আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

50তম পোস্ট : একটি এক টাকার আত্মজীবনি

যদি নির্বাসন দাও.................................................................. আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো আমি বিষ পান করে মরে যাবো! বিষণ্ন আলোয় এই বাংলাদেশ নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ, প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ- এ আমারই সাড়ে তিন হাত তুমি।

এই পোস্টটি উৎসর্গ করলাম এস. এম. মাহবুব মোর্শেদ ভাইকে যিনি একটা পোস্ট দিয়েছিলেন "জেনে নিন নতুন ফিচার: অপেক্ষা করুন টেস্ট শেষ হবার"। সেই পোস্টের মন্তব্যে নতুন টিপস শেখানোর জন্য উনি সবার কাছ থেকে এক টাকা চেয়েছিলেন যদিও আমি এক ডলার দিতে চেয়েছিলাম। সেই এক টাকাই আজকের লেখাটার মূল অনুপ্রেরণা। আমি একটি এক টাকার নোট।

অনেক হাত ঘুরে অবশেষে আমি এখন মাহবুব মোর্শেদের ব্যক্তিগত মুদ্রা সংগ্রহশালায়। কিন্তু এ পর্যন্ত আসার আগে আমাকে অনেক চড়াই উৎরাই পেরুতে হয়েছে। অনেক সুন্দর এবং বেদনাদায়ক মুহুর্তের অংশীদার হবার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। আজ আমি আপনাদের আমার ঘটনাবহুল জীবনের সে কাহিনিগুলোই শোনাবো। আপনাদের সে সময় আর ধৈর্য্য হবে তো? আমার জন্ম সিকিউরিটি প্রেসে।

অতপর: আমি ব্যাঙ্কের হাত ঘুরে এসে পড়ি এক সরকারী কর্মচারীর হাতে। প্রথম রাত তার পকেটেই ছিলাম। পরদিন ভোরে অফিসে যাওয়ার সময় তিনি আমাকে সঁপে দেন তার ছয় বছরের তুলতুলে মেয়েটির ছোট্ট হাতে। আমার কড়কড়ে মিষ্টি গন্ধে সে কি উল্লাস তার ! কি কোমল ছিল সেই ছোট্ট হাতের পরশ। ঠিক চেহারার মতোই মিষ্টি।

আমি খুকুমণির সাথে সেদিন স্কুলে গেলাম। সেকি কোলাহল বাচ্চাদের। আমার খুব ভালো লাগছিল সেই কল্লোলের মাঝে হারিয়ে যেতে। কিন্তু দুপুরে যখন খুকুমণি স্কুলের গেইটের দারোয়ানটার কাছে আমাকে জমা দিয়ে যখন আচার কিনলো তখন আমি খুব রাগ করেছিলাম। আচারওয়ালা ট্যাকের মধ্যে গুজেঁ দেয়ার আগে শেষবারের মতো অভিমান ভরে খুকুমণিকে দেখে নিয়েছিলাম।

সেই মুখটা আজো আমি ভুলতে পারিনি। সেদিন বিকেলেই আমি হস্তান্তর হয়ে গেলাম। শুরু হলো আমার যাযাবর জীবন। পুরোটা বললে বিশাল ইতিহাস হয়ে যাবে। তাই শুধুসুখ আর দু:খের ঘটনাগুলোই বলবো।

আমার সুখস্মৃতিগুলোর মধ্যে প্রথম মনে পড়ে ছোট্ট খুকুমণির সাথে কিছুটা সময় কাটানোর মুহুর্তগুলি। এরপর একদিন আমি কালক্রমে গিয়ে পড়েছিলাম এক রূপসীর হাতে। তিনি আমাকে সযত্নে তার বুকের ভিতর লুকিয়ে রেখেছিলেন। কি নরম, স্নিগ্ধ ছিলো সেই স্পর্শ, আমি কখনোই ভুলতে পারবো না। আরেকবার এক রূপসী 101 টাকার বাজি জিতে আমাকে চুমু খেয়েছিলো।

তার গোলাপী লিপিস্টিকের দাগ এখনো আমার বুকের মাঝে লেগে আছে। আর এখন যেখানে আছি সংগ্রহশালায় সেটাও নিরুদ্রপ জীবন। খুব ভালো আছি আমি। কিন্তু সুখের চেয়ে দু:খের স্মৃতিগুলোই বেশি। একবার আমি এক ভিক্ষুকের থালায় পড়েছিলাম প্রায় তিন ঘন্টা দুপুরের গনগনে রোদে।

উফ! সে কি কষ্ট! তিয়াসে আমার বুক ফেটে যাচ্ছিল। আরেকবার ছিলাম এক কসাইয়ের টাকার বাক্সে। মাংসের উৎকট গন্ধে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। ভাগ্যিস সে যাত্রায় এক ক্রেতার হাতে সঁেপ দেওয়ায় আমি প্রাণে বেঁচেছিলাম। এক মাতাল যুবক আমাকে দুমড়ে মুচড়ে ছুড়ে দিয়েছিলো জুয়ার আসরে।

সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। খুব। আর একবার এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল যার নীরব সাক্ষী ছিলাম শুধু আমি। এক পাজি লোকের হাতে গিয়ে পড়ি আমি। সে লোকটা তার দুলাভাইয়ের দোকান থেকে বিস্কুট কিনে।

কিন্তু একটাকা কম দেয়। আমি তখন ছিলাম সেই পাজিটার পকেটে। অতপর কথা কাটাকাটি, একপর্যায়ে হাতাহাতি, মারামারি। দুলাভাইকে আচ্ছামত পিটিয়ে লোকটি মোড়ের দোকান থেকে আমাকে দিয়ে একটা সিগেরেট কিনে শুকটান দিতে দিতে চলে যায়। সেই দোকানে আমি ছিলাম দুইদিন।

পরেরদিন দোকানের বাক্সে থেকেই আমি শুনতে পেয়েছিলাম ওই পাজি লোকটার মার খেয়ে তার দুলাভাইটা মরে গেছে। সেদিন যে কি কষ্ট লেগেছিলো। মনে হচ্ছিল এর জন্য আমিই দায়ী। সামান্য আমির জন্য একটা লোক এভাবে মরে গেলো! আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো। মানুষ যে এতো নিষ্ঠুর হতে পারে আমার ধারণায় ছিলো না।

এরকম অনেক অনেক অভিজ্ঞতার নীরব দর্শক আমি আজ মাহবুব মোর্শেদের সংগ্রহশালায়। এখানে আমি ভালোই আছি। আরো অনেক বন্ধু পেয়েছি দেশ বিদেশের। সবার সাথে গল্প করে দিন কেটে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে নতুন নতুন দর্শক এসে আমাদের দিকে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে।

তখন জন্মটাই সার্থক মনে হয়। ইচ্ছে হয় অনন্তকাল বেঁচে থাকি মানুষের ভালোবাসার মাঝে। ** শেষের দিকের অংশটা প্রথম আলোতে মাস দু'য়েক আগে পড়া একটি সত্যি ঘটনা। এক টাকার জন্য 60 বছর বয়স্ক এক ভদ্রলোক নিহত হন আপন শালার হাতে। তখন থেকেই শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল, জাতি হিসেবে আমারা কি আরেকটু সহনশীল হতে পারি না ?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।