সযতনে খেয়ালী!
পূর্বে প্রকাশিত অংশ
বাইরের অন্ধকারের সাথে সুর মেলাতেই কিনা প্রবল শব্দে কাছে কোথাও কিছু একটা বিস্ফোরিত হওয়ার সাথে সাথেই ঘরটা অন্ধকারে ডুবে গেলো। লোডশেডিং, অন্যসময় হলে হয়তো শুভ্রা চেঁচিয়ে উঠতো একটা মোমবাতির জন্য- অথচ এখন এই অন্ধকারটাই ভালো লাগছে তার। থেকে থেকে চমকে ওঠা বিদু্যতের ঝলকানী, জানালার গ্রীল ভেদ করে আসা ঠান্ডা, ভেজা বাতাস, আকাশের অঝোর কান্না যেনো এতোক্ষণ এই অন্ধকার টুকুরই প্রতীক্ষায় ছিলো পূর্ণতা পাবার।
সেদিনের সেই দেখা হবার পর তো অনেকগুলো দিন কেটে গেলো শুভ্রা শিপলুর টিকিটিও খুঁজে পেলো না ক্যাম্পাসের নানা জায়গা চষেও। একদিন তো শিপলুর দেয়া নামবারে ডায়ালও করেছিল সে।
উফ, কী অস্থিরতাটাই না কাজ করছিল সেসময়।
দুরুদুরু বুকে 987... ... ডায়াল করে শেষ সংখ্যাটা চাপার সাথে সাথেই দুরুদুরুবু শব্দটা ধুপধাপ ছাপিয়ে দামামার আওয়াজ জানান দিচ্ছিলো বুকে। প্রতিটা রিঙের "টু-উ-উ-উ-ট" শব্দ কানে আসার সাথে সাথে শুভ্রার মনে হচ্ছিল এই বুঝি তার হার্ট অ্যাটাক হলো! ওপার থেকে একটা "হ্যালো" শুনেই চকিতে "ঘড়াৎ" করে রেখেদিয়েছিলো ফোনটা।
অবশ্য পরে নিজের বোকামির জন্য নিজেকেই ধিক্কার দিচ্ছিল সে। এমন একটা কাজ কেন করলো সে! সেতো এতোটা আনস্মার্ট না যে কাউকে ফোন করে কথা না বলে রেখে দিবে।
কিন্ত সেসময় তার এমন লাগছিলো কেন? নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছিলো, বুকের ধুরুপ ধারুপ ধব্দটা গলা পর্যন্ত এসে যেন চেপে ধরতে চাইছিলো তার। এ অবস্থায় কী করে সে কথা বলতো, কী করে জিজ্ঞেস করতো "আমি কি শিপলুর সাথে একটু কথা বলতে পারি...?"।
আচ্ছা তখন কথা হলেই বা কী জিজ্ঞেস করতো শুভ্রা, কী হতো তাদের কথোপকথন!
: এই যে কেমন আছেন?
: ঐ যে, ফাটাফাটি! তা আপনি কেমন আছেন?
: ভাআআআলো তো!
: হুমমম, তা গরীবকে কি জন্য ইয়াদ করলেন বলেন দেখি।
: এমনি ফোন করা। হাতে তেমন কোন কাজ নেই, ভাবলাম আপনাকে একটু ডিস্টার্ব করি।
: যার নেই হাতে কজ, বসে বসে খই ভাজ। আপনিও এই কাজটা করতে পারেণ। খই ভাজা প্র্যাকটিস করতে থাকেন। ভবিষ্যতে কাজে দিবে...।
: হাহাহা..., আচ্ছা আপনি থাকেন কোথায়? অমাবস্যায় চাঁদ দেখে বেড়ান নাকি নিজেকে ডুমুরের ফুল হিসেবে ভাবতে ভালো লাগে? নাকি দাম বাড়ান নিজের...!
: হাহাহাহা...
: হাসছেন কেন? যা জানতে চাইছি ঠিক ঠিক উত্তর দিন।
: আরে মুশকিল, আপনি কি আমার বিয়ে করা ঘরের বউ নাকি যে ঠিকঠিক সব উত্তর দিতে হবে নাহলে হরতাল, ধম্মঘট ডেকে দেবেন....!
এতটুকু ভাবতেই শুভ্রার মুখটা লাল হয়ে উঠলো। ঠোঁট বাঁকা হয়ে সেখানে লজ্জার একটা হাসি নিজেই টের পেলো। "বিয়ে করা ঘরের বউ", কথাটা জানি কেমন! কথাটায় খারপ কিছুই নেই, অথচ কেমন লজ্জা লজ্জা কথাটা! এই কথাটা কেনো তার মনে এলো?
এই হয়েছে একটা সমস্যা তার। নিজের মনেই নিজে একটা কল্পিত চিত্র এঁকে, আবার নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া শুভ্রার অবচেতন মনের একটা কাজ। যখন একা থাকে, নিজের অজান্তেই সে অনেক কিছু ভাবে যার অনেক গুলোরই শেষ হয় কান, মুখ লাল হয়ে যাওয়া দিয়ে! যেমনটা হলো এখন।
আর ভাবনা গুলোও এমন, যতোই লজ্জা হোক, যতোই কান লাল হোক, ভাবতে ভালোই লাগে, অদ্ভুত শিহরণ লাগে মনে। নিজেকে মনে হয় প্রজাপতির রঙীন ডানায় ভর করে উড়ে চলেছে।
এমনই অসম্ভব ভালো লাগা কিছু কথা ভাবতে ভাবতে বাঙলা একাডেমির সামনের রাস্তাটা ধরে কার্জনের দিকে যাচ্ছিলো শুভ্রা। ওখানে পুরো গ্রুপটার থাকার কথা, সেখান থেকে সবার সাথে নন্দনে যাবার কথা। অনেকদিন আগের প্ল্যান, সবার একত্রে সময় সুযোগের অপেক্ষায় খালি পিছিয়ে যাচ্ছিল তারিখটা।
হাঁটতে হাঁটতে বাঙলা একাডেমির টাইলস ফেলা ফুটপাথ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মাথাটা উঁচু করে সামনে তাকাতে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারলোনা শুভ্রা।
সামনে থেকে একটা রিক্সায় করে এদিকেই আসছে শিপলু। পড়নে গ্যাভার্ডিনের প্যান্ট, পলো টি-শার্ট চোখে কালো রোদচশমা। সাথে একগাদা কাগজের স্তুপ। শুভ্রার কাছে আসতেই রিক্সাটা থেমে গেলো।
শুভ্রা যেনো কিছুই দেখতে পায়নি, এমন একটা ভাব করে, একটুও দেরী না করে পাশের চুড়িওয়ালার রেশমী চুড়ির ঝুড়িতে ঝুঁকে পরে চুড়ি দেখতে লাগলো সে... "দেখি তো মামা ঐ নীল রঙের গুলো....."
-:চলছেই তো:-
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।