আমার নিশীথরাতের বাদলধারা, এসো হে গোপনে, আমার স্বপনলোকে দিশাহারা
যুগটাই মিডিয়ার। মিডিয়ার বদৌলতে সংবাদ পৌঁছে যায় ঝড়ের গতিতে---ভালো খবর, খারাপ খবর, আশার খবর, আশাভঙ্গের খবর...।
আজ মিডিয়া জানালো তিনি চলে গেছেন--আমাদের কবি শামসুর রাহমান অবশেষে চলে গেছেন...।
কাল নিশ্চয়ই সংবাদপত্র জুড়ে তাঁর খবর বিরাজ করবে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হবে তাঁকে নিয়ে অনুষ্ঠান।
পুরো জাতি নিজেদের মত করে শ্রদ্ধা জানাবে প্রিয় কবির প্রতি, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর ঠিক পরের মুহুর্তে যা দেখলাম, তাকে শ্রদ্ধা নয়, প্রিয় কবির মৃত্যুর সংবাদ বিক্রির চেষ্টা মনে হলো!
লাইফ সাপোর্ট নিয়ে বেঁচে ছিলেন শেষ কটা দিন। তাই অনিচ্ছাতেও মোটামুটি সবাই অনেকটা প্রস্তুত হয়ে ছিলো দু:সংবাদটা শোনার জন্য। মিডিয়া বোধহয় আরো এক কাঠি এগিয়ে। সন্ধ্যা 6:45 এ কবির মৃত্যু, আমি 7 টায় টিভি খুলে দেখি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটের কোরিডোরে একটি টিভি চ্যানেল উপস্থিত।
যেকোন মুহুর্তে যেকোন খবর সংগ্রহ করে তা পরিবেশন করাটা মিডিয়ার দায়িত্ব নি:সন্দেহে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এত সরল ছিলো না। ওই চ্যানেলের পক্ষ থেকে সরাসরি সমপ্রচার করা হচ্ছিলো কবি-পরিবারের শোক-মাতমের দৃশ্য! একজন কাঁদছেন, তার মুখের সামনে ক্লোজ করে ক্যামেরা ধরে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এক মহাবেকুব রিপোর্টার বা উপস্থাপক সারাক্ষন মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে খেলার ধারাবিবরণীর মত চিৎকার করে বর্ণনা দিয়ে যাচ্ছিলো কেমন শোকে আচ্ছন্ন হয়ে আছেন তারা, মাঝে মাঝে ক্রন্দনরত কাউকে কাউকে জোরজারি করে ধরে এনে বলতে বাধ্য করছে কবি কেমন ছিলেন, তাঁর মৃত্যুতে ঐ ব্যক্তির মনের কি অবস্থা, তাঁর সাথে তার কি কি স্মৃতি আছে ইত্যাদি ইত্যাদি! ওই বেকুব উপস্থাপক এও বলছে ডাক্তাররা মানুষজনকে ওই করিডোরে ভিড় না করার জন্য অনুরোধ করেছে, কারন যেহেতু ওটা ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট, ওখানে আরো অনেক মূমূর্ষূ রোগী আছেন--এই জেনেও ঐ বেকুব চেচিয়ে চেচিয়ে ধারাবর্ণনা দিচ্ছে! শুধু ক্যামেরা থাকলে একটা কথা ছিলো, তাই বলে ধারাভাষ্য?!
আমি ভাবছি, একথা সবাই জানি যে শামসুর রাহমানের মত একজন কবি কেবল একজন ব্যক্তি নন, সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের সম্পদ তিনি। তাঁর মৃত্যুর খবর ঠিকঠাক জানার অধিকার দেশের মানুষের আছে কিন্তু মৃত্যুর পরের অন্তত ক'টা মুহুর্ত কি তাঁর পরিবারের মানুষজন নীরবে কাঁদার অধিকার রাখেন না? অন্তত ওই মুহুর্তে তাদের দিয়ে তাদের শোকের কথা না বলালেই কি নয়? ঐ চরম শোকের মুহুর্তেও কি তাদেরকে আরো আঘাত দেবার কোন দরকার ছিলো?
কতখানি মানবিকতাবর্জিত হতে পারে এখানে মিডিয়া???
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।