকায় আসে এমন ব্যক্তিদের ঝুঁকিতে ফেলে দেয়ে। প্রেসিডেন্ট ওবামা সারা বিশ্বে দায়িত্বশীল, জবাবদিহিমূলক এবং খোলামেলা চরিত্রের সরকার সমর্থন করেন।
কিন্তু এ ধরনের কাজ তার ওই লক্ষ্যের বিপরীত। *** ইত্তেফাক ডেস্ক**
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।