আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুদ্ধশিশু '৭১ : দ্য চেঞ্জিং ফেস অব জেনোসাইড ৩

অতীত খুড়ি, খুঁজে ফিরি স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটি

স্থানীয়ভাবে যে পদ্ধতিতে গর্ভপাত ঘটানো হতো সেটা অবৈজ্ঞানিক হলেও যথেষ্ট কার্যকর বলেই বিবেচিত হয়েছিল। বেশীরভাগ গ্রামেই দেখা গেছে ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি লম্বা ও পৌনে ইঞ্চি চওড়া একটা চোখা কাঠি ব্যবহার করা হতো। এটা যোনীপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হতো যতক্ষণ না তা জরায়ুর দেওয়াল ছোঁয়। বেশীরভাগ এলাকাতেই কাঠির ধরণটাকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হতো না, একটা হলেই হলো। বিবাহিতারা ব্যাপারটা নিজেই করত আর অবিবাহিতদের নিয়ে যাওয়া হতো স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের কাছে (এসব জায়গায় বিয়ের আগে গর্ভবতী হওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে, তবে কী হারে সেটা জানা যায়নি)।

কাঠিটা জায়গামতো রেখে খোঁচানো হতো যতক্ষণ না ব্যাথা উঠে জরায়ুর পেশী এটাকে ঠেলে বের করে দেয়, সুবাদেই গর্ভপাত। জানা গেছে এটি শতভাগ কার্যকর বলে স্বীকৃত পদ্ধতি, তবে একটু ধীরগতি। ব্যাপারটা ত্বরান্বিত করতে অন্য অনেক পদ্ধতি যুক্ত হতো। স্থানীয় করবী নামের একটি গাছের মুলের রস খেয়ে বা মুলটা সরাসরি প্রবেশ করিয়ে (কবিরাজ ও আয়ুর্বেদ পদ্ধতি) গর্ভপাত ঘটানো সম্ভব। আর যাদের অ্যালোপ্যাথি ওষুধের কথা শুনেছে (এবং খানিকটা বিশ্বাসও করত) তারা ব্যবহার করেছে কাঠি ঢোকানোর পরদিন একডোজের ৯ গ্রাম ভিটামিন সি (০.৫গ্রামের ৮টি ট্যাবলেট) যাতে ৪৮ ঘন্টায় গর্ভপাত হতো।

পদ্ধতিটার কার্যকারিতা সন্দেহাতীতভাবেই প্রমাণিত। এছাড়া অনেককে কাঠি প্রবেশের পর প্রতিদিন ৪/৫টি গর্ভনিরোধ পিল খাওয়ানো হতো, ৫ থেকে ৭দিন ধরে। আর কোর্স শেষ করার দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনে গর্ভপাত ঘটত। পিলের সরবরাহকারী আইপিপিএফ, সুইডিশ সরকার ও অন্যরা জেনে নিশ্চিত খুশী হবেন যে তাদের যোগানটা বৃথা যায়নি। স্থানীয় জন্মনিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলো থেকে এই পিল বিনামূল্যেই পেত ব্যবহারকারীরা।

তো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরের কথা, বাংলাদেশ সরকারের কাছে অবাঞ্ছিত মাতৃত্বের ভীতিকর ধাক্কাটা লাগার আগেই দেখা গেল সাধারণ গ্রাম্য চিকিৎসকরাই তা অনেকখানি সমাধান করে ফেলেছে। কিন্তু দুঃজনকভাবেই বলতে হচ্ছে, এর ফলে এরা বাড়তি দুটো বড় ধরণের সমস্যার জন্ম দিল। গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলো গর্ভপাত পিছু ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ করতে গিয়ে আরো ফতুর হয়ে পড়ল। গ্রামের কুমারীরা স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি গাইনি সমস্যায় আক্রান্ত হলো (যার মধ্যে বাড়তি ছিল পাক সেনাদের বদৌলতে পাওয়া যৌন রোগও)। এসব কারণে গ্রামবাসীরা আরো নির্বাক হয়ে গেল, চেপে যাওয়ার প্রবণতাটা তৈরি হলো তাদের মধ্যে।

ইংল্যান্ডে আমাকে বলা হয়েছিল বাংলাদেশে ২ লাখের মতো অবাঞ্ছিত মাতৃত্বের শিকার নারীর অস্তিত্ব রয়েছে (মার্চ ১৯৭২)। এও জানানো হলো ঢাকায় একটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে তবে সেখানে বাঙ্গালী কর্মচারিরা কাজ করছে এবং অবৈধ গর্ভপাত বিষয়ক আইনটি স্থগিত করা হয়েছে এই কর্মসূচীটি সুচারুভাবে শেষ করার জন্য। আমার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সকলকে গর্ভধারণের মেয়াদ বেড়ে যাওয়ার পর কীভাবে সফলভাবে গর্ভপাত করানো সম্ভব (টার্মিনেশন অব অ্যাডভান্সড প্রেগনেন্সি)। (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.