রাজনীতি ও অর্থনীতি এই দুই সাপ পরস্পর পরস্পরকে লেজের দিক থেকে অনবরত খেয়ে যাচ্ছে
সচিবালয় থেকে ফিরলাম। নতুন মন্ত্রীরা প্রথম অফিস করবেন। দায়িত্ব নিয়ে কে কি বলেন সেটা জানতে সচিবালয় যাই। অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত বা অর্থমন্ত্রণালয় আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
সচিবালয়ে মোটামুটি নিয়মিত যাওয়া হয়।
গত দুই বছরে সচিবালয়ে সে অর্থে তেমন প্রাণ ছিল না। কিন্তু যেয়ে দেখলাম প্রাণ ফিরে পেয়ে সচিবালয়ের হাসফাঁস অবস্থা। বলা যায় সচিবালয়ের প্রাণ যায় যায়।
ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট এ তরীর মতো অবস্থা দেখলাম সচিবালয়ের। লোকে লোকারণ্য।
প্রতিটা ভবনের সামনে মন্ত্রীরা যে গেট দিয়ে ঢোকেন সেখানে ছোট খাট জনসভা। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তো আছেন। কিছু মনে হলো বহিরাগত, সম্ভবত দলের লোক। আর আছে এক ঝাঁক সাংবাদিক। আরও আছে-ফুল আর ফুল।
গাড়ি রাখার জায়গা পর্যন্ত নেই। পার্ক করতে পুরো সচিবালয় চক্কর দিয়ে তবেই কোনায় ছোট্ট একটা জায়গা পাওয়া গেলো। ভবনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম অনেকগুলো ব্যানার। সবগুলোই হচ্ছে শেখ হাসিনার মন্ত্রীসভাকে শুভেচ্ছা জানানোর ব্যানার। অর্থাৎ প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে।
আর প্রতিযোগিতা চলছে ফুল দেওয়ার। কেবল হাতেই ফুল দিচ্ছে, তা নয়। দেখলাম এবার মাথায় চলছে পুষ্পবৃষ্টি। নতুন নতুন জামাই ভাব আরকি। তদ্বিরবাজ একাধিক মহিলাকে দেখলাম ফুল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছেন।
যুগান্তরের শাহনেওয়াজ ভাই ফুল হাতে দাঁড়িয়ে একজনকে দেখিয়ে বললো সে আগে বিএনপি করতো। এখন পাল্টে ফেলেছে। উপায় কী, দিন বদলের পালা যে!
সচিবালয়ের আরেক উৎপাত এখন সাংবাদিক। যত মানুষ তার অর্ধেকই সাংবাদিক। আব্দার হচ্ছে দায়িত্ব নিতে নিজের রুমে ঢোকার সাথে সাথেই কথা বলতে হবে।
আমরা যারা প্রিন্ট মিডিয়ার তারা বলি ডান্ডাওয়ালা, অর্থাৎ টিভি সাংবাদিক, তাদের আব্দারটাই বেশি। আর উপদেষ্টা বা মন্ত্রীরাও যে এসব উপভোগ করতেন সেটাও তো মিথ্যা না। আজও দেখলাম সবাইকেই কথা বলানো হলো। সাংবাদিকদের মধ্যে মহাউৎপাত হচ্ছে ফটো সাংবাদিকরা। সামনে গিয়ে ছবি তুলতে হবে আর আমাদের চট্টগ্রামবাসীর মতো দেখতে হবে তাদের পশ্চাৎদেশ।
কিছুতেই সরানো যায় না তাদের। মন্ত্রী বা উপদেষ্টার সামনে ফটো সাংবাদিকদের ঝগড়াও খুব বিরল দৃশ্য না। এ এম এ মুহিতকে রুমে বসার ২ মিনিটের মধ্যে আসতে হলো কনফারেন্স রুমে।
সাড়ে ১২টার দিকে নীচে নেমে দেখি তখনো এক ঝাঁক মানুষ নতুন বাণিজ্য মন্ত্রীর অপোয়, তিনি তখনো আসেননি। দুঘন্টা ধরে সবাই শুনছেন যে আধা ঘন্টার মধ্যে আসবেন।
পররাষ্ট্র, শিল্প, পরিকল্পনা ও পূর্ত সচিবালয়ের বাইরে। সবার আগে এসেছিলেন মনে হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দিপু মনি। সবার আগ্রহ দেখলাম তিনি কি বলেছেন সেটা জানতে। সাহারা খাতুন কিছু বলেছেন কিনা জানা গেল না তখন পর্যন্ত। অর্থমন্ত্রী শেষ, তো আমিও আবার অফিস ফিরে আসলাম।
সচিবালয়ে যা দেখলাম তাতে বুঝলাম খবর আছে। আবার শুরু হয়েছে সেই আগের অবস্থা। তদ্বির আর দলের লোকদের ভিড়। এই প্রবণতা বন্ধ না হলে খবর আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।