আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিবির ক্যাডারদের রগকাটা রাজনীতি : অস্থির করে তুলছে শিক্ষাঙ্গন

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

শিবিরের ক্যাডাররা পরিকল্পিতভাবে আবারও দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অস্থির করে তোলায় লিপ্ত হয়েছে। তাই চালাচ্ছে নৃশংস কর্মকা-। তারা প্রতিপক্ষের ছাত্রনেতাদের হাত-পায়ের রগ কেটে দিচ্ছে। কান কেটে নিচ্ছে।

গত কয়েক দিনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে কলেজ ক্যাম্পাস পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের নেতাদের ওপর তারা বর্বরোচিত এসব তা-ব চালাচ্ছে। এর আগে তারা বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তারের জন্য তা-ব চালায়। তাদের তা-ব থেকে সাংবাদিকও রেহাই পাচ্ছে না। তবে পুলিশ কর্মকতাদের দাবি, প্রত্যেকটি ঘটনার তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সাতক্ষীরার কলারোয়ায় সংবাদ প্রতিনিধি আবদুর রহমানকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করে।

গত ২০ আগস্ট এই ঘটনা ঘটে। থানায় মামলার পরও পুলিশ রহস্যজনক কারণে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, কলারোয়া থানার ওসি আসামিদের ধরার চেষ্টাও করছে না। বিষয়টি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে আইজিকে জানানো হয়েছে। এরপরও আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।

আমাদের সিলেট প্রতিনিধি জানান, ২৩ আগস্ট শুক্রবার রাতে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) ছাত্রলীগ নেতা ও ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র রুহুল আমিনের ওপর হামলা চালায় শিবির ক্যাডাররা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে শিবির ক্যাডাররা তাকে গুরুতর আহত করে ফেলে যায়। তার হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। প্রথমে তাকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাতেই তার শরীরে অস্ত্রোপচার হয়। পুলিশ এ ঘটনায় ৯ শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।

গত ২৪ আগস্ট শনিবার ভোর রাতে সিলেট নগরীর নয়াবাজার এলাকার শিবির নিয়ন্ত্রিত একটি মেস ও পার্শ্ববর্তী সোনালী আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় মওদুদী ও গোলাম আযমের লেখা বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই, শিবিরের লিফলেট, পোস্টার ও ফেস্টুন উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- শাহ আলম, রফিকুল ইসলাম, আজিজুল হক, আলমগীর কবির, সাবি্বর আহমদ, রহমত উল্লাহ, শিহাব উদ্দিন, সেলিম আহমদ ও আবু হাসনাত মোস্তফা। এদের মধ্যে ৬ জন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বাকিরা বহিরাগত।

জালালাবাদ থানার ওসি গৌছুল হোসেন জানান, পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে শিবির নিয়ন্ত্রিত একটি মেস থেকে এদের গ্রেফতার করে। ছাত্রলীগ নেতা রুহুল আমিনের ওপর হামলায় জড়িত সন্দেহে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, গত ২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম তৌহিদ আল হোসেন ওরফে তুহিনের হাত ও পায়ের রগ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় শিবিরকে দায়ী করেছে ছাত্রলীগ। এছাড়াও আরও এক ছাত্রলীগ নেতা গুরুতর আহত হয়েছেন।

তুহিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাতেই ঢাকায় নেয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রলীগ কর্মীরা জানিয়েছেন, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমীর আলী হলে ছাত্রলীগের আলোচনা সভা ছিল। ওই কর্মসূচি শেষে করে রাত ১০টার দিকে পাঁচ-ছয়জন নেতাকর্মীসহ মাদার বখশ হলের দিকে যাচ্ছিলেন তুহিন। এ সময় তিন-চারটি মোটর সাইকেলে ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায। অন্ধকারে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তুহিনের ডান হাত ও বাম পায়ের রগ কেটে দেয়।

তাদের অস্ত্রের আঘাতে তুহিনের ডান কানের কাছে বড রকমের জখম হয়েছে। একই সময গুলি করে এবং ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। তাদের ছোড়া গুলি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক শাওনের ডান বাহুতে লাগে। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তুহিন ও শাওনকে সরাসরি হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তুহিনের ডান হাতের কবজি ও দুটি আঙুল কেটে ফেলা হয়েছে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে অস্ত্রের ক্ষত-বিক্ষত চিহ্ন রয়েছে। রাতেই তাকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়। ছাত্রলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান দাবি করেন, 'রাতের অন্ধকারে শিবিরের নেতাকর্মীরা তুহিনের ওপর হামলা চালিয়ে তার হাত পায়ের রগ কেটেছে। ' বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তারিকুল হাসান ঘটনার পরপর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তারা ঘটনাটি শুনেছেন।

এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম তৌহিদ আল হোসেন তুহিনের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়ার ঘটনায় সন্দেহভাজন ১৩ জনকে আটক করেছে মহানগরীর মতিহার থানা পুলিশ। রাবি সংলগ্ন মেহেরচন্ডি, বুথপাড়া, কাজলা ও বিনোদপুরসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদের আটক করে। এদিকে, ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তরের পর শুক্রবার সকালে তুহিনের আরও একটি জরুরি অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। এর পরপরই তার জ্ঞান ফিরেছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সঙ্গে থাকা রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারদিন।

আমাদের রংপুর প্রতিনিধি জানান, গত ১১ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে ছাত্র শিবির কর্মীরা রংপুর কারমাইকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোশারফ হোসেনের ওপর হামলা চালিয়ে তার দুই পা এবং ডান হাতের রগ কেটে দিয়েছে। দুপুর ২টায় কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। পরে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে অবস্থার অবনতি ঘটলে ছাত্রলীগ নেতা মোশারফ হোসেনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর ২টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা মোশারফ হোসেন কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির কাছে সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলার সময় ছাত্র শিবির কর্মীরা ৫/৬টি মোটরসাইকেলযোগে সেখানে এসে অতর্কিতভাবে ছাত্রলীগ নেতা মোশারফ হোসেনের ওপর হামলা চালিয়ে তার দুই পা এবং ডান হাতের রগ কেটে দেয়। শিবির কর্মীরা তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় মোশারফ মারা গেছে মনে করে শিবির কর্মীরা বীরদর্পে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যায়। যাওয়ার সময় ছাত্র শিবিরের কর্মীরা শিবিরের পক্ষে সেস্নাগান দিতে দিতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। মোশারফ হোসেন কারমাইকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্র।

তার বাড়ি নীলফামারী জেলার সদর উপজেলার কচুয়া গ্রামে। বাবার নাম ছবির উদ্দিন। পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, এর আগেও বিভিন্ন সময় জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম মহসিন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তারের নামে সহিংস তা-ব চালিয়েছে। ক্যাম্পাসে একমাত্র শিবির থাকবে এমন চিন্তা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তা-ব ও নৃশংসতা চালিয়েছে। তাদের দৌরাত্ম্যে অনেক প্রগতিশীল ছাত্রনেতা এখনও পঙ্গুত্ব বরণ করছে।

অনেকেই মারা গেছে। খোদ মহাজোট সরকারের আমলে রাজশাহীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিবির তা-ব চালিয়েছে, এখনও চালাচ্ছে। '৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে আজ পর্যন্ত শিবির ক্যাডারদের তা-ব চলছে। ছাত্রনেতা ছাড়াও সাংবাদিকরাও শিবিরের তা-ব থেকে রেহাই পাচ্ছে না। সম্প্রতি জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা সাতক্ষীরার কলারোয়ায় সংবাদ প্রতিনিধির ওপর হামলা চালিয়েছে।

এই ঘটনায় মামলা দায়ের করার পরও কলারোয়া থানা পুলিশ উল্টো শিবিরের পক্ষ নিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করছে না। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, জামায়াত-শিবিরের নৃশংসতার প্রত্যেকটি ঘটনা তদন্ত চলছে। আসামিদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করেছে। সু্ত্র

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.