মানুষ হিসেবে আমাদের মন আজ 2006 এ এসে আধুনিক যুগে বাস করলেও আমাদের শরীরের বায়োলজি এখনও প্রস্তর যুগে পড়ে আছে। আমাদের কোষগুলো বা তাদের জেনেটিক কোডের কোন ধারনাই নেই যে আমরা এখন আর জঙ্গলে শিকার করে বা ফলমুল সংগ্রহ করে বেড়াই না, বরং আমাদের অনেকের সারাদিন কাটে চেয়ারে বসে কম্পিউটার কিবোর্ডে টাইপ করে। এই অসামঞ্জস্যতার একটা ফলাফল হচ্ছে মুটিয়ে যাওয়া, আমাদের শরীরের fat cell গুলোর ইনসুলিন রিসেপ্টর জিন প্রত্যেক ক্যালোরিকে সঞ্চয় করার চেষ্টা করে অথচ এই সহজ সত্যটা ওরা বুঝতে পারছে না যে চর্বি জমিয়ে উপকারের চেয়ে ক্ষতি অনেক বেশী হচ্ছে। আদিম যুগের মতো খাদ্যাভাবে পড়ার কোন সম্ভাবনা নেই সুতরাং জমানো ফ্যাটের সত্যিকার ব্যবহার আসলে দুরাশা। এরকম আরো কিছু সমস্যা আছে প্রকৃতি যাদের সুবিধাজনক সমাধান খুজে পায় নি, যেমন বুড়িয়ে যাওয়া বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ (হার্ট বা লিভার ইত্যাদি) অকেজো হয়ে গেলে প্রাকৃতিক ভাবে প্রতিস্থাপন করা।
গত 2/3 বছরে বেশ কিছু সফল গবেষনার পর মনে হচ্ছে বায়োলজি একটা ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সামনে চলে এসেছে, জীববিদ্যা অচিরেই ইনফরমেশন সায়েন্সের একটা অংশ হয়ে বসবে। জেনেটিক্স নিয়ে আগে কয়েকটি লেখা দিয়েছিলাম যেখানে জেনেটিক কোড, জিন নিয়ে কিছু আলোচনা ছিল 1, 2), যাহোক সংক্ষেপে লিখলে ব্যাপারটা দাড়াচ্ছে এমন যে, মুটিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে বুড়ো হওয়া, বংশগত রোগ, ক্যান্সার, এমনকি ভাইরাসের আক্রমন এগুলোর অনেকগুলোর পেছনে দায়ী আমাদের জেনেটিক কোড, যা আমাদের 23000 জিনে লেখা আছে। জিন গুলোকে ধরা যেতে পারে এক একটি সফটওয়্যার প্রোগ্রাম হিসেবে। আমাদের শরীরের সমস্ত কাজকর্ম নিয়ন্ত্রন করছে এই সফটওয়্যারগুলো, খাবার হজম করা থেকে শুরু করে সন্তান জন্ম দেয়া পর্যন্ত সবই। সমস্যা হচ্ছে বাসায় আমাদের কম্পিউটারের সফটওয়্যারগুলো আমরা কিছুদিন পরপর আপগ্রেড করলেও শরীরের এই সফটওয়্যারগুলো হাজার হাজার বছরেও তেমন বদলানো হয় নি।
তবে এখন বিজ্ঞান অবশেষে জিন আপডেট করার সক্ষমতা অর্জন করেছে, আগামী কয়েক বছরেই সাধারনের জন্য এই প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের সম্ভাবনা খুব উজ্জ্বল। এর মুলে আছে RNA interference মেকনিজম, যা স্পেসিফিক জিনকে বদলাতে পারে। যেমন উপরে উল্লেখিত ইনসুলিন রিসেপ্টর জিনকে বন্ধ করে দেয়া তাতে মুটিয়ে যাওয়া বন্ধ করা যাবে। Joslin Diabetes Center-এ ইদুরের ওপর গবেষনা করে দেখা গেছে জিন পরিবর্তনের পর প্রচুর খেয়েও ইদুরগুলো মোটা হয়ে যায় নি, এবং তাদের আয়ু প্রায় 20% বেড়ে গেছে। এই প্রযুক্তির আরেকটা দরকারী প্রয়োগ হচ্ছে therapeutic cloning বা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে নতুন করে জন্মানো।
আমাদের বয়স যত বাড়তে থাকে অঙ্গগুলোতে তত বেশী জেনেটিক ভুল জমতে থাকে, ফলাফল হিসেবে এদের কাজেকর্মেও ভুল শুরু হয়, আমরাও বুড়িয়ে যেতে থাকি। এখানে যেটা করা যেতে পারে তা হলো, একটু বয়স হয়ে যাবার পর জেনেটিক কোডগুলোকে ভুল শুধরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে renew করে নেয়া। এমনকি আমাদের মস্তিষ্ককেও রিপ্রোগ্রাম করা সম্ভব, বড় কম্পানীগুলো যেমন IBM বেশ পরিমান বিনিয়োগ করেছে এসব গবেষনায়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের প্রাকৃতিক কোডকে বদলানোর ( reprogram) চেষ্টা করা যেতে পারে, যেমন ক্যান্সার প্রতিরোধি কোড যোগ করতে পারি, অথবা বিশেষ ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুবিধাজনক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে। ইনফরমেশন টেকনোলোজির অংশ হওয়ায় একটা সুবিধা হচ্ছে ক্লিনিকাল ট্রায়ালে যাবার আগে কম্পিউটারে পুরো প্রক্রিয়া সিমুলেট করে দেখা যেতে পারে।
তবে তথ্য প্রযুক্তির আরো কিছু সুবিধা ইতোমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে, যেমন 1990-এ ডি এন এ-র প্রতি base pair সিকোয়েন্স করতে খরচ হতো 10 ডলার, এখন তা নেমে এসেছে এক সেন্টেরও কমে, এই খরচ যে আরও কমে যাবে বলা বাহুল্য।
উনবিংশ শতাব্দির শুরুতে ইউরোপে গড় আয়ু ছিল চল্লিশের নীচে, আরা এখন উন্নত বিশ্বে 80র কাছাকাছি, আমার ধারনা organ renew করা যখন সম্ভব হবে তখন এক লাফে মানুষের আয়ু (এবং তারুন্য) অনেক বেড়ে যাবে। সবার জন্য সহজলভ্য হতে হয়তো আরো 20 বছর লাগবে, ততদিন পর্যন্ত কষ্টে সৃষ্টে হলেও বেচে থাকার চেষ্টা করা উচিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।