অতীতকে নিয়ে নস্টালজিক হতে ভালোবাসি, ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতেও।
আমি কি তোমাদের থেকে অনেক আলাদা? প্রতিদিনইতো একই সাথে স্কুলে যাই, ক্লাসে ফাকি দেই, ক্যান্টিনের লম্বা লাইনে পা ব্যাথা করে দাড়িয়ে থাকি। স্কুলের শেষে হইচই করে ফেরা, কফিশপে একটু থামা। আর অদ্ভুত সব জিনিষ নিয়ে কথা বলা - কোনটাই বাদ থাকে না। মার সাথে ঝগড়া করে কাঁদতে কাঁদতে ফোন করা বা পরীক্ষার আগের রাতের টেনশন ভাগাভাগি করে নেওয়া।
দিনের অর্ধেকটাই কাটে তোমাদের সাথে, তবুও আমি আলাদা? চারকোনা ছোটখাট একটা কাপড় কত কিছু বলে দিতে পারে। এনে দেয় করুণা - "ইস! খারাপ তোমাকে দেখলে!" ...বিশ্বয় - "ওটাতে গরম লাগেনা??" ...অচেনা মানুষকে আপন করে ফেলার আনন্দ - "আসসালামু আলাইকুম সিস্টার। নামাজের রুমটা কোথায় বলতে পারবে?" ...অথবা ভয় ও ঘৃণা - কিছু মূর্খ্য মানুষের মনে। যা যা বলুক, আমার কাছে আনন্দের উচ্ছাসটাই সবচেয়ে বেশি স্থায়ী হয়। হতে পারে এর কারণ আমি যা পরি, ভালোবেসেই পরি।
তাই কেও করুনার হাত বাড়িয়ে দিলে বিরক্তি বোধ করি। যার করুণার দরকার নেই, সে তা দিয়ে কি করবে? কেও বিশ্বয় প্রকাশ করলে ভালো লাগে, মাঝে মাঝে তাদের ভুল ভেঙে দিতে পারি, মাঝে মাঝে পারিনা। তাও ভালো লাগে। আর ভয় ও ঘৃণা? ওদের ঘাড়ে পুরোটা দোষ দিব না। চারপাশ থেকে শিখেই তাদের মনে এগুলো জন্ম হয়েছে।
শপিং সেন্টারে বা ট্রেনে দাড়িয়ে থাকলে, মাঝে মাঝে এরকম কিছু পিচ্চি দেখা যায় - যারা এক দৃষ্টিতে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থাকে। নিষ্পাপ চোখগুলোতে ভয় দেখতে খারাপ লাগে। তাই হেসে ফেলি। হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করি, ভয়ের কিছুই নাই। তোমার ভেতরে যেরকম লাল রক্ত প্রবাহীত হচ্ছে, আমার ভেতরেও ঠিক তাই।
বেশির ভাগ সময়েই ওরা বুঝে, এবং ওরাও হেসে দেয়। কারোও ভয় ভাঙা বড়ই আনন্দদাওক অনুভুতি । ঘৃণা জিনিষটা ছোটদের মাথায় ঠিক আসে না। এটা শুধু বড়দেরই রোগ। এর উৎস কোথায় এখনোও ভালো ভাবে বুঝতে পারিনি।
মাঝে মাঝে কোন কারণ ছাড়াই এটা বের হয়ে পড়ে। এইতো সেদিন, স্কুল থেকে ফিরছিলাম। বন্ধুদের বিদায় দিয়ে বাস থেকে নেমে হাটছিলাম। একা। পাশ দিয়ে দুটো সাইকেল গেলো, দু'জন লোক গলা ফাটিয়ে কথা বলছে।
স্বাভাবিক ভাবেই আমি এক পলক তাকিয়েছি। শুরু হলো মৌখিক নির্যাতন! "WHAT ARE YOU DOIN IN THIS COUNTRY? GO BACK TO WHERE YOU CAME FROM YOU F****** MUSLIM...." এর পরে প্রতিটা কথাতেই চার অক্ষরের অকথ্য শব্দে ভরা ছিলো। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। এরকম সরাসরি অপমান আগে আমাকে কেউ কখনও করেনি। বুঝতে পারছিলাম মুখ গরম হয়ে উঠছিলো।
উলটা পালটা কিছু কথা মুখে চলে এসেছিলো, কিন্তু নিজেকে থামিয়েছি সাথে সাথেই। আমার শুধু শুধু নিজেকে টেনে ওদের মত নিচে নামানোর দরকার কি? আমার বন্ধুরা আমাকে বুঝতে দেয়নি আমি আলাদা। কিন্তু আশেপাশের মানুষ জোড় করে বুঝিয়েছে। তবে আমি ওদের কাছে কৃতজ্ঞ। পৃথিবীর শক্ত ও জটিল নিয়মগুলো জানিয়ে দেওয়ার জন্য, কিছু জিনিষের প্রতি বিশ্বাস ও ভালোবাসা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।