বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনা, প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার সংগ্রহমালা
সত্যি চমকে উঠার মতো খবর!!! কেমন হবে যদি বাংলাদেশে সচিবালয় ও প্রশাসনিক কাঠামোকে পুরোপুরি ব্যক্তিগত খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়? তারা কি খুব দক্ষ ও যোগ্য হবে? নানা মুনির নানা মত। দেশ বিদেশ ঘুরে আমার মনে হয়েছে আমাদের মতো মাথাভারী ও শ্রমঘন প্রশাসনিক ব্যবস্থা পৃথিবীতে আর কোথাও বোধ হয় নেই। একজন কর্মকর্তার চারজন চাপরাশী লাগে। এখনও বসের মৌখিক নোট নিয়ে তারপর টাইপিং করতে ব্যস্ত থাকেন অফিস সহকারীরা।
বছরের পর বছর বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সরকারী চাকরিতে ঢুকছে আপাতদৃশ্যত সবচেয়ে যোগ্য গ্র্যাজুয়েটরা।
তারপরেও বাংলাদেশের প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের গুণগত মান দিনের পর দিন শুধু নীচের দিকে নামছে। নৈতিকতার কথা বা জবাবদিহির কথা বাদই দিলাম। আমি ঢালাওভাবে বলব না, সবার অবস্থাই হযবরল। কিন্ত আপাতত ট্রেন্ডটা খুবই বিপজ্জনক। বিশেষত: মাঠ পর্যায়ে যেসব কর্মকর্তা আছেন তাদের অবস্থা খুবই খারাপ।
অবশ্য যারা স্রোতের সাথে মিলেমিশে থাকেন তাদের কথা একেবারেই আলাদা।
অনেকদিন আগের কথা। আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশের বাইরে পশ্চিমে কোথাও একটা শর্ট কোর্স করতে গেছে। চাকরিতে প্রমোশন পেয়ে বন্ধু উপসচিব পদমর্যাদায় উঠেছেন। বিভিন্ন আড্ডাতে তার সাথে যোগাযোগ নিয়মিত।
বিদেশ যাওয়ার পর একদিন তার ই-মেইল। বিষয়: মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে কিভাবে ডকুমেন্ট সেইভ করতে হয়। আমার চক্ষু চড়ক গাছে। বন্ধু, "বলো কি"? বন্ধুর উওর: "দোস্ত, স্টেনোকে সাথে করে তো কোর্সে আনতে পারিনি। তাই সামাল দিতে একটু হিমসিম খেতে হচ্ছে"।
বাংলাদেশে উপসচিব পর্যায়ে কম্পিউটার লিটারেসী কতোটুকু তা নিয়ে প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ দেওয়ার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু যদি প্রযুক্তিগতভাবে সচেতন, চৌকস ও দক্ষ জনশক্তি যদি প্রশাসনিক কাঠামোর মেরুদন্ড না হয় তখন তো রাজনৈতিক লেজুরবৃওির যোগ্যতা একমাএ মানদন্ড বলে গণ্য হবেই।
একসময় আমলাদের চক্ষুশুল ছিল সিএসপি'রা। সিএসপিদের বিরুদ্ধে যতোই বিষোদগার আমরা করি না কেন, তাদের যোগ্যতা নিয়ে হয়তো অভিযোগ তেমন একটা টিকবে না। ভয় নেই, তারাও এখন বিদায় নিয়েছেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন ও মেধাভিওিক নির্বাচনে নিযুক্ত কর্মকর্তারাই এখন দেশ চালাচ্ছেন। তাদের গুণগত মান আমাদেরকে আতঙ্কিত করে। কথা বলতে গেলে যে কি ভাঙ্গাচুরা অবস্থা, ভাষার যে শ্রী, তাতে মনে হয় ধরণী দ্বিধা হও। আমার মনে হয়, বাংলাদেশে লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ একাডেমীতে এখন ভাষা কোর্স ও উচ্চারণ কোর্সও চালু করা দরকার। মাঝে মাঝে যেসব অফিসিয়াল সার্কুলার চোখে পড়ে তার প্রণেতাদেরকে ভাষা বিশারদ মনে হয়।
না, ভয় নেই। ভাষা দিবস আসছে আগামী মাসে। ভাষার জন্য আবার আমাদের দরদ উথলে পড়বে। কিন্তু যারা আমাদের প্রশাসক তাদের ভাষা শুনলে বোধহয় ভাষা সৈনিকরা কবর থেকে আর্তনাদ করে বলে উঠেন উদর্ু রাস্ট্রভাষা হলে বোধহয় এই যন্ত্রণা আমাদের ভোগ করতে হতো না। কারণ, আমরা বুঝতাম না আমলারা কি মারাত্মক ভুল ক্রটিতে কথা বলছেন!!!
সরকারী কর্মকর্তাদের যোগ্যতা ভাষাগত শুদ্ধতা বা স্মার্টনেস দিয়ে প্রমানিত হয় এধরণের অসম্পূর্ণ হাইপোথিসিস নিয়ে আমি কাজ করছি না।
তবে, এই প্রান্তিক সমস্যার মূলে রয়েছে আমাদের শিক্ষার ক্রমাবনত মান সেসম্পর্কে আলাদা করে গবেষণার দরকার নেই। তাই আজ থেকে প্রায় আট বছর আগে যখন রেহমান সোবহান বলেছিলেন, "যদি অদক্ষতা আর লোকসানের কারণে সরকারী প্রতিষ্ঠান বিক্রি করতে হয় তবে সবার আগে বেসরকারী খাতে ছাড়তে হবে বাংলাদেশ সচিবালয়কে" (সংবাদ, 15ই জানুয়ারী, 1999)। অধ্যাপক সোবহানের ভাষায় এধরণের অদক্ষ জনশক্তির পেছনে ব্যয়কৃত অর্থের পুরোটাই লোকসান।
সচিবালয় বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেওয়া হোক এই প্রস্তাব একেবারেই অযৌক্তিক। কিন্তু প্রশাসনিক দক্ষতা ও যোগ্যতা নিরুপনে ও মূল্যায়নে নিয়োগ ব্যবস্থার মধ্যে আমূল পরিবর্তন আনা দরকার।
কর্ম কমিশনকেও ঢালাও ভাবে সাজানোর দরকার। আমরা শুধু কর্মকর্তা চাই না, চাই যোগ্য কর্মকর্তা যারা আমাদের দেশকে নতুন মিলেনিয়ামে এগিয়ে নিবেন। দরকার জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার। প্রতিটি প্রশাসনে উচ্চতর পর্যায়ে কর্মকর্তাদের মূল্যায়নে তৃণমূল পর্যায়ে ভোক্তা ও জনগণের ভূমিকা থাকা দরকার। প্রফেশনালিজম একদিনে আসে না।
কিন্তু সে জন্য রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কমিটমেন্টেরও দরকার। না হলে আবারও স্মরণ করতে হয়, দুস্ট গরুর চেয়ে শূণ্য গোয়ালই হয়তো ভাল...।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।