আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপরিপূর্ণ (ফাটাফাটি) গল্প ...... (পর্ব - 3)

সযতনে খেয়ালী!

সারা বাড়িময় চেঁচামেচি, চিৎকার, সবার এদিক ওদিক ছোঁটাছুটি- সব মিলিয়ে বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার। এরই মাঝে ডায়রীতে ঘষঘষ করে কী যেনো লিখে যাচ্ছে শুভ্রা, গত জন্মদিনে বাবার দেয়া 'মাউন্ট ব্লাঁ' কলমটা দিয়ে। কলমের কালীর সেই গন্ধটা, খাতায় লেখার সেই আওয়াজ সে এখনো পাচ্ছে। বেশ কয়েক বছর পর, আজকের বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায়। ভেজা বাতাসের ছোঁয়ায়।

জানালার গ্রীলের পাশে। উড়ে চলা সাদা সিফনের শাড়ির আঁচলের সাথে নিজেও উড়ে উড়ে চলে যাচ্ছে সেদিনের সেই সময়টায়। সারা বাড়ি জুড়ে উৎসবের প্রস্ততি, মার্বেলে বাঁধানো বারান্দা, সিঁড়িতে ধপধপ করে চলা, নিজের ঘর, বারান্দায় দাঁড়িয়ে খোলা চুলে বাতাস মাখা... সবকিছু যেনো সময়ের গহীন উপত্যকা থেকে তাঁর ইন্দ্রীয়ের সামনে এসে হাজির হয়েছে। নাকি সময়-কাল সব থেমে আছে এখন, আর সে নিজেই সময়ের অভিযাত্রী হয়ে ছুঁটে যাচ্ছে অবচেতন মনের কোনায় সচেতন হয়ে পড়ে থাকা বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার পোস্টমর্টেমে! অনেক জাঁকজমকের ভেতর দিয়েই মার্বেল পাথরের বাড়ির উৎসব শেষ হলো। শুভ্রার মা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন, কী খাঁটুনি টাই না গেলো এই ক'দিন।

শুভ্রার নিজেরো বেশ ক'দিন ক্লাশ কামাই হয়েছে। এটা অবশ্য বড় কোন ব্যাপার না ওর জন্যে। ও মাঝে মাঝেই ইউনি, ক্লাশ, টিউটোরিয়াল সব ফাঁকি মেরে বেড়ায়। কিন্ত বন্ধুত্বে ফাঁকি মারে না। সময় করে দল বেঁধে শহরময় চষে বেড়ানো, আড্ডায় মাতোয়ারা হওয়া, অকারণে হাসির ফুলঝুড়ি উঠা, ধানমন্ডি মাঠের সামনে বসে ফুচকা খাওয়া, চারুকলার সামনে ভেনালের কাঁঠাল পাতায় মোড়া ঠোঙায় বিরিয়ানী খাওয়া, ইচ্ছে হলেই নীরবে গিয়ে ভর্তা-ভাত গলাধ:করণ - সবই চলে।

বন্ধুরাও সব ওরই মতো, স্ক্রু-ঢিলা টাইপ। এমনই একদিন চারুকলার দেয়াল ঘেঁষে কাঠের চেয়ারে বসে, ভেনালের কাঁঠাল পাতার ঠোঙায় সাদা প্লাষ্টিকের চামচের সাথে হাসির ঝড় উঠছে একেকজনের মুখে। শুভ্রার দৃষ্টি আটকে গেলো অস্থায়ী দোকানটার সামনের দিকে দাঁড়িয়ে অর্ডার দিতে থাকা একজনের দিকে। বারকয়েক আপাদ মস্তক দেখে নিল সে ছেলেটাকে। চোখে রোদ চশমা, চুল ছোট করে ছাঁটা, হাফ হাতা শার্ট, গ্যাভার্ডিনের প্যান্ট, পায়ে চামড়ার স্যান্ডেল।

কোথাও আগে এনকাউন্টার হয়েছে শিওর, কিন্ত মনে পড়ছে না কোথায়, কীভাবে। পরক্ষণেই মস্তিষ্ক তাঁর আহবানে সাড়া দিল, পরশুদিন সন্ধ্যার দিকে ডাস থেকে চা নিয়ে ফেরার সময় এর সাথেই প্রায় সংঘর্ষ এড়িয়ে নিজের এবং বন্ধুদের চায়ের মাটিতে লুটিয়ে পড়ার অপমান থেকে রক্ষা করেছিল শুভ্রা। দুইটা 'সরি' বিনিময়, তারপর যারযার পথে চলে যাওয়া, এইতো! এক নিমিষের জন্য তাকিয়েছিল বলে দেরী করে হলেও ধরতে পেরেছে, এই ছেলেটি ই ডাসের সেই ছেলেটি। কিন্ত এতো অল্প সময়ে তো শুভ্রার কারো চেহারা মনে থাকে না। "হুমমম, ব্রেন ব্যাটার উন্নতি হয়েছে মনে হয়" নিজের মনেই নিজে হেসে উঠলো।

"কিরে একা একা হাসছিস কেনো, জ্বীণে ধরছে নাকি"? এই নিয়ে সবার মাঝে আবার হাসির রোল। জ্বীণে ধরার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চারুকলার ইয়া বড় বকুল গাছ থেকে শুরু করে আই ই আর-এর নির্জন ক্যাম্পাস হয়ে ফুলার রোডের সাড়ি সাড়ি কড়ই গাছ, কিছুই বাদ গেলো না। একেকজন একেক কথা বলে, আর সবাই খিলখিল করে হেসে উঠে। এর ঠিক তিনদিন পর টি এস সি থেকে বের হয়ে, সামনে দাঁড়িয়ে শুভ্রা অপেক্ষা করছে বন্ধুদের। আবারো সেই ছেলে, এবার মস্তিষ্ক আর সময় নিল না সাহায্যে এগিয়ে আসতে।

"এক্সকিউজ মী, আপনি মফিজ না?" ছেলেটা থমকে দাঁড়িয়ে ঘাড় ঘুরে একবার পিছনে তাকিয়ে নিয়ে বলে, "আমাকে বলছেন?" "হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি। এতো ঢং করছেন কেনো?" "আরে মুশকিল, ঢং করবো কেন? আমি ভাবলাম আমি ভবিষ্যতে চলে গেছি আর আপনি আমার ছেলেকে ডাকছেন। আমার নামতো মফিজ না, তবে ছেলে হলে তার নাম 'মফিজ' ই রাখবো, কথা দিচ্ছি"। "উপপস, সরি, কিছু মনে করবেন না। আমার মনে হচ্ছিল আমি আপনাকে চিনি....." "ব্যাপার না, অনেকের ই অনেককে দেখে চেনা চেনা লাগে।

পৃথিবীতে এতো এতো মানুষ, সৃষ্টিকর্তা হয়তো মজা করার জন্যেই কারো কারো মাঝে মিল দিয়ে পাঠিয়েছেন..."। "আপনি কি নিশাত কে চিনেন..."? "কোন নিশাত! উত্তরার?..... ওহ ওয়েইট, আপনি ই কি সেই বদমেজাজী মহিলা"? "জ্বী... আমি ই সেই বদমেজাজী মহিলা" - হাসতে হাসতে বল্লো শুভ্রা। পরিচয়ের শুরুটা এখানেই। এখানেই দাঁড়িয়ে আধা ঘন্টার মতো কথা হয়েছিল সেদিন ওদের। শিপলু বুঝতে পারেণি মেয়েটা এতোটা প্রানোচ্ছ্বল কথা বলতে পারে।

অন্তত সেদিনের ঘটনার পরতো নয়ই। শুভ্রাও ভাবতে পারেণি অভদ্র বলে যাকে গালি দিয়েছিল, তার মধ্যে এতোটা সমীহ জাগানোর মতো সন্মান বিদ্যমান। তাড়াহুড়ার কারণে শিপলুকে সেদিন ছুটতে হয়েছিল। কিন্ত টি এস সি-র সামনে থেকে শুরু হওয়া তাদের সেই পথ চলা গুঁটি গুঁটি পায়ে এগিয়েছিল সেই দিনটি পর্যন্ত, যেদিন শিপলু টি এস সি-র সামনে থেকেই শুভ্রার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিল, শেষ বিদায়....। : চলবে কিনা; সেটা পাঠক বলবেন :


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।