আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুদ্ধশিশু '৭১ : দ্য চেঞ্জিং ফেজ অব জেনোসাইড ৫

অতীত খুড়ি, খুঁজে ফিরি স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটি

প্রথম কয়েকদিনের অভিজ্ঞতায় আমি অবাক হয়ে দেখলাম যেমন আশা করেছিলাম সে হারে মেয়েরা আসছে না। সাধারণ ব্যাখ্যাটা ছিল তেমন একটা প্রচারণা হয়নি আর ব্যাপারটা দারুণ অনিশ্চয়তায় ভরা। কিন্তু বোর্ড বিশ্বাস করত যে প্রচারণ যথেষ্টই হয়েছে এবং যাদের প্রয়োজন তাদের কাছে বার্তাটা ঠিকই পৌছেছে। মেয়েরা কম আসার কারণ মুসলিম পরিবারগুলোর রক্ষণশীলতা। কুমারী মা সমাজে ভীষণ এক অপমান।

যৌন নির্যাতনের শিকার যে কোনো মেয়েই ছিল পরিবারের কাছে এক লজ্জাকর বোঝা। পরিবারে এদের কারো অস্তিত্ব স্বীকার করাটা সমাজের কাছে একঘরে হয়ে পড়ার ঝুঁকি যা কেউ নিতে চাইছিল না। এমনিতেই মেয়েরা বিশেষ করে মফঃস্বল বা গ্রামগুলোতে পরিবারের ওপর একটা চাপ (সম্ভবত ডেভিস যৌতুক দিয়ে বিয়ে দিতে হয় বুঝিয়েছেন), আর ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হলে তাকে বিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে না। (পরে মাদার তেরেসার এক সাক্ষাৎকারে পড়েছি সে সময় অনেক মুক্তিযোদ্ধাই অনেক বীরাঙ্গনাকে বিয়ে করেছেন-অঃরঃপিঃ)। এও ধারণা করা হয়েছিল প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সেভাবে হয়তো খবর পৌছেনি, তবে খবরটা গেলেই মেয়েদের সংখ্যা বাড়বে।

বোর্ডের মধ্যে এমন সিদ্ধান্তও নেওয়া হলো জেলা সদরগুলোর প্রতিটিতেই একটি করে বিশেষ ক্লিনিক খোলার। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা ক্লিনিকে ৮৪টি কেস সামাল দেওয়া হলো। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংখ্যাটা দাঁড়াল ১৩০। কোথাও একটা গলদ ছিল, নইলে ধারণার সঙ্গে বাস্তবের এই অমিল হবে কেন! আমরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিলাম, বুঝতে পারছিলাম না আসলে কী হবে। আমি বগুড়া, রংপুর ও দিনাজপুর রওয়ানা দিলাম যন্ত্রপাতির দুটো পূর্ণাঙ্গ সেট নিয়ে, সঙ্গে দুশো টিওপি সারার জন্য যথেষ্ট পরিমান ওষুধ।

রংপুরে গিয়ে জানলাম স্থানীয় সদর হাসপাতালে মেয়েদের ভর্তি করা হয়েছে এবং স্থানীয় গায়েনিকোলোজিস্ট তার সীমিত সামর্থ্য নিয়েও দারুণ কাজ করেছেন। তার ছিল না স্যালাইন, প্লাজমা, পিট্রোসিন সত্যি বলতে কোনো ধরণের অক্সিটোসিক এমনকি কোনো এন্টিবায়োটিকও! দিনাজপুরে গিয়ে প্রথম ধাক্কাটা খেলাম। সেখানকার সিভিল সার্জন মন্তব্য করে বসলেন টিওপি ব্যাপারটার বৈধতা নিয়ে তার যথেষ্টই সন্দেহ আছে এবং সরকারী এমন কোনো নির্দেশনা তিনি পাননি যাতে এটার অনুমতি দিতে পারেন। তার কথা সরকারী মহলে ব্যাপারটা নিয়ে যে আলাপ হয়েছে তাতে জেলাসদরগুলোয় গর্ভবতীদের খুঁজে বের করে সবাইকে গর্ভপাত করাতে রাজী করানোর কথা বলা হয়েছে, কিন্তু চিকিৎসকরা কেউ এতে সায় দেননি। চিফ মেডিকেল অফিসার এও জানালেন একজন ফিরিঙ্গি হিসেবে (উনি ফেরাং শব্দটা ব্যবহার করেছেন) যেখানেই যাই আমাকে এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলবে না, কারণ বাংলাদেশের সামাজিক আচারে বিদেশী অতিথিদের লজ্জা দেওয়ার রীতি নেই।

তারা এও জানালো বিএমএর স্থানীয় শাখার প্রেসিডেন্ট (একজন খাটি মুসলিম) তাদেরকে গত ডিসেম্বরে মরক্কোয় অনুষ্ঠিত মুসলিম আইপিপিএফ কনফারেন্সের মতামতের উদাহরণ দিয়েছেন যাতে পরিবার পরিকল্পনার খানিকটা অংশ যৌক্তিক মানা হলেও গর্ভপাতকে বলা হয়েছে নিষিদ্ধ। যেহেতু প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তারা এর ব্যত্যয় ঘটাতে পারেন না। পরদিন সকালে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। এমনিতে ভদ্রতা ও সৌজন্যবোধের কমতি না দেখালেও তার মতবাদ থেকে নড়লেন না। এও জানিয়ে দিলেন তার এলাকায় তিনিই হর্তাকর্তা, যা বলবেন সেটাই হবে।

(চলবে) পাদটীকা : আমি শুরু থেকেই দ্বিধায় ছিলাম বীরাঙ্গনাদের ছবি ব্যবহার করা নিয়ে। পুরনো ছবিই আবার দিচ্ছিলাম, স্রেফ গত পোস্টে নিয়ম ভাঙ্গলাম। মনে হচ্ছিল ছবি ছাড়া পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না ব্যাপারটা। এবার দিলাম নিউইয়র্ক টাইমসের একটি ছবি। এটি ঢাকার সেই ক্লিনিকে গর্ভপাত ঘটাতে আসা তিন নারীর।

আমাদের সম্ভ্রমহারা তিন মায়ের ছবি। পাদটীকা : আমি শুরব্জ্ন ব্জ থব্জ্বকই দ্বিধায় ছিলাম বীরাঙ্গনাব্জ্বদর ছবি ব্যবহার করা নিব্জ্বয়। পুরব্জ্বনা ছবিই আবার দিব্জি ছলাম, ব্জ স্রফ গত ব্জ পাব্জ্বস্ট নিয়ম ভাঙ্গলাম। মব্জ্বন হব্জি ছল ছবি ছাড়া পূর্ণাঙ্গ হব্জ্বব্জ ছ না ব্যাপারটা। এবার দিলাম নিউইয়র্ক টাইমব্জ্বসর একটি ছবি।

এটি ঢাকার ব্জ সই কিনিব্জ্বক গর্ভপাত ঘটাব্জ্বত আসা তিন নারীর। আমাব্জ্বদর সম্ভ্রমহারা তিন মাব্জ্বয়র ছবি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.