ভস্ম হই। মৃত্যুর চুমু আমার কপোল ছুঁয়ে যায়। বেঁচে উঠি আবার। নতুন দিনের আশায়। বেঁচে উঠি বারবার।
সকাল বেলা ঘুম ভেঙ্গে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। লস অ্যাঞ্জেলসে কিন্তু প্রচুর বাঙালী থাকে। বাঙালী খাবার দোকানগুলোর অবস্থান কোথায় হতে পারে এটা এক পরিচিত বাঙালীর কাছে জেনে নিয়ে সেই রাস্তা বরাবর কিছুক্ষন ড্রাইভ করতেই দেশী নামের একটা রেস্টুরেন্ট পাওয়া গেল। গরম গরম পরোটা, খাসির ঝোল, আলু ভাজি দিতে আহা উহু করে খেলাম আমরা। এই রেস্টুরেন্টে আসার পথে হাইওয়েতে লেন চেঞ্জ করতে গিয়ে আরেকটু হলেই একসিডেন্ট হয়েছিল আরকি।
দোষটা কিন্তু আমারই ছিল।
সকাল বেলা দশটা-এগারোটা নাগাদ আমরা গেলাম ইউনিভার্সাল স্টুডিও। এখানটায় বড় একটা শপিং সেন্টার, কিছু ছবির স্টেজ, থিম পার্ক ইত্যাদি আছে। ছবির যে সেট গুলো তৈরী করা আছে সেখানে একটা ট্রেন রাইড হয়। থিম পার্কে বিভিন্ন ছবির অনুকরনে স্টেজ করা আছে।
প্রথমে গেলাম ভ্যান হেলসিং ছবির অনুকরনে ভুতুড়ে ঘরে। ছবিতে দেখা বিভিন্ন এলিমেন্ট, চরিত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দেখলাম। এত বেশী লোক ছিল যে তেমন ভয় লাগেনি। এক কোনায় দেখলাম এক ভুত বেশী লোক দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকিয়ে আছি দেখে কিছু বলল না।
আমার পিছনের মেক্সিকান মেয়েটিকে লক্ষ্য করে বিকট চিৎকারে ঝাপিয়ে পড়ল, আর মেয়েটি যায় কোথায় - প্রায় দাঁত কপাটি লাগে আরকি। তবে একেবারে শেষ মুহুর্তে দশ ফুট লম্বা ওয়্যারউলফ দৌড়ে আমাকে ধরতে আসছে দেখে যে ভয় পেয়েছিলাম তা ভুলবার নয়।
এরপর গেলাম টার্মিনেটর টু ত্রি ডি দেখতে। ঢাকার ফ্যান্টাসী কিংডমে দেখা ফালতু ত্রি-ডির কথা মনে পড়ে হাসি পেল। গল্পটা তৈরী করা হয়েছে এভাবে।
আমরা দর্শকরা এসেছি সাইবার সিস্টেম কর্পোরেশন পরিদর্শন করতে, যেখানে ভবিষ্যতে মানুষ বিধ্বংসী রোবটগুলো বানানো হবে। দর্শকদের যখন এই কোম্পানীর অসাধারান সব কৃর্তির বর্ণনা দেয়া হচ্ছে ত্রি-ডি মুভি আর সত্যি সত্যি রোবোটের স্টান্ট বাজির মাধ্যমে তখন টার্মিনেটর টু এর মা আর ছেলে আর আরনলড আক্রমন করে সেখানে। সেইসাথে শুরু হয় রোবোটের সাথে মারামারি। কোন কিছু ভাঙলে মনে হচ্ছিল সত্যি সত্যি চোখে মুখে উড়ে আসছে। তুমুল মারদাঙ্গা দৃশ্য, অভিনেতাদের সত্যি সত্যি আশেপাশে দৌড়াদৌড়ি সব কিছু মিলিয়ে অসাধারন ছিল শোটি।
এরপর আমরা গেলাম মামি রিটার্নস ছবিকে কেন্দ্র করে একটি রোলার কোস্টারে। এটার থিম ছিল এরকম। আমরা দর্শকরা ইমেনহোতেপ এর অভিশপ্ত পিরামিডে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঢুকেছি তাই আমাদের শাস্তি হিসেবে রোলার কোস্টারে তোলা হবে। ভীষন ভয়াবহ রোলার কোস্টারে চড়ে আলো আধারির মাঝে বার কয়েক মমি টমি দেখা গেল। ভীষন চিৎকার করতে করতে আবার আমরা ফিরে আসলাম প্লাটফরমে।
ছুটির কারনে ভীষন ভিড়ের সমস্যাটা ততক্ষনে বুঝতে শুরু করেছিলাম। একেক জায়গায় 45-60 মিনিট লাগছিল লাইনে দাঁড়িয়ে ভেতরে ঢুকতে। জুরাসিক পার্কে গিয়ে ব্যাপাটা আরো সিভিয়ার হয়ে গেল। প্রায় দেড় ঘন্টা দাঁড়িয়ে আমরা একটা আসন পেলাম। এটার থিম ছিল এরকম।
ছবির যে দ্্বীপটায় ডাইনোসরগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে আমরা দর্শকরা সেখানে গেছি। একটা জলাশয় ধরে যাবার সময় নিখুঁত ভাবে বানানো ডাইনোসরদের চড়ে বেড়াতে দেখা গেল। কিছু মাংসাশী ডাইনোসর আক্রমন করার জন্য ছুটে এল। শেষে একটা বিরাট ডাইনোসর আমাদের ধরতে মুখ বাড়িয়েছে এরকম একটা আচমকা ভয়াবহ ব্যাপার সামলাতে না সামলাতে নেীকা হুড়মুড় করে পড়ল পানিতে, আর আমরা ভিজে টিজে একশেষ।
ততক্ষনে প্রায় 5টা বেজে গেছে।
আমরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে পরের শো ধরলাম ব্যাক টু দ্যা ফিউচার অবলম্বনে একটা রাইডে। সবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল লেগেছে এই শো টি। এক পাগলা যুবক একটা গাড়ি হাইজ্যাক করে পালিয়ে গেছে, দর্শকদের দায়িত্ব হচ্ছে তাকে ধরে আনা। আটজন আটজন করে একেকটা গাড়িতে বসিয়ে সামনে স্ক্রিন দিয়ে ছবি দেখাচ্ছিল। একই সাথে গাড়ির মোশনের যে সাঙ্ঘাতিক সিমুলেশন যে কি বলব।
গাড়ি চলতে চলতে কাঁচের দেয়াল ভেঙ্গে ঢুকে যাচ্ছে, ডাইনোসরের মুখে ঢুকে যাচ্ছে, পাহাড়ের গায়ে বাড়ি খেয়ে সামনে স্পর্াক করছে, এই সবগুলো ইফেক্ট যে কি রিয়েলিস্টিক ছিল তা ভাষায় প্রকাশের নয়।
এরপর দেখলাম শ্রেক ফোর ডি। ত্রিডি ছবি সেইসাথে সিট গুলোর সিমুলেশন। ছবিতে শ্রেকের গাধা হাঁচি দিলে মুখে পানির ছিটা এসে পড়ে, ক্যামেরা দৌড়ালে চেয়ারও লাফাতে থাকে, ছবিতে হাওয়া দেখা গেলে দর্শকরাও হাওয়া পায়। ভালই ছিল শো টি।
সময়ের অভাবে যেসব যায়গায় শুটিং হয় সেসব জায়গায় ট্রেন ভ্রমন করা হয়নি। 8 রিখটার স্কেলে ভুমিকম্প, আশেপাশে আগুন ধরে যাওয়া, বন্যায় ডুবে যাওয়া এসমস্ত দেখা যায় সেখানে।
রাত 8 টা নাগাদ আমরা বেরিয়ে পড়লাম ইউনিভার্সাল স্টুডিও ছেড়ে।
(চলবে)
ছবি পরিচিতি
1। ইউনিভাসর্াল স্টুডিওর গোলকের সামনে আমরা
2।
মামি রিটার্নস এর এন্ট্রির সামনে মৌটুসী
3। টার্মিনেটর টু শো এর এন্ট্রির সামনে ওয়ালী ও খালেদ
4। কিং কং এর সামনে আমরা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।