ভস্ম হই। মৃত্যুর চুমু আমার কপোল ছুঁয়ে যায়। বেঁচে উঠি আবার। নতুন দিনের আশায়। বেঁচে উঠি বারবার।
ইউনিভার্সাল স্টুডিও থেকে বের হয়ে আমরা খুঁজে বের করলাম আলাদীন নামে একটি বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট। শুটকী চিংড়ীর চচ্চড়ী, উস্তা ভাজি দিয়ে, শর্ষে ইলিশ দিয়ে গরম গরম ভাত কতদিন পরে যে খেলাম!
এরপর আমরা গেলাম লস এঞ্জেলসের হলিউড বুলেভার্ড নামের একটা রাস্তায়। এখানে কিছু শপিং মল, বিভিন্ন রকম স্টুডিও রয়েছে। কথিত আছে হলিউড স্টারদের দেখতে পাওয়া যায় এখানের অলিতে
গলিতে। ঢাকায় থাকতে এফডিসির আশেপাশে নায়ক, নায়িকাদের দেখতে আসা ভিড় দেখে বিরক্ত হতাম।
আর এখানে নিজেকে ঠিক একই পরিস্থিতিতে দেখে কপাল চাপড়ে বল্লাম, 'কপাল'!
তখন অনেক রাত, প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। সবকিছুই বন্ধ। তাই ফাঁকা রাস্তা ছাড়া কিছু আর কিছুই দেখলাম না। এরপর পরই আমরা রওনা দিলাম স্যান ফ্র্যানসিসকোর উদ্দেশ্যে। ছ'ঘন্টার রাস্তা।
গাইজার ভাই প্রথম তিন ঘন্টা রাস্তা চালাবেন আর শেষ তিন ঘন্টা আমি চালাবো। আমরা দুজন ম্যাপ দেখে কিভাবে যেতে হবে এসব আলোচনা করে নিলাম। এরপর আমি ঘুম।
ঢাকার লং রুটে কখনও গাড়ি চালাইনি। ঢাকার মত এখানে গাড়ি ভাড়া করলে সঙ্গে ড্রাইভার ফ্রি পাওয়া যায় না।
তাই সব নিজেদেরই করতে হয়। এভাবে ম্যাপ দেখে যাওয়া তাই মূল ভ্রমনের পাশাপাশি আরেকটা অ্যাডভেঞ্চার।
যারা ভীনদেশের দূরপাল্লার রাস্তায় গাড়ি চালিয়েছেন তাদের হয়তো ধারনা আছে এটা কি রকম বোরিং, টায়ারিং আর রিস্কি হতে পারে। স্যান ফ্যানসিসকো যাবার আগের দিন বিশ্রাম হলেও এদিন সারাদিন ঘুরে আমরা সবাই ভীষন টায়র্াড ছিলাম। গাইজার গাড়ি চালাতে গিয়েও তার এই টায়র্াডনেস চলে এসেছিল হয়ত ড্রাইভিং এর মধ্যে।
কোন একটা যায়গায় এসে সোজা রাস্তাটা দুভাগ হয়ে যায়।
সেখানে গাইজার ভাই ভুল অংশটায় ঢুকে পড়েন। ঘন্টা খানেক পরে বুঝতে পারেন যে তিনি ভুল রাস্তায় ঢুকে পড়েছেন। আবার নতুন করে ম্যাপ দেখে আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন।
স্যান ফ্র্যানসিসকো যাবার পথে স্যান্টা ক্ল্যারা নামের একটা শহরে আমার স্ত্রী মৌটুসীর কাজিন সোহান থাকে।
আমাদের প্ল্যান ছিল লস এঞ্জেলস থেকে স্যান্টা ক্ল্যারাতে সেই কাজিনের বাসায় গিয়ে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে পরে স্যান ফ্র্যানসিসকো যাব। কিন্তু রাস্তা ভুল করেই আসলে ভজঘট হয়ে গেল।
সকাল আটটা নাগাদ আমি আর পারছিলাম না। রাস্তায় প্যাটারসন নামের এক শহরে থেমে সবাই ঘন্টা তিনেক একচোট ঘুমিয়ে নিলাম। এদিকে ঘুমুবার আগে আমি গাড়ির হেডলাইট বন্ধ করতে ভুলে গেছি।
তাই ঘুম থেকে উঠে দেখি ব্যাটারী ডাউন, গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে না। ভাগ্য ক্রমে সেখানে কিছু ফায়ার ডিপার্টমেন্টের লোকেরা খাওয়া দাওয়া করতে নেমেছিল। গাড়ি ঠেলে নিয়ে তাদের কাছ থেকে ব্যাটারী চার্জ করে নিলাম। তারপর এক খাবার দোকানের রেস্টরুমে ফ্রেস হয়ে, কাপড় বদলে, খাওয়া দাওয়া করে রওনা দিলাম স্যান ফ্র্যানসিসকোর উদ্দেশ্যে।
ঘন্টা খানেকের মাথায় পৌছে গেলাম স্যান ফ্র্যানসিসকো।
স্যান ফ্র্যানসিসকো শহরটা প্যাসিফিক মহাসাগরের পাড়ে পাহাড়ের উপর অবস্থিত। গ্লোডেন গেট ব্রীজ বলে একটা ব্রীজ আছে সেখানে। এক্স ম্যান থ্রীতে দেখিয়েছে ম্যাগনিটো এই ব্রীজটা ভেঙ্গে আলকাতরাজ দ্্বীপের সাথে সংযুক্ত করে, সেখানে লুকিয়ে রাখা এক বিশেষ শিশুকে ধরার জন্য।
স্যান ফ্র্যাসিসকো শহরের প্রায় পুরোটাই সাগরের তীরে অবস্থিত। চারপাশটা এত সুন্দর যে কি বলব! আমরা ঘুরতে ঘুরতে ব্রীজের উপর উঠে এলাম এক পযর্ায়ে।
একপযর্ায়ে আবিষ্কার করলাম যে আলকাতরাজ দ্্বীপ ভ্রমনের বোটটা পনের মিনিট আগে ছেড়ে গেছে। তখন বাজে বিকেল 6 টা। আমরা সাগরের পাশে বসে একটা হোটেল সী ফুড খেলাম। কাঁকড়া খাবার খুব ইচ্ছে ছিল, কিন্তু ঠিক সাহস করে উঠতে পারলাম না।
তারপর আরো কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি করে রওনা দিলাম স্যান্টা ক্লারার উদ্দেশ্যে।
সেখানে সোহান ভাইয়ের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে ভীষন মজার মজার খাবার দাবার খেয়ে ঘুম দিলাম একটা। পরদিন ভোর 5টায় উঠে রওনা দিলাম বাসার উদ্দেশ্যে। 12 ঘন্টার বিরাট ড্রাইভিং পর্ব শেষে সুস্থ ভাবে পৌছলাম ঘরে। সঙ্গে নিয়ে বিরাট ভ্রমন স্মৃতি আর মুখে নিয়ে পরিচিত শহরে ফিরে ব্যাস্ত হয়ে যাবার তিতে স্বাদ।
(শেষ)
ছবি পরিচিতি
1।
লস এঞ্জেলেসে একটি শপিং মলে
2। স্যান ফ্র্যানসিসকোর একটি ব্রীজ
3। গ্লোডেন গেট ব্রীজ ঢোকার অভিমুখে
4। গ্লোডেন গেট ব্রীজের পাশে আমি ও মেীটুসী
5। গ্লোডেন গেট ব্রীজের পাশে আমরা
6।
গ্লোডেন গেট ব্রীজের উপর আমি ও মেীটুসী
7। গ্লোডেন গেট ব্রীজের পাশের শহর
8। ফিরে আসার সময় একটা লেকের পাশে
9। ফিরে আসার সময় একটা লেকের পাশে আমি ও মৌটুসী
10। ফিরে আসার সময় উইন্ডমিলের পাশে
11।
এটাও ফিরে আসার সময় উইন্ডমিলের পাশে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।