আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্রমন 10

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

পরিকল্পনা অনেক, সময় হাতে কম, রাতে রওনা দিতে হবে মানালি, এর আগে যতটা দেখে নেওয়া যায়, হুমায়ুন টম্ব কিংবা ফতেপুর সিক্রি, এবং অবশ্যই তাজমহল। তাজমহল দেখা হবে বিকালে, হোটেলের দিন শুরু হয় দুপুর 12টায়, এর পরে থাকলে আবার পরদিনের জন্য ভাড়া দিতে হবে, সুতরাং হোটেলের লবিতে সব ব্যাগ রেখে যাওয়া হবে না কি বাসে উঠিয়ে রওনা দেওয়া হবে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাসে ব্যাগ উঠানো হলো, সকালে বেলা, নাস্তা, চা সব শেষ করে, যারা গোসল না করে দিন শুরু করতে পারে না তারা গোসল সারলো, অতঃপর আমরা প্রস্তুত, ফতেপুর সিক্রি। একই রকম স্থাপত্যকলা, একই রকম ইন্টেরিয়র, একই রকম গম্বুজ, মোগল স্থাপত্যের খিলান, আর শীর্ষে প্রচুর মিল। সেই বাকানো আর্চ আমি নিজেও নিশ্চিত না এটাকে আর্চ বলে না আর্ক বলে, তবে এটা বৈশিষ্ঠ।

সেখানে নক্সার ভিন্নতা আছে, চাঁন তারা ছবি আছে, সেখানে যাওয়া হলো, হাঁটা হলো প্রচুর,মানুষজন ক্লান্ত এবং বিরক্ত। গত কয়েকদিন দৌড়ের উপর চলছে জীবন, গত রাতে বিছানা পেয়েছি, তবে আরও বিশ্রাম চায় মন। এভাবে ভারতের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছুটে ছুটে চলা, বিভিন্ন স্থাপত্যের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা। তবে মেয়েরা অনেক পোশাক নিয়ে এসেছে, আমার তেমন পোশাকের বাহার নেই। একই ভঙ্গিতে দলবদ্ধ ছবি তোলা।

একই ঘটনার পুনারাবৃত্তি। শুধু লোকালয় বদলে যাচ্ছে। কি দেখলাম এটা শক্ত। পুরোনো ধ্বসে পড়া কিছু ঘর, কিছু সুন্দর করে রক্ষিত সৌধ, দেয়ালের পাশ ধরে হেঁটে যাওয়া, এবং নিজেকে কখনই এই স্থাপত্যের অংশ মনে হয় না। খোলা মেলা, আধুনিক মানুষের প্রয়োজনীয় আড়াল এখানে নেই।

আমরা দিন দিন নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার একটা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের ঘরের জানালায় ভাড়ী পর্দা, আমাদের ড্রইং রুমে বিষন্ন রংএর ছড়াছড়ি,আমাদের মেহগনি কাঠের আসবাব কিংবা কালচে বাদামি বা খয়েরি রংয়ের আসবাব, আমাদের দেয়ালে ঝুলানো ছবিগুলোও সমান বিষন্ন। এর বিপরীতে উজ্জল কিছু ছবি প্রয়োজন। বিভিন্ন উপলক্ষে আর্ট এক্সিবিশনে যাওয়া হয়, এশিয়া প্রদর্শনী কিংবা দেশির প্রদর্শনী, কিংবা ওসমানীর আন্তর্জাতিক আয়োজন, আমি যেতাম কারন সোহেলের উৎসাহ বেশী, কবিতা উৎসবে যেতাম, মাঝে মাঝে কবির মুখে কবিতা শুনতে, এসব সাংস্কৃতিক জীবনের অংশ হিসেবে থাকা ঢাকা শহরের উৎসবের আমেজ গাঁয়ে মাখা, সব ঠিক ছিলো, তবে সেখানেও বিচ্ছিন্নতা আর বিষন্নতার করাল থাবা। আনোয়ার বলে একজন আছে, 10 ফুট বাই 8 ফুট ক্যানভাসে শৈশব এঁকেছেন, তবে বিষন্ন, ময়লা আলোয় ছড়াছড়ি ক্যানভাসে, এর তুলনায় চারুকলার দেওয়াল অনেক বর্নিল।

কাইয়ুমের ছবি ভালো, রনবি বহুদিন কিছু আঁকে না তেমন করে দেখাও হয় না। ইরানের ক্যালিগ্রাফি, ইরাকের বিষন্ন সব ছবি দেখে দেখে হতাশা নিয়ে ফিরে আসা। এর মাঝে ক্ষনিক আনন্দের মতো উজ্জল কিছু প্যাস্টেলের কাজ দেখে ফেলি, চমৎকার আনন্দময় মনে হয় পরিপাশর্্ব। তবে মুগ্ধ করে জাপানের স্থাপত্যকলা। ওরা এটাকে সম্পুর্ন ভিন্ন একটা আকার দিয়েছে, যেখানে স্থাপত্যের অংশ হিসেবে ঢুকে যাওয়া যায়, বিভিন্ন বাজনা বাজছে, একটা ঘরের বিভিন্ন কোনায় অবিরম বয়ে যাওয়া জলের কলতান, বাতাসের সাথে কিছু বাজনা বাজছে, বাঁশের যন্ত্র বাজছে, স্থাপত্য হঠাৎ করেই জীবন্ত মনে হয়, মনে হয় তার অস্তিত্বে প্রাণ এসেছে, এই নতুন ফর্মটা আমার ভালো লাগে, ভালো লাগে প্যানারোমিক ভিউ দেখতে, রিকশায় যেতে যেতে দেখা চারপাশ, এমন একটা ছবি স্থাপত্যও ছিলো, মজা লেগেছিলো বাহারি চুলে সাজানো একটা স্থাপত্য, যেখানে বিভিন্ন মাপের ও ছাঁটের চুল আছে, আমাদের সিদ্ধান্ত ছিলো এই বেটা নাপিতের দোকানে বসে থাকতো সারাদিন ,যা চুল ছিলো টোকায়া আনছে, এইখানে সাজায়া দিছে, এর সাথে আধুনিক এবং উত্তরাধুনিক বিচ্ছিন্নতার অংশ হিসেবে একটা স্থাপত্য ছিলো ওসমানি চত্তরে, সেখানে একটা গম্বুজের ভেতরে বিভিন্ন মাপের ঘষা কাঁচের লেন্স বসানো, ঐ লেন্স গুলোদিয়ে পাশের সচিবালয়ের ঘোলাটে প্রতিবিম্ব পড়েছে অন্ধকার দেয়ালে।

তবে এই যে বিচ্ছিন্নতা, এই যে আড়াল এটাই মুল ফোকাসের বিষয়। একটা সংকীর্ন দৃষ্টিপাত আধুনিক জীবনের বৈশিষ্ঠ। আমরা কেউ কাউকে চিনি না, সার বাধা জানালায় বাতি জ্বলে উঠে আমরা বুঝি রাত হয়েছে, জমকালো সব সুষম স্থাপত্য, যেখানে ঢুকলে নিজেকে দিককানা মনে হয়, কোনো দিক খুঁঝে পাওয়া যায় না, আমরা গোলকধাঁধাঁর ভেতের পথ খুঁজি, উজল বর্নে লেখা থাকে ওদিকে এদিকে কি আছে, সেসব মানাঙ্কিত ফলক আমাদের একটা ছদ্ম আশ্বাস দেয় আমার ভুল করছি না ঠিকই আছি, আসলে স্থাপত্যগুলো আমােেদর গিলে ফেলে অক্লেশে, মোগল স্থাপত্য এর বিপরীত, সেখানে সবই উন্মুক্ত, বিশাল বিশাল জানালা, বিশাল প্রবেশ দ্্বার এবং পর্যাপ্ত আলোর আনাগোনা, অন্তত আলো দেখে বুঝা যায় পশ্চিম পূর্ব তবে এসবের সামনে নিজেকে ক্ষুদ্্র অকিঞ্চিৎকর মনে হয়। প্রাচীন প্রাসাদগুলো এমন বানানোর একটা কারন অবশ্য সম্ভ্রম আদায় করে নেওয়া, কোষাগারে আরও টাকা চাই, আরও কর দাও, এখানে ওখানে হানা দিয়ে সম্পদ নিয়ে এসে নিজের প্রাসাদ সাজাও। এই হলো স্থাপত্যের পেছনের ইতিহাস।

আওরঙ্গজেব সাহেব বেচারা খুব ধার্মিক ছিলো নিজের হাতে কোরানের প্রতিলিপি করে বেচতো আর সে টাকায় নিজের ব্যায়নির্বাহ করতো। অথচ সেই মানুষটা সম্রাট হয়েও রাজকীয় কোষাগার থেকে কিছুই নিতো না। এই লোকটাই তার 2 ভাইকে জবাই করেছে, তার বাবাকে রেখেছিলো অন্তরীন করে, আমার যদিও বিশ্বাস হয় না তার এই কোরানের প্রতিলিপি তৈরির ঘটনাটা। এটা তার রক্তপিপাসু চরিত্রকে শোধনের প্রক্রিয়াও হতে পারে। যে যত নিষ্ঠুর তার জীবন নিয়ে তত বেশী উদারতা মহানুভবতার গল্প।

একটা পুরো জনপদকে ক্ষমা ও করুনার সাগর মোহাম্মদ কতল করার নির্দেশ দিয়ে দিলো, অবশ্য সরাসরি নয়, উবাই বলেছে তার উপদেশ গ্রহন করে, করুনার সাগর তিনি এ নির্দেশ কার্যকর করে সমস্ত নারী ও শিশুকে দাস বানিয়ে ফিরে চললেন এবং সন্ধ্যায় মৃতু্য হলো উবাইয়ের, তিনি বললেন স্বর্গের দরজা খুলেছে সেখানে উবাইকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এমন ঠান্ডা মাথার নিষ্ঠুর একটা মানুষ বেহেশতে যাবে এটা মেনে নিতে আমার আপত্তি যথে ষ্ট, ঐ বেটা বেহেশতে গেলে আমি ঐ বেহেশতের দরজায় মুতি। এই আওরঙ্গজেব, এই হুমায়ুন এরাও কম করে নাই, রাজা হলে নিষ্ঠুর হতেই হয়। জ্যাক দ্যা রিপার এবং উবাই পাশাপাশি বসে ডিনার করবে এবং দুজনের ভেতরে ভিন্ন ভাবনা খেলা করবে, জ্যাক দ্যা রিপার ভাববে হুরপরিদের খুন করলে ক্যামোন হয় আর উবাই ভাববে সব গোলেমানদের কতল করলে কেমন হয়, এবং এই নির্দেশ পালন করার জন্য মুহাম্মদের সহচরেরাও সেখানে উপস্থিত থাকবে, সেই 70 000 সহচর যারা অবশ্যই বেহেশতে যাবে, তারা এসব কাজে অভিজ্ঞ হওয়ারই কথা। বিকাল বেলা আমরা সবাই তাজমহলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি, সেখানে প্রবেশের জন্য আলাদা পয়সা দিতে হয়, বিদেশিদের জন্য 20 টাকা ভারতীয় দের জন্য 5 টাকা, অবশ্য ওটা বদলাবে ঠিক হয়েছে, এখন বিদেশিদের জন্য 300 টাকা ভারতীয়দের জন্য 5 টাকা, এর পরও আমাদের ট্রাভেল এজেন্সির লোক কিনেছে 5 টাকার টিকেট, বলা হচ্ছে নিজেদের ভারতীয় ভাব দেখিয়ে ঢুকতে হবে।

সবাই তাজমহলের গেটের সামনে চলে গেছে, আমি এবং আরও কয়েকজন অলস, দুর্বল মানুষ। যাওয়ার পথে জসিম ডাকলো চা খাবি? আমার কখনই চায়ে আপত্তি নাই, সুতরাং চা হলো। সাথে সিগারেট, ভারতীয় বিস্বাদ সিগারেট যদিও, এরপর দাম দেওয়ার পালা জসিমের, যেহেতু ঐ হোস্ট, দেখি ও চিৎকার করছে, সালা তুমকো বাল দেগা, বাল,কুছ সামঝে তুমকো বাল দেগা হাম। ঘটনা কি জিজ্ঞাসা করলাম গিয়ে, মাটির ছোটো কাপে চা ওর দাম 10 রুপি, টুরিস্ট আকর্ষন যেখানে আছে ওখানে জিনিষপত্রের দাম আকাশছোঁয়া তাই এই চায়ের কাপ অন্য খানে 1 টাকা হলেও এখানে 10টাকা। এবং দোকানি কিছুতেই 3 কাপের দাম 10টাকা রাখতে রাজী না, তার বক্তব্য এককাপের দাম দেওয়া হয়েছে বাকি 2 কাপ কি ফাও? জসিম সিরিয়াস ভঙ্গিতে বাল বলছে দেখে বললাম ওকে বেচারা হচকচায়া যাইবো দোস্ট।

এইখানে বাল বলতে লোকজন চুল বুঝে, তুই আরও বুইঝা গালি দে। তুমকো বাল দেগা বলে গজগজ করে 20 রুপি দিয়ে দোকানির গালি পেছনে রেখে ফিরলাম লাইনে। ওখানে সবাই ভারতীয় হওয়ার চেষ্টা করছে, সবাই কোলকাতার টানে কথা বলবে ঠিক করেছে, দাদা দেকেছেন কি রোদটা উটেছে মাইরি বলচি এমনধারা দেখিনি আর কোথাও। সবাই কেনো কোলকাতার দাদা হবে, মর্তুজা হিন্দিভাষি হওয়ার ইচ্ছা পোষন করেছিলো, ওর হিন্দির যা অবস্থা ওকে সবাই অনুরোধ করছে তুই চুপ থাক। আর ছোটো ছোটো গ্রুপ এ ভাগ হয়ে ঢুকতে হবে।

ট্রাভেল এজেন্সির লোকজন মাথাগুনে 52টা টিকেট কেটেছে, সবাই সার বেঁধে ঢুকে গেলাম। একটু আগাতেই তাজমহল, প্রেমের চিরকালীন মুর্তরূপ। আমার প্রথম তাজমহল দেখা ভেজাচোখ ছবিতে,সীরিয়াস কাঞ্চন ভাইের ব্লাড ক্যান্সার, সে এক যুগ ছিলো যখন বাংলাদেশের সিনেমা নাটকের লোকজন ক্যান্সার ছাড়া মরতো না। এবং সবারই ব্লাড ক্যান্সার হতো, সেই সিরিয়াস কাঞ্চন তাজমহলের সামনে দাঁড়িয়ে একটা গান গেয়েছিলো, গায়ক সম্ভবত এন্ডু কিশোর ভাই। সেই ছবির মতোই তাজমহলের সামনে ঝাউ গাছের সারি।

ধবধবে সাদা বলা যায় না যদিও এককালে সাদা মার্বেলে তৈরি করা হয়েছিলো, এখন সময়ের কালিমা লেগেছে তাজমহলে, সামান্য হলদে হয়ে গেছে, এবং কতৃপক্ষ নিয়ম করেছে তাজমহল চত্ত্বরে সিগারেট টানা যাবে না। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই তাজমহল চত্ত্বরে না উঠে নীচে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছি। আর ঘুরে ঘুরে দেখছি। কেনো এই স্থাপত্য দেখতে লাখ লাখ লোক ছুটে আসে। আগ্রায় দুষনের মাত্রা বেড়েছে, এখন নিয়ম করতে চাইছে বছরে 6 মাস তাজমহল বন্ধ থাকবে, বাকি 6 মাস খোলা, রিস্টোরেশনের কাজ হবে, সেই অতীত সৈষ্ঠব ফিরিয়ে আনা যাবে কি না এটা নিয়ে সংশয়ে থাকলেও এটা জাতীয় ঐতিহ্য বলেই ভারতের সরকার একটা শক্ত প্রচেষ্টা নিয়েছে, আমাদের বাংলাদেশের কথা ভাবলেও অবাক লাগে, সোনার গাঁ পানাম নগর খসে খসে পড়ছে, রক্ষনাবেক্ষনের কোনো উদ্যোগ নেই, কান্তজীর মন্দিরের টেরাকাটা বৃষ্টিতে ধুঁয়ে যাচ্ছে, সেখানের দেয়ালে আকবরের জয়যাত্রা, রামায়নের ইতিহাস আঁকানো সেসব মুছে যাচ্ছে, ওগুলোকে সংরক্ষনের নামে একটা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তার ফাইল আটকে আছে, সবাই দাবি জানায় অথচ কেউ সঠিক সময়ে রাজি হয় না।

বিভিন্ন রাজবাড়ী, জমিদারবাড়ীর ভগ্ন দশা, দন্ডকারন্য হঠাৎ একদিন পরিত্যাক্ত হয়েছিলো, সেই পরিত্যাক্ত বসতভিটায় ঘুঘু চড়তো, বিশাল বিশাল বটগাছ, ঝুড়ি নামিয়ে ওটাকে মৃত নগরী বানিয়ে ফেলেছিলো, এখনকার বাংলাদেশের পুরাকৃত্তি সংরক্ষনের প্রচেষ্টা এমনই, তারা অপেক্ষায় আছে করে এটা দন্ডাকারন্য হবে, পরে দেবোত্তর ভুমিকে সরকারি খাস ভুমি করা হবে, সেটাকে কোন সাংসদ লিজ নিবে ,ওটার উপরে পার্টি অফিস হবে এবং সন্ত্রাসির আখড়া হবে, এবং সাংসদ অতীতকে হত্যা করে নিজের আখের গুছিয়ে বলবে এই দেখো উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিলাম, ঠেলা সামলাও, জোয়ারে সব পুরাকৃত্তি ভেসে যায়, তাজমহলের পাশেই একটা মলিন ভবন, সেখানে গিয়ে দেখছি আসলে ঠিক কি কারনে এটা এত বিশিষ্ঠ, সুষমতা, গাঠনিক সৈকর্ষ্য বুঝার মতো অবস্থা বা জ্ঞান আমার নেই। খুব বেশী হলে 100 ফুট বাই 100 ফুট একটা বর্গের উপরে সাজানো সৈধ্য, বিবি জানের জন্য এত প্রেম ছিলো মনে হয় না আমার তবে এর জন্যই শাহাজাহান মিয়া এই বিবির জামাইকে হত্যা করেছে। প্রেম সব সময়ই রক্তপাত চায়, হেলেনের জন্য ট্রয় ধ্বংস হয়,মমতাজ বিবির জামাই খুন হয় এবং একই কারনে তাজমহল তৈরি হয় আর সেই শ্রমিকদের হত্যা করা হয়। গল্পকথা হতেও পারে, রত্ন যা ছিলো দেয়ালের অলংকরন হিসেবে তার অনেকটাই লুট হয়ে গেছে, চারপাশে চার খিলান উঁচু, সেখানে সাদার মাঝে কালো বাঁকা বাঁকা দাগ, ফলে আসল উচ্চতার চেয়ে বেশী উঁচু মনে হয়। ওখানে কিছু একটা কাহিনি আছে, সবাই খুঁজে পেয়েছে, আমি চেষ্টা করেছিলাম আমার কাছে সারি সারি কালো দাগ মনে হয়েছে।

যাই হোক সবার দৃষ্টিতে সব ধরা পড়ে না। মুল কবরে যাওয়া নিষিদ্ধ, আমরা বাইরে বাইরে ঘুরি, সবাই হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে, পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। যেই কয়টা জুটি ছিলো তারা হাসিমুখে ছবি তুললো, আমিও অনেকের ছবি তুললাম, চ্যাং দম্পতি, ইরানিয়ান দম্পতি, সবাই হাসিমুখে ক্যামেরা এগিয়ে দেয়, আমি ছবি তুলে দেই, খুব ইচ্ছা করছে হাতে এককাপ চা নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি, তবে সব ইচ্ছা সব সময় পুরন হয় না। এবার অন্য পাশে গেলাম, সেখানে গিয়ে দেখি তানভীর দাঁড়িয়ে আছে উলটা পাশে মুখ দিয়ে, বড়ই নির্মম দৃশ্য, সমস্ত মানুষ তাজমহলের উপরে দাঁড়িয়ে আর তানভীর তার থেকে শ গজ দুরে দাঁড়িয়ে দেখছে, কি হইলো তোর আবার বালটা এইখানে কি করস। ওর ব্যাগ থেকে জনি ওয়াকার পেটে পড়েছে সামান্য, কিংবা ড্রাই জিন, যেকোনো একটা হতে পারে অথবা গত রাতে লিকার শপ থেকে কেনা 45% এলকোহল সমৃদ্ধ কিছু, তরল মনে আছে, আমাকে বিব্রত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো।

আমি অবাক হয়ে দেখছি ওকে। কি এমন বোধ তাড়িত করে মানুষকে, কি এমন আবেগের প্রসবন যা মানুষের চোখের দুকুল উপচে দেয়, তানভীর, যাকে আমার খুব বেশী কামুক মনে হয় সেও এই তাজমহলের সামনে দাঁড়িয়ে হাপুশ নয়নে কাঁদছে, আমাকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করছে না কোনো আবেগ বোধ করছি না আমি। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি তানভীরের চোখের কোন দিয়ে পানি গালে গড়াচ্ছে, গাল থেকে থুতনি, থুতনি থেকে মাটিতে পড়লো কয়েক ফোঁটা। কিছু উপযুক্ত শব্দ খুঁজে পাওয়া দরকার, খুবই যোগ্য কিছু শব্দ যা ঠিক এই মুহূর্তের জন্যই তৈরি হয়েছে, আমি মগজে রআনাচে কানাচে সেই উপযুক্ত শব্দসন্ধান করছি ব্যাগ্র শিকারীর মতো। খুবই নির্মম শোনালো গলাটা, কি রে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করনের কি হইছে, একটু খোলাসা কইরা ক? আমাকে জড়িয়ে ধরে সে যা বললো, তুই আমার একমাত্র বন্ধু এখানে দেখ গতকাল যুঁথি কি করলো আমার সাথে, তুই বল আমি ওকে কম ভালোবাসি? তুই বল আমার মতো ভালোবাসা ওকে কেউ দিতে পারবে।

এখানে দাঁড়িয়ে দেখলাম ওকে ঐ রেলিংএ দাঁড়িয়ে আছে,হাসতেছে, আমার মনটা আনন্দে ভরে গেলো, এই সুন্দরি মেয়েটাকে আমি ভালোবাসি, অথচ ঐ মেয়ে আমাকে ভালোবাসে না। আমার চোখ কপালে উঠার অবস্থা, তানভীর এই রকম রোমান্টিক ডায়লগ ঝেড়ে দিবে তাজমহলের সামনে এতটা আশা করি নাই। এইসব ভাবের কথা বলার দায়িত্ব আমার, আমি গদ্যকবি, আমার মুখের বুলি কাইড়া নিয়া তানভীর এইটা কি কইলো। ওকে নিয়ে আরও কিছুদুর হাঁটলাম সেখানে, তারপর বললাম ঠিক আছে দোস্ত তুমি ঠিকঠাক হও, একটু সামলায়া উঠো, আমি পরে আইয়া তোমার লগে কথা কমু। তানভীর আসার আগে আমাকে বললো দোস্ত একটা কথা দিয়া যা, কারো লগে এই কথা শেয়ার করবি না, এই টু্যরের সময় অন্তত না।

আমি কইলাম ঠিক আছে কোনো ব্যাপার না আমি গিলে ফেললাম সমস্ত বিষয়টা। তুই আয় আমি উপরে যাইতাছি। তাজমহলের সামনের ফটোসেশন শেষ হলো। তানভীরও চোখ মুছে পরিচ্ছন্ন হয়ে ফিরলো। আমরা বেশ আয়েশ করে সিগারেট টানছি।

এবং সিদ্ধান্ত হলো গ্রুপ ছবি, অবশ্য এটাও একটা নিয়মে পরিনত হয়েছে,অন্তত 3 সেট গ্রুপ ছবি থাকবে, যেখানে একজন না একজন বাদ পড়বে, এবার কেউ বাদ পড়ছে রাজী না শমিক প্রায় 3 মিনিট লাগিয়ে ফোকাস ঠিক করলো, ফ্রেমিং ঠিক করলো, ওখানে থেকে বললো দোস্ত মাঝে একটা জায়গা ফাঁকা রাখো, আমি আইতাছি। আমি একেবারে সবার বামে, ছবি তোলা হলো, শমিক আমাদের আশে পাশে এবং সেখানে তমাল আইভি পাশাপাশি বিরক্তিকর বিষয় হলো আমার পাশে দাঁড়ানো যুঁথি। আবারও রি এরেঞ্জ, আবারও ছবি, সিঁড়ির মধ্যে ছবি, বিভিন্ন ভাবে ছবি তুলছে, সবাই পাগল হয়ে গেছে ছবি তুলে শেষ করে ফেলবে। বিকালের আলো শেষ হয়ে যাচ্ছে, সূর্য মামার যাওয়ার সময় হলো, লাল হয়ে গেছে সূর্য অন্ধকারে এখানে কারও থাকার নিয়ম নেই, এককালে ঠিক যমুনার পাড়ে ছিলো তাজমহল, এখন যমুনা সরে গেছে বহুদুর, কোনো এক চাঁদনি রাতে পাশের কোনো এক নদি থেকে নৌকায় বসে দেখতে হবে চাঁদের আলোয় এর রূপ, এ জিনিষ দিনের আলোয় তার সবটুকু অবগুণ্ঠন খুলে না, সন্ধ্যার লাল আলোয় আরও মোহময় লাগছে তাজমহলকে। যদি কোনোদিন তেমন রেস্ত হয় পকেটে তাহলে একদিন নৌকায় বসে জোৎস্না রাতে তাজমহলের সুধা পান করবো,


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।