জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com
ব্যক্তিগত অথচ সবার জন্য অপ্রয়োজনীয় পোষ্ট, দয়া করে এড়িয়ে যান।
শুধুই সংগ্রহে রাখার জন্য পোষ্ট করলাম, হারাতে চাই না আবেগগুলো।
('প্রথম পাতায় দেখতে চাই না' অপশনটি সচল হওয়া উচিত)
চিঠিগুলো দিনরাত
02.02.1995, গভীর রাত, উমলেজ, সৌদি আরব।
দশমীর নাগপাশ থেকে মুক্ত চাঁদ আজ রাত্রি দ্বিপ্রহর ছাড়িয়ে জেগে উঠলো আকাশের বুক ফুঁড়ে। কেন যেন আজ ঘুম আসছে না আমার।
রাতের প্রথম প্রহর কাটালাম আলাপনে। দ্বিতীয় প্রহর চলে যায় বিছানায় এপাশ-ওপাশ আর মৌন-জাগরণে। নিঝুম এ রাতের পল্লী নীরবতা যেন আরো নীরব হয়ে উঠছে। বালিশের ওপাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া ক্ষুদে পিঁপড়ার পদশব্দ যেন কানে বাজছে- নিঝুম অাঁধারের আতঙ্ক! বাড়ীটির পিছনে কিছুটা বাগান জংলাঘেরা। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকে যেন মধ্যরাত আর টিকে থাকার নয়।
বুকের যন্ত্রণা নিয়ে প্রিয় জগৎটি উপহার দিয়ে যায় শেষ প্রহরের চাঁদটিকে। কত হাসি-রোমান্স আর ব্যাথা-বেদনার হিমেল বরফ পাহাড়সম জমে আছে বুকের কাছের বিশাল পৃথিবীটাতে।
প্রিয়,
বন্ধু, আজরাত তোর সাথে পাশাপাশি শুয়ে শুয়ে শুধুই এপাশ-ওপাশ করছিলাম। ঘুম আর আসছিল না। বুকের জমাট বাঁধা বরফ বাষ্প হয়ে বেরিয়ে আসছে নিশ্বাসের সাথে।
তোকে ডেকে বল্লাম ঃ দোস্ত, এই. . ., তুই ফিরে তাকিয়েছিলি। অন্ধকারে তোর চোখ-মুখ দেখে ঠিক বুঝতে পারছিলাম না তুই কি ঘুমিয়েছিলি এতক্ষণ না আমাকে অনুসরণ করছিলি।
তুই শব্দ গোছালি ঃ কিছু বলেছিস . . .? আমি বল্লাম ঃ ঘুম আসছে না, চল বাইরে যাই। তুই কথা না বাড়িয়ে উঠে দরজা খুলে বেরিয়ে এলি, আমিও তোকে অনুসরণ করলাম। তারপর অন্ধকারে হারিয়ে গেছি দু'টি সুবোধ প্রাণ।
হঠাৎ পাশ ফিরতেই টেবিল ঘড়ির এলার্ম ক্রিং ক্রিং শব্দে ঘুম ভাঙ্গার গান গেয়ে চলল। পাশটাকে উল্টো করে ওটাকে বন্ধ করে উঠে বসলাম। খানিক চোখ কচলে বুঝতে পারলাম, আমার জীবনের সব স্বপ্ন শুধুই স্বপ্ন হয়ে থাকে। কল্পনার তৈরী বিশাল . . . 'র পৃথিবীটাকে বিবেকের ভূমিকম্প ভেঙ্গে কাঁচের টুকরোতে পরিণত করলো।
কেমন আছিস্ দোস্ত? তোর একটি পত্র পেয়েছিলাম ক'দিন আগে, এটা আমার বন্ধুমহলের দ্বিতীয় চিঠি।
লিখেছিলি- তোর লেখার মূল্যায়ণ করে থাকলে কাছে অবশ্যই জবাব পাঠাবো। তোর চিঠির মূল্যায়ণ আমার হৃদপিণ্ডের মাঝে যদি কোন ধড়্ক থেকে থাকে; তো সে-ই করেছে, বাহ্যিকভাবে সেটা আমি তোকে দেখাতে পারিনি।
তোর কাছে আমি চেয়েছিলাম, মনে পড়ে, যখন ঢাকায় গিয়েছিলি, তখন বুড়িগঙ্গার ব্রীজে ছ'ঘন্টা কাটিয়েছিলাম। বিকেল চারটার ঘরে ফেরা রৌদ্রালোকের মাঝে একটি রেলিং ধরে বসেছিলাম, তারপর তুই হয়তো সেথায় ছিলি আর আমি চলে গেলাম আমার কল্পনায় কল্পিত সেই মিথ্যে আশাতীত জগতটাতে। তারপর আমাদের থেকে অনেক নীচে বয়ে যাওয়া নদীর জলের মতই বয়ে যেতে লাগলো সেদিনের সবুজ মনের কষ্টগুলো, আমিও দেইনি কোন বাধা, সে সাধ্য আমার কি কখনো ছিল?
প্রসঙ্গ পাল্টাই, কি বলিস? তোকে কি করে যে এ প্রশ্ন করবো, ভেবে পাচ্ছি না।
আসলে বন্ধু হিসেবে তোর কাছে আমার অযোগ্যতার শেষ নেই আর। আমি জানি, দুঃসময়েই বন্ধুত্বের পরিচয়। আমি তো ছিলাম তোর সুসময়ের বন্ধু; বসন্তের কোকিল। দুঃসময়ে শুধুই রঙিন পত্র ধরিয়ে দিয়েছি হাতে, বন্ধুত্বের কোন দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। তাই আজ লজ্জিত বদনে জিজ্ঞাসিলাম ঃ কেমন দিয়েছিস্ পরীক্ষা?
তুই যদি ঢাকায় যাস্ তো সেই আটপৌড়ে জায়গাটাতে-মনে আছে, যেখানে আমাদের সাথে থেকেছিলি দু'টি রাত-যাস্ তো একবার।
আমার মাকে একটু দেখে আসিস্, আমার জন্য খুব কান্না করছেন। জানিস্ তো আমার একটি বড়লোক বন্ধু ছিল। বাংলাদেশ ছাড়ার পূর্বে যার ক'টি ফুল আর বিদায়ী শুভেচ্ছা আশা করেছিলাম মনে-প্রাণে; সেও গিয়েছিল সেখানে। আচ্ছা, . . . 'র সাথে এখন তোর সম্পর্ক কেমন?
আমি ভাল . . ., তুই কেমন আছিস্? খালাম্মাকে সালাম বলিস্। আর ভাল থাকিস্।
-তোর বন্ধু।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।