'... আমাদের আশার কোনো পরকাল নাই'
কানসাট আন্দোলনের নেতা গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে বিােভ দেখিয়েছে তারই কর্মীরা। খবরটি শুনে অনেকেই জানতে চেয়েছেন, আসলে বিষয়টি কী? অনেকে মন্তব্য করেছেন, কানসাটে কি তাহলে রাব্বানী বিরোধীরা জেগে উঠলো? কিন্তু আমার বারবার একটি কথাই মনে হয়েছে। শঙ্কা জেগে ওঠা সেই প্রশ্নটি ঠিক প্রশ্ন নয়। অনেকটা স্বগোতক্তির মতো বারবারই আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে : তবে কি জনতার বিজয় ছিনতাই হয়ে গেলো?
ইতিহাসের অংশ হয়ে যাওয়া কানসাট আন্দোলনের আগুনঝরা কয়েকটি দিন আমি সেখানে কাটিয়েছিলাম সংবাদ সংগ্রহের কাজে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিক আমিনুল ইসলামের মোটরসাইকেলের পেছনে চেপে এলাকায় ঘুরেছি আর অবাক হয়ে ভেবেছি- একটি আন্দোলন কীভাবে বদলে দেয় মানুষগুলোকে? নিজের চোখে দেখেছি সেইসব বদলে যাওয়া, অনুভবও করেছি।
পুলিশের গুলিতে মানুষ মরেছে পাখির মতো। তারপরেও সেইসব মানুষের মধ্যে কোথাও আমি ভয়ের লেশমাত্র খুঁজে পাইনি। যা পেয়েছি তা হলো স্ফূলিঙ্গের মতো সবকিছু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়ার তীব্র আকাঙ্া। সেই আকাঙ্াগুলোকেই একটি আঙুলের ইশারায় আমি নিয়ন্ত্রিত হতে দেখেছি। সেই আঙুল গোলাম রাব্বানীর।
কয়েক বারই কথা হয়েছে তার সঙ্গে আমার। প্রত্যেকবারই কথা বলেছি আর আশা করেছি, গোলাম রাব্বানী শুধু কানসাটে নয়, সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ুক। নওগাঁ আমার জন্মস্থান, আমার দাদা-নানা-বাবার বাড়ি। সেখানে যখন পল্লী বিদু্যতের অনিয়মের প্রতিবাদে আন্দোলন গড়ার চেষ্টা চলছিলো, তখন সেই আন্দোলনে অংশ নেয়া আমার এক বন্ধু ফোনে একদিন আমাকে বলেছিলো, ইশ, আমরা যদি একজন গোলাম রাব্বানী পেতাম! আমি জানি না, গোলাম রাব্বানীর একেবারে হাল আমলের খবর শুনে সে কি এখনও একজন গোলাম রাব্বানী পেতে চায় কি না। প্রতিবার গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে কথা বলার সময় যে আমার মনে হতো এই মানুষটি ছড়িয়ে পড়ুক সারাদেশে, সেই আমি আবার যদি কোনোদিন তার সঙ্গে কথা বলতে চাই, তাহলে আবার সেই কথা মনে হবে কি না তাও আমি জানি না।
কেনো এমনটি হলো? যে মানুষটির একটি কথায় হাজার হাজার জনতা গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছে, সেই মানুষটি কেনো বিতর্কিত হয়ে যাচ্ছেন? একটু পেছনে ফিরে যাই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে ক্যাম্পাসে 'সাধারণ' শিার্থীদের অধিকার আদায়ের নানান আন্দোলনে যখন অংশ নিয়েছি, তখন দেখেছি, কেমন করে যেনো আন্দোলনের সুফলটি ইসলামী ছাত্র শিবির তাদের ঘরে নিয়ে চলে যায়। একবার দু'বার নয়, অসংখ্যবারই এমন হয়েছে। বড় সংগঠন গিলে খেয়েছে আন্দোলন, কখনো কখনো আন্দোলনের বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে শিাথর্ীদের কাছ থেকে। প্রশাসনও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে।
নানা সময়ে নানা কায়দায় করা হয়েছে কাজটি। কিন্তু একটি েেত্র সবসময় একই কৌশল থাকতো, সেটি হলো আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া তথাকথিত 'অ-রাজনৈতিক সাধারণ' শিার্থীদের ম্যানেজ করে ফেলা। ম্যানেজের কায়দাও অনেক। এই ক্যাম্পাসে আমি এমন দু'জনকে চিনি যারা এখন বড় দু'টি ছাত্র সংগঠনের নেতা। এই দু'জন তথাকথিত 'অ-রাজনৈতিক' আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
তাহলে কি কানসাটের গোলাম রাব্বানীও সেই পথেই চলেছেন। তা তো চলবেনই। বিদ্যমান যে অর্থনৈতিক, সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা তাতে তো নেতৃত্ব মানে জনগণ নয়। এখানে নেতৃত্ব মানে টাকা, ক্যাডার আর দুর্নীতি। জয় হোক আমাদের নেতাদের!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।