আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বাচন সময়মত হবেই...



গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব-পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন এবং কেবল সংবিধান ও আইনের অধীন হবেন। ’ আরো বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি পদের ও সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার-তালিকা প্রস্তুতকরণের তত্ত্বাবধান, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অনুরূপ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং নির্বাচন কমিশন সংবিধান ও আইনানুযায়ী কাজ করবে। অর্থাৎ দেশের নির্বাচনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের এবং তারা স্বাধীনভাবে সেই দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আধুনিক প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার জনগণের সার্বভৌমত্বের নীতির ভিত্তিতে সংগঠিত হয়। আমাদের রাষ্ট্র বিশাল এলাকা ও বিরাট জনসমন্বয়ে গঠিত।

সেজন্য জনসাধারণের পক্ষে সরকার পরিচালনায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ সম্ভব নয়। তাই জনগণ প্রধানত ভোট প্রদানের মাধ্যমে তাদের সার্বভৌম ক্ষমতা ব্যবহার করে থাকে এবং প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে সরকার পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে। কোন দল সরকার গঠন করবে এবং সরকারের নীতি ও কর্মসূচি কি হবে, ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নাগরিকবৃন্দ তাও সাধারণভাবে নির্ধারণ করে থাকে। জনগণই ক্ষমতাসীন সরকার ও যে রাজনৈতিক দল যে সরকার গঠন করেছিল, তার কার্যক্রমের ওপর রায় প্রদান করে; অর্থাৎ সেই দল যদি সন্তোষজনকভাবে সরকার পরিচালনা করে থাকে, তাহলে ভোটের মাধ্যমে সেই দলকেই আবার নির্বাচিত করে। আর যদি সেই দলের ভোটদাতাদের যেভাবে সরকার পরিচালিত হবে বলে আশা করেছিলেন, সেভাবে তা পরিচালনা করতে না পেরে থাকে তাহলে তার জায়গায় নতুন দল নির্বাচন করে।

‘ভোটাধিকার গুরুত্বপূর্ণ অধিকার বলে সর্বজনবিদিত। ’ এই অধিকারের সফল প্রয়োগ লক্ষ্য করা গেছে বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত প্রায় ছয় হাজার নির্বাচনে। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সেনা মোতায়েন না করেও সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইসি’র অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবি আরো জোরালো হয়েছে। কিন্তু কিছু চক্রান্তকারী আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা শুরু করেছে।

অর্থাৎ কিছু রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের বেশ কিছু ব্যক্তিত্ব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে নিয়োজিত রয়েছেন। তারা আওয়ামী লীগের সংবিধান অনুসরণের নীতির বিরোধী বলেই বিএনপি’র সমর্থক। আবার তৃতীয় শক্তির আগমন বার্তায় গোঁফে তা দিয়ে চলেছেন, কারণ তাদের ধারণা আগামী সংসদ নির্বাচনে মহাজোট হারতে যাচ্ছে। জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে সুশীল সমাজের অনেকে প্রচারও করছেন। আসলে এই অপপ্রচারও বিএনপি-জামায়াতি ঘরানার কর্মকা-।

সংবিধান অনুযায়ী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৫ অক্টোবর। সে হিসেবে তাদের হাতে সময় আছে মাত্র দু’মাস। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে বলেছেন সংবিধান থেকে একচুলও তারা নড়বেন না। অন্যদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে এখন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে নেমে এসেছে বিএনপি-জামায়াত। সংবিধানকে সামনে রেখে সংলাপ ও সমঝোতার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

কিন্তু বিএনপির একগুঁয়েমির জন্য নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে মানুষের। ক্ষমতায় থেকে আগামী নির্বাচন করার প্রত্যয়ে দৃঢ় শেখ হাসিনা দেশ-বিদেশের সভা ও বৈঠকে সব সময় একই কথা বলে এসেছেন। পক্ষান্তরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জানিয়ে দিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল অংশগ্রহণ করবে না। সরকারকে তারা একগুঁয়েমির জন্য দায়ী করছে। অন্যদিকে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনার সঙ্গে বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, দ্রুত সংলাপের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকার ইস্যুতে সরকার সমঝোতায় এলে নির্বাচন তিন মাস পিছিয়ে দিতেও তাদের আপত্তি নেই।

আর সমঝোতা না হলে দাবি আদায়ে তারা লাগাতার হরতালের হুমকি দিয়েছে। পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি এখন আত্মবিশ্বাসী যে আগামী নির্বাচনেও তারা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা গঠন করবে। এজন্য পশ্চিমাদেশগুলোসহ বিদেশি কূটনীতিকরাও বিরোধী দলকে আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। সুনামগঞ্জে অবস্থানের সময় ১২ সেপ্টেম্বর মজিনা বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে মার্কিনিরা কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। জাতীয় নির্বাচন কীভাবে গ্রহণযোগ্য হবে, তা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো।

তবে আমরা সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন দেখতে চাই। এজন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি দুই নেত্রীকে চিঠি দিয়েছেন ৯ সেপ্টেম্বর। যথাসময়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রস্তত রয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল। নির্বাচনের আগে কাউকে ডাকবে না ইসি। ইইউ রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ১১ সেপ্টেম্বর প্রাক নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন।

প্রায় একঘণ্টার এ বৈঠকে ১০ মিলিয়ন ইউরোর জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্প, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করাসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয় বলে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানান তিনি। হানা বলেন, ইসির সঙ্গে আমাদের অনেক বছর ধরে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ চলছে। এগুলোর ধারাবাহিকতা ও তাদের কার্যক্রম নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি ও সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ প্রতিনিধি দলটি। এ বিষয়ে হানা সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত। তাদের নির্বাচন প্রস্তুতির অনেক কাজ রয়েছে, সব কিছু এগোচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের ইতিবাচক কূটনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে বিরোধী দল ও কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির নেতিবাচক কর্মকা- আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ‘সংসদ রেখে নির্বাচনে গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে’ বলেছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেন। তাঁর মতে নির্বাচন একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া।

এই প্রক্রিয়ায় একটি সরকার আরেকটি সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে থাকে। এখানে মারামারি বা সংঘর্ষের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু আমরা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ দেখতে পাচ্ছি। সংসদ রেখে নির্বাচনে গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। একই সুরে কথা বলেছেন খালেদা জিয়া।

গত ৮ সেপ্টেম্বর নরসিংদীর জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে সড়ক, রেল ও নৌ-পথ অবরোধ করা হবে। ’ তিনি বলেন, ‘আসন্ন সংসদ অধিবেশনে সরকার যদি সংবিধান সংশোধন না করে, তাহলে আমরা চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবো। যেখানে হরতাল, অবরোধ ও অসহযোগের মতো কর্মসূচি থাকবে। ’ যে মওদুদ আহমদ এরশাদের শাসনকালে সংবিধান দেখিয়ে বলেছিলেন, ক্ষমতাসীনদের অধীনেই নির্বাচন হবে এমনটাই সংবিধান সংরক্ষণ করছে। সেই মওদুদ সাহেব সংবিধানের ওপর ভর করতে ভয় পাচ্ছেন এখন।

বিএনপি’র সময় মাগুরার উপনির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারও অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছিল। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুঃখজনক অধ্যায়। বিজ্ঞ বিচারকগণ রায়ে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান সমর্থন করে না। বিএনপি-জামায়াতের সময় চারদলীয় জোটের শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেসময় ১ কোটি ৪০ লাখ ভুয়া ভোটার করা হয়েছিল।

২০০৭ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট একতরফা নির্বাচন করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু এখন একতরফা নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই। সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ও পেশাজীবী সমাজসহ সবাইকে আলোচনার মাধ্যমে আগামী নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী বিষয় নিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। টেকসই গণতন্ত্রের জন্য এটি জরুরি।

গণতন্ত্র না থাকলে অন্য ধরনের সরকার আমাদের প্রত্যাশিত নয়। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকেই আওয়ামী লীগের ভোট প্রাপ্তি ঘটেছে বিএনপির চেয়ে বেশি। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ১,১৪,৭৩,০০০ এবং উপস্থিত ভোটারের ৩৩.৭৩ ভাগ ভোট পায় এই দলটি। তাদের আসন সংখ্যা ছিল সিপিবি, বাকশাল ও ন্যাপসহ মোট ১০০টি। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপির চেয়ে শতকরা ৩ ভাগ ভোট বেশি পায়।

৯১-এর নির্বাচনে বিএনপির প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ১,০৪,৭৯,০০০ এবং গড়ে ৩০.৮১ ভাগ ভোট পায় বিএনপি। আওয়ামী লীগের চেয়ে শতকরা ০৩ ভাগ ভোট কম পেয়েও তারা ১৪০টি আসনে জয় লাভ করে। অর্থাৎ ৪০টি আসনে বিএনপি এগিয়ে ছিল। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শতকরা ৩৭.৪৬ ভাগ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়। অন্যদিকে বিএনপি ৩৩.৬০ ভাগে সীমাবদ্ধ থাকে।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচন সম্পর্কে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের মন্তব্য ছিল- ‘এই রকম সাড়া জাগানো নির্বাচন বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। কারণ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য কোনো সহিংস ঘটনা ঘটেনি। চোখে না পড়ার মতো কিছু ঘটনা বাদে জনগণ অবাধ ও মুক্ত পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন সম্পর্কে গুরুতর কোনো অভিযোগ করতে পারবে বলে মনে হয় না। ’ এসময় ভোট প্রদানের হার ছিল শতকরা ৫৫ ভাগেরও বেশি।

২০০১ সালে আওয়ামী লীগকে চক্রান্ত করে পরাজিত করলেও সেই নির্বাচনেও শতকরা ভোটে এগিয়েছিল দলটি। আর ২০০৮ সালে রীতিমতো ভোট বিপ্লব হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ১৯৭৫ সালে আমরা যা হারিয়েছি তার কিছুটা হলেও ফিরে পেয়েছি। মানুষ চারদলীয় জোট সরকারের চরম অনিয়ম-দুর্নীতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ভোট দিয়েছে। ভোটের মাধ্যমে বিগত সরকারের বিচার করেছে এবং মানুষ দেখেছে সন্ত্রাস কমেছে, নিয়োগ বাণিজ্য কমেছে, চাঁদাবাজি কমেছে, হত্যা হচ্ছে না, সাম্প্রদায়িকতা কমে এসেছে।

জনগণ এসব কাজে আস্থা পাচ্ছে। মহাজোট সরকার সাম্প্রদায়িকতা নিরসনে অনেক কিছুই করেছে। দৃশ্যমান কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে। ভারতের উলফারা সুবিধা করতে পারেনি।

তবে এতেই সমাধান নয়। এখনও কিবরিয়া হত্যার বিচার হয়নি। ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার বিচার হয়নি। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকার কারণে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়ে গেছে। অতীতে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করা রাষ্ট্র অনুমোদন করেনি।

’৭২-এর সংবিধান প্রণয়নের পর জামায়াত তার গঠনতন্ত্র থেকে সরে গিয়ে ভিন্ন নামে রাজনীতি করেছিল। ’৭৫-এর পর ফের জামায়াত তার পূর্বের গঠনতন্ত্র নিয়ে ফিরে আসে রাজনীতিতে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে সরকারের দাবি। এখন এমন পরিস্থিতিতে জামায়াত তার নীতির পরিবর্তন করে রাজনীতি শুরু করেছে। কিন্তু তাদের নিবন্ধন বাতিল ও দলটি নিষিদ্ধ হওয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কারণ রাষ্ট্র ও সংবিধান মেনেই তো রাজনীতি করতে হবে তাদের। মুক্তিযুদ্ধের অর্জন ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠা। এখানে সকলেই ধর্ম পালন করবে। কিন্তু ধর্মকে ব্যবহার করে কোনো প্রকার বিভেদ বা সন্ত্রাস সৃষ্টি করে রাজনীতি করার অধিকার নেই। সংবিধানের এই সত্যকে প্রতিষ্ঠা দিতে হয়েছে।

তবে কীভাবে ধর্মের অপব্যাখ্যা হচ্ছে তা মানুষকে বুঝিয়েই অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে। বিএনপি সরকারের আমলে একদিনে ১৯ জন বিচারককে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। দলীয় বিবেচনায় পাইকারি হারে নিয়োগ দিয়ে বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে তারা। আওয়ামী লীগের সময় নিয়োগ পাওয়া ১৪ জন বিচারকের চাকরি স্থায়ী হতে সময় লাগে বিএনপির আমলে। বিএনপির আমলে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া এবং চাকরি স্থায়ীকরণ না করায় বিচার ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা ছিল না।

বর্তমানে সরকারের আমলে সেই আস্থা ফিরে এসেছে। এজন্য ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য সেনাবাহিনীর ভয় এখন আর জনগণ পায় না। কারণ তারা জানে রাজনীতিই হচ্ছে ক্ষমতার উৎস। সেনাবাহিনী হচ্ছে রাষ্ট্রের একটি অনুগত সংস্থা। দেশের রাজনীতিকরা এখন আইন ও সংবিধানের ওপর আস্থা রাখেন।

সরকারদলীয় মন্ত্রী-এমপিরা ক্ষমতায় থাকলেও নিরপেক্ষ থেকেই কাজ করছেন। এজন্যই দলীয় সরকারের অধীনে ভালো নির্বাচন হওয়া সম্ভব। আমাদের মতে বিরোধী দলই সরকারের কথা মানতে বাধ্য হবে। কারণ বিরোধী দলের আন্দোলনকে রাজপথে মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। মহাজোটের নীতি নির্ধারকরা বলছেন, অনির্বাচিত কোনো ব্যক্তি দিয়ে সরকার আর এক মুহূর্তের জন্য পরিচালিত হবে না।

যদিও কেউ কেউ আশঙ্কা করেছেন রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে অরাজনৈতিক ও অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসা অনিবার্য হয়ে পড়বে। সে ধারণাও অমূলক। গত ৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী দলীয় সরকার থাকলেও সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির আশ্বাস দিয়ে আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও মওদুদ বলেছেন, ইসি সরকার দলীয় এজেন্ট। মূলত জাবেদ আলী সংবিধান অনুসারে কথা বলেছেন।

কারণ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হওয়ায় এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই আগামী নির্বাচন হবে, বহাল থাকবে সংসদও। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেছেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে যেখানে ভোট দেয়া হোক, পড়বে নৌকায়। ’ প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে বলেছেন, নির্বাচনকালে তার সরকার থাকলেও নীতি-নির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। তবে সংসদ বহাল অবস্থায় মন্ত্রী, সংসদ সদস্য প্রার্থী হলে অন্য প্রার্থীদের মতোই প্রচারণায় সমান সুযোগের ব্যবস্থা থাকবে। এ লক্ষ্যে বিদ্যমান আচরণবিধিতে সংশোধন আনা হবে বলে জানা গেছে।

সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচনি বিধি বিধানের মধ্যে থেকেই ইসি কাজ করবে। আইন মোতাবেক ইসির কাজ সবসময় স্পষ্ট। অনেক দেশেই ‘অন্তর্বর্তী সরকার’-এর মাধ্যমে নির্বাচন হয়। যুক্তরাজ্য ও আমাদের পাশের দেশ ভারতেও সরকার সিটিং অবস্থায় নির্বাচন হয়। সেখানে মন্ত্রী-এমপিদের যে ব্যবস্থা হয়, যা পাওয়া উচিত এখানে সে ব্যবস্থাই করা হবে।

সংবিধান অনুযায়ী ২৮ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। গত ২৩ আগস্ট জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন দুই নেত্রীকে ফোন করে বলেছেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও একই দাবি ও আশাবাদ ব্যক্ত করে দুই নেত্রীকে সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়েছেন। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে সমঝোতা ও সংলাপের তাগিদ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু খালেদা জিয়া যখন বলেন, শেখ হাসিনা থাকলে নির্বাচনে নেই।

নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না, তখন রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা বাড়ে। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপের মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে নবম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশন। টানা ৮৩ দিন অনুপস্থিতির পর কেবলমাত্র সংসদ সদস্যপদ টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই গত ৩ জুন সংসদে যোগ দেয় বিএনপিসহ বিরোধী দল। ২৪ কার্যদিবসের ওই অধিবেশনে বিরোধী দল উপস্থিত ছিল ২১ দিন। ওই অধিবেশনের আগে কেয়ারটেকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে বিএনপির একজন সংসদ সদস্য মুলতবি প্রস্তাব দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন।

বিএনপি বলছে, সংসদে যেহেতু আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, তাই সংবিধান সংশোধনের বিল সরকারি দলকেই তুলতে হবে। নবম জাতীয় সংসদের ১৮টি অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ৩৯৪টি। এর মধ্যে বিরোধী দল উপস্থিত ছিল ৭৫ দিন। বিরোধী দলীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন ১০দিন। অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ ‘সর্বোচ্চ ছাড়’ দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।

তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে এবং সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে যতটা ছাড় দেওয়া দরকার, আমরা তা দিতে প্রস্তুত আছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংসদ বা সংসদের বাইরে বিরোধী দলের সাথে আলোচনা হতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বস্তুত সংবিধানের বর্তমান ধারা বজায় রেখে সংলাপের মাধ্যমে একটা সমঝোতায় আসতে বাধ্য হবে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারেরও ইচ্ছা নেই একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার। দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় এগিয়ে নেবার জন্য মহাজোট সরকার নির্বাচন চায়।

সেই চাওয়ার প্রত্যাশাকে পূর্ণ করবে বিরোধী দল এই আশাবাদ সকলের।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.