আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেমন বেনী তেমনি রবে, চুল ভেজাবো না !

সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার

একজন সাধারন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পবিবারে মা। এক ছেলে এক মেয়ে। পরিবারটি ধার্মিক, সেইসাথে শিল্পসাহিত্যেরও অনুরাগী। মেয়েটি ছোট, দশ বছর বয়েস। গান শেখে, মায়ের সখ, তার নিজেরও ভালো লাগে।

বেশ ভাল গান করে। খুব শান্ত স্বভাবের, নানা প্রশ্নের জোয়ারেও ছটফটে নয়। ছেলেটি দু'বছরের বড়। দুরন্ত বেশ, তবে প্রতিভাবান। পড়াশোনায় ভাল, তবে মনযোগী নয়।

সকালে ওস্তাদজী এসে আরবী ও কোরান শিখিয়ে যান, বিকেলে আসেন তবলা টিচার। একসময় ওস্তাদজী জানলেন ছেলেটা তবলাও শিখে। বললেন তবলা শেথা ভাল নয়, ধর্মমতে নাজায়েজ। ছেলেটি মাকে ওস্তাদজীর আপত্তির কথা জানালো। মা তেমন না ভেবেই বললেন, ওস্তাদজী ঠিক বলেননি, বাজে কথা বলেছেন।

ছেলে কিছুটা সময় চুপ থেকে বললো, যদি তুমি জান ওনি বাজে কথা বলেন, তাহলে জেনেশুনে আমাকে কি করে এমন একটা লোকের কাছে প্রাতদিন পড়তে পাঠাও ? বর্ণনার শেষ এখানেই। মায়ের এখানে করনীয় ছিল কি ? ধর্মমতে গানবাজনা নিষেধ। বিভিন্ন হাদিসের উদৃতি দিয়ে মওলানা সাহেবরা তাই বলে থাকেন। একজন সত্যিকারের ধার্মিকের তো তা পালন করা দরকার। আর তা করতে হলে তো গান-বাজনা করা না শোনা সবই বন্ধ করে দিতে হয়।

সম্ভব কি তা ? আমার মনে হয় না। এই ব্লগে যারা কঠোর ধর্মপন্থী, তারাও সবাই গানবাজনার এমনকি সিনেমারও অনুরাগী। তারা নিজেরাও এ নিয়ে এখানেই অনেক আলোচনা করেছেন। তারা ভুল করছেন না ঠিক করছেন, তা আমার আলোচ্য বিষয় নয়। শিল্পরস আস্বাদনের পাশাপাশি ধর্মপালন তাদের নিজস্ব ব্যাপার।

কিন্তু তাদের অনেকের যে বক্তব্য, ইসলাম জীবন ধারনেরও পথ, এবং সে পথ চৌদ্দশো বছর আগেই ঠিক করা রয়েছে, সেখানেই কিছু বলার আছে আমার। প্রত্যেক সমাজেরই নিজস্ব একটি চরিত্র রয়েছে। ধর্ম ও সামাজিক চরিত্র পরস্পরের সাথে নিবিড় ভাবে জড়িত। এমনকি তার প্রভাবে ধর্মপালনের মূল ধারাও সবসমাজে এক নয়। আমি ইস্তাম্বুলে দেখেছি, আমাদের দেশের চেয়ে অন্যভাবে পড়ানো হয় ঈদের নামাজ।

ঈদ পালন করা হয় অন্যভাবে। সব দেশেই ধর্মভিত্তিক সামাজিক নিয়মগুলোও অন্যরকম। কারন একটাই, কোরানের ব্যখ্যা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে হাদিস। তা সৃষ্টির সময় শুধু কোরানকেই সামনে রাথা হয়নি, সামাজিক চরিত্রের প্রভাবও এতে পড়েছে। অর্থাৎ কোন না কোনভাবে সমাজের চরিত্রকে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে।

সমাজের চরিত্রকে স্বীকার করে নেয়া যায়, আর সময়কে স্বীকার করে নিতে এত আপত্তি কেন আমাদের? সময়কে স্বীকার করা দরকার। আমরা সবাই করছি। যারা গোড়া ধার্মিক, তারাও দুদিন পরে হলেও করছেন। শুধুমাত্র তা প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিতেই তাদের এত আপত্তি। মূল ধর্মবোধকে অপরিবর্তিত রেখে সমাজ ও সময়কে স্বীকার করে নেয়ার মতো জরুরী বিষয়কে অস্বীকার করার কারনেই যে সহজ প্রশ্ন নিয়ে আমার অবতারনা, তার সঠিক উত্তর খুজে পাওয়া এত দুরুহ।

আমরা তা করছি না, বরং ধর্ম, সমাজ, রাস্ট্র, শিা, বিজ্ঞান মিলিয়ে যে জগাখিচুড়ী আমাদের ভেতরে, তাতেই পিছিয়ে পড়ছি পৃথিবীর বুকে প্রতি পদে পদে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।