ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের মুজাফফরনগরের সহিংসতার আগুন আপাতত স্তিমিত। অর্ধশত প্রাণ গেছে, প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া। ৩৮টি শরণার্থী শিবির ছেড়ে কোনো সম্প্রদায়ের কেউই এই মুহূর্তে ঘরে ফিরতে রাজি নন। আতঙ্ক, অবিশ্বাস ও সরকারের প্রতি আস্থার অভাব তাঁদের সংকুচিত করে রেখেছে।
উত্তর প্রদেশসহ গো বলয়ে সহিংস পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় সংহতি পরিষদের বৈঠক ডেকেছে।
এর আগে শুরু হয়ে গেছে পারস্পরিক দোষারোপ ও ঘোলা পানিতে মাছ ধরার খেলা।
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ সিং যাদব গত রোববার সহিংসতায় বিধ্বস্ত কাওয়াল গ্রামে যান, যেখানে গোলমালের সূত্রপাত। বিক্ষুব্ধ মানুষ তাঁকে শুধু কালো পতাকাই দেখায়নি, সরকারের প্রতি তাঁদের চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। রাজ্যের যে মুসলিম সম্প্রদায় দেড় দশক ধরে সমাজবাদী পার্টিকে (এসপি) তাদের বন্ধু ও ত্রাতা বলে মনে করে—সহিংসতার পর তারাই ক্ষমতাসীন ওই দল ও মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে।
সমাজবাদী পার্টির প্রতি রাজ্যের মুসলমানদের এই ক্ষোভ ও অনীহার সুযোগ নিয়ে বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) আবার নতুন করে রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসনের দাবি জানিয়েছে।
সম্ভাব্য এই নতুন মেরুকরণে উৎসাহিত কংগ্রেসও। মনমোহন সিং, সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী গতকাল সোমবার মুজাফফরনগরের একাধিক শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। অপরাধীদের কঠোর সাজা দেওয়া হবে বলে দুর্গত ব্যক্তিদের তাঁরা আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে দ্রুত ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করবেন।
মুজাফফরনগরের এই সহিংসতা নিঃসন্দেহে গোধরার পর সবচেয়ে ভয়ংকর।
ভারতে সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে এই সহিংসতা জাতপাত ও সম্প্রদায়ভিত্তিক রাজনৈতিক বিভাজনের নতুন মেরুকরণ করতে চলেছে।
গত শুক্রবার কংগ্রেসের কোর কমিটির বৈঠকে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। কোর কমিটি মনে করছে, সমাজবাদী পার্টির প্রতি উত্তর প্রদেশের মুসলমানেরা আর ভরসা রাখতে পারছেন না। বহুজন সমাজ পার্টি ও কংগ্রেসের মধ্যে তাঁদের ভোট ভাগাভাগি হবে।
কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত, নরেন্দ্র মোদির বিজেপিকে যারা রুখতে পারবে, উত্তর প্রদেশের মুসলমান সম্প্রদায় তাদেরই বেছে নেবে।
প্রচারে তাই এ কথাই বলা হবে, বিজেপির মোকাবিলায় জাতীয় স্তরে কংগ্রেসই একমাত্র যোগ্য দল। ’
ওই নেতা বলেন, পাশাপাশি মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি অতীতে যে একাধিকবার বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজ্যে সরকার গড়েছে, সেই তথ্যও তুলে ধরা হবে।
২০০৯ সালে এই রাজ্য থেকে কংগ্রেস ২২ আসনে জিতেছিল। কোর কমিটির ধারণা, মুসলমানদের আস্থা অর্জন করতে পারলে এবার সেই সংখ্যা বাড়বে।
বিজেপি নিশ্চিত, একদিকে মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা, অন্যদিকে সহিংসতা—দুই কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐক্য উত্তর প্রদেশে তাদের ঝুলি ভরিয়ে দেবে।
কংগ্রেসের দুশ্চিন্তাও ওটাই। অজিত সিংয়ের রাষ্ট্রীয় লোকদলকে ছেড়ে জাট সম্প্রদায় বিজেপির দিকে ইতিমধ্যেই ঢলে পড়েছে।
মনমোহন সিং-সোনিয়া গান্ধী-রাহুল গান্ধীর একসঙ্গে মুজাফফরনগর সফরকে প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ‘ধর্মনিরপেক্ষ পর্যটন’ বলে কটাক্ষ করেছে। দলের আশঙ্কা, গো বলয়ে দেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের সমর্থন কংগ্রেসের দিকে ঢলে পড়লে বিজেপির পক্ষে সেটা ভালো হবে না। সহিংসতার শিকার মানুষের ক্ষতে প্রলেপ লাগানোর চেয়েও রাজনীতির ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চিন্তাতেই আপাতত ব্যস্ত সব দল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।