যদি নির্বাসন দাও.................................................................. আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো আমি বিষ পান করে মরে যাবো! বিষণ্ন আলোয় এই বাংলাদেশ নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ, প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ- এ আমারই সাড়ে তিন হাত তুমি।
আজ সকাল থেকেই একটানা ঝুম বৃষ্টি। বোকা বোকা গাছগুলো কেমন জবুথবু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পার্কিং লটে গাড়ির আয়নায় বৃষ্টির আঁচড়। অবিরাম জল পড়া কার্নিশ বেয়ে।
টুপটাপ। ঠিক যেন আমার প্রিয় দেশের বৃষ্টির আমেজ। কিন্তু কমতিও ছিলো এক জায়গায়। মেঘের কোন গর্জন নেই। মেঘের ডমরুই যদি না বাজলো তবে প্রবল বর্ষণটাও যে বড্ড একপেশে হয়ে যায়।
হৃদয় যদি না কাঁপাবি গুরুগম্ভীর নিনাদে তবে তোর এই বাঁধ ভাঙ্গা কান্নার ঐশ্বর্য্য কি পরিপূর্ণতা পাবে বল? আলোর ঝলকে চোখ ধাঁধিয়ে গেলে তবেই না বলা যাবে 'ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে'। তবুও আমার আজ খুব ভালো লেগেছিলো। উছলে ঊঠেছিল হৃদয়। ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। বৃষ্টির ছাঁট এসে পড়ছিল গায়ে।
হাত বাড়িয়ে মুক্তদানা ছূঁয়ে দেখলাম। আহ কি সুন্দর, কি কোমল পরশ। মনে মনে গুনগুন করে গাইতে লাগলাম-
একটুকু ছোঁয়া জাগে, একটুকু কথা শুনি,
তাই দিয়ে মনে মনে রচি মম ফাল্গুনি।
হঠাৎ মনে হলো এ কি! বর্ষার কোন গান এলো না মনে! হাতড়ে বেড়ালাম স্মৃতির সংগ্রহশালায়। নাহ! যুঁতসই কোন গানই আজ মনে আসছে না।
ব্যাপক খোঁজাখুজি শেষে মনে পড়লো - 'পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে . . .। ' তার রেশ কাটতে না কাটতেই- "বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান। " এবার আমি উল্লসিত হয়ে উঠলাম। প্রিয় গানকে স্মৃতির তলা থেকে উঠিয়ে আনার অব্যক্ত ভালোলাগায় মন ভরে উঠলো। সাথে খুব দু:খও পেলাম।
আহ! বর্ষার প্রথম কদম ফুল! কখন আবার তোমায় হাতে নিয়ে দেখব দু'চোখ ভরে! একবার এই কদম ফুলের জন্যই তো কত না সংগ্রাম করেছি। আমার গ্রামের বাড়িতে একটা দীর্ঘ কদম গাছ আছে। বর্ষায় ফুল ফুলে ভরে ওঠে গাছটা। অনেক উপরে ফোটে তারা। সেই ফুলগুলো ঝড়ে পড়ে বাড়ির আঙিনায়।
বাবা চাইছিলো গাছটা কেটে ফেলতে কেননা ফুলগুলো বাসি হলে দুর্গন্ধ ছড়ায়। কথাটা শুনে আমার বুকটা হুহু করে উঠলো। পুরো বাড়িতে একটা মাত্র কদম গাছ, তাও কেটে ফেলা হবে? মাকে বোঝালাম গাছটা আমার খুব প্রিয়। যদি ওটাকে কাটা হয় তবে আমার বুকের উপর করাত চালানো হবে। মা আমার কষ্টটা বুঝলেন।
তিনি বাবাকে নিবৃত্ত করলেন। রক্ষা পেলো আমার ভালোবাসার কদম্ব বৃক্ষ। আজ আবার সেই কদম গাছটার কথা মনে পড়ে গেল। একটা বৃষ্টি মানুষকে কতই না নস্টালজিক করে দিতে পারে তাই না? অনেকক্ষণ বৃষ্টি দেখলাম দু'হাতে বৃষ্টির পরশ মাখতে মাখতে। দুপুর হয়ে এলো।
এখনো বৃষ্টি থামেনি। আমি রবীন্দ্রসঙ্গীত খুঁজতে লাগলাম কিন্তু মনে হলো আজ শুধু বৃষ্টির গান শুনলে কেমন হয়! একে একে সিলেক্ট করলাম 'বৃষ্টি ঝরে, ঝরে মধুর দানা', 'জানলা খোলা দেখে থমকে দাড়ালো', 'আমার সারাটা দিবস', 'আজ বৃষ্টি নামুক রাগ হবে না' ......। গানগুলো শুনতে শুনতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভেঙ্গে দেখি বিকেল হয়ে গেছে, ঠিক বিকেল বলা যাবে না কারণ এখানে রাতই হয় দশটায়। জানলার কাঁচে তখনও বৃষ্টির সাক্ষী হয়ে থাকা বিন্দু বিন্দু জল।
রাস্তায় তাকালাম। ছাতা হাতে মানুষের চলাচল প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে। চোখে পানির ঝাপ্টা দিয়ে এসে আমিও প্রস্তুত হলাম বাইরে বেরুনোর জন্য। নামতে হবে পথে জীবনের প্রয়োজনে, সুন্দর (!) আগামীর প্রয়োজনে। পেছনে পড়ে রইলো কিছু মুগ্ধ বিস্ময়- কিছু প্রিয় মুহুর্ত- কিছু বেদনাও।
আবার হারায়ে যায়- হেরি চারি ধার
বৃষ্টি পড়ে অবিশ্রাম; ঘনায়ে আঁধার
আসিছে নির্জননিশা; প্রান্তরের শেষে
কেঁদে চলিয়াছে বায়ু অকূল-উদ্দেশ্যে।
----------------------মেঘদূত, কালিদাস
আমিও কেঁদে চলি বায়ুর মতো অকূল উদ্দেশ্যে নি:সঙ্গ, একাকী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।