পুরো আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস জুড়েই এই রোদ্দুর, এই মেঘলাকাশ, এই বৃষ্টি। গ্রীষ্ম-হেমন্তে প্রতি সপ্তাহ শেষেই কান্ট্রি কটেজে যাওয়া পড়ে। প্রতি বছরের এই মৌসুমে টুকটাক কাজকর্ম লেগেই আছে। এক চিলতে জমির ওপর সবজি, ফলমূল প্রভৃতি রোপণ এবং বাগানের এর পরিচর্যা তো আছেই। সপ্তাহ দু’য়েক আগে বলতে গেলে ছুটির দুটো দিন প্রায় কটেজে বসেই কাটিয়েছি।
ঘন ঘন বৃষ্টির দরুণ সমস্ত কর্ম লাটে উঠে গিয়েছিল। কি আর করার! পরিকল্পনা সব ভেস্তে গেল!! আমরা বঙ্গদেশীয় সন্তান। টিনের চালে ঝুমঝুম ছন্দের তালে বৃষ্টি আর খিচুড়ি ভোজন সাথে কালী জিরা ভর্তা হবে না। তা কি করে হয়!!! এই রোদ বৃষ্টির ফাঁকে ফাঁকে বৃষ্টিস্নাত উদাস মনে ক্লিক ক্লিক।
ছেলেবেলায় আমাদের একান্নবর্তী পরিবারের উঠানে এবং চারপাশে কত ই না ফল-ফুলের গাছ ছিল।
আম, জ্যাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, আতা, বরই, তেতুল, সফেদা, লিচু, শিউলি, হাসনাহেনা, জুঁই, কামিনী, গন্ধরাজ, গ্যান্দা, গোলাপ, চাঁপা, চন্দ্রমল্লিকা সহ আরও নাম না অনেক বিদেশী ফল-ফুলের গাছ। জনবিস্ফোরণ, ব্যবসা-বানিজ্য ও কলকারখানার প্রসারে মনের বাগানকে উপড়ে ফেলতে হয়েছিল। আমাদের মত মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকদের জন্য বাড়ির চতুর্পাশের অব্যবহারিক মৃত্তিকায় বা ছাদে একটি মনের বাগান করে রাখা সাধ্যাতীত নয়। তবে আলস্য একটা অন্তরায় এবং বাড়ির চারদিক সুশ্রী এবং স্বাস্থ্যজনক করে রাখা তেমন অত্যাবশ্যক বলে ধারণা না থাকায় তার জন্য দু’ পয়সা ব্যয় করতে আমরা কাতর বোধ করি।
আমার মনে বৃষ্টি লেগে আছে গত কয়েক রাত থেকেই।
কিছুতেই যাচ্ছে না। মাথার ভেতর মন ভিজিয়ে ক্রমাগত পড়ে যাচ্ছে টুপটাপ ঝিরঝির বৃষ্টি। এখনও আকাশে কিছু কিছু মেঘ। মাঝে মাঝে একটু আধটু রোদ, আবার ঝিরঝির বৃষ্টি। এই চলছে।
এমনিতে বৃষ্টি হলেই আমার মন একটু খারাপ হয়ে যায়। আসলে, ঠিক খারাপ না। আনমনা উদাস একটা ভাব। আসলে যেটিই হোক, বাংলা ভাষা-ভাষীদের মতো এ বৃষ্টিকে এতো আবেগ -এতো হৃদয় দিয়ে বিশ্বের আর কোন ভাষার লোকেরা অনুভব করতে পারে কিনা আমার সঠিক জানা নেই। আমাদের কথা-সাহিত্যে, কবিতায় এমনকি গানে-নাটকে-কথক নৃত্যে অপরূপ অঝর “বৃষ্টি” বন্দী হয়েছে বিভিন্ন অবয়ব নিয়ে-অনেক যত্নে-অনেক মমতায়।
বৃষ্টির শব্দ প্রায়ই ছন্দ মেনে চলে। গানের সুরের মতো। বৃষ্টির দূত বা ‘হেরল্ড’ যাই বলিনা কেন, তার নাম মেঘ । মেঘ ছাড়া বৃষ্টি হয় না। আবার সব মেঘে বৃষ্টি হয় না।
কোন কোন সময় মেঘের নাম ছায়া। কোন সময় তার নাম তুলা নয়তো ভেলা।
ছেলেবেলায় শহরে যেমন বৃষ্টি দেখতাম, তেমন ঘনিয়ে বৃষ্টি বোধয় এখন হয় না। বৃষ্টির তেমন সমারোহ নেই যেন, বৃষ্টি এখন যেন ইকনমিতে মন দিয়েছে – কোনরকম করে জল ছিটিয়ে চলে যায়। আগেকার মতো সে বজ্র বিদ্যুৎ বৃষ্টি বাতাসের মাতামাতি দেখি নে।
আগেকার বৃষ্টির একটা নৃত্য ও গান ছিল, একটা ছন্দ ও তাল ছিল – এখন যেন প্রকৃতির বৃষ্টির মধ্যেও বয়স প্রবেশ করেছে, হিসাব কিতাব ও ভাবনা ঢুকেছে, শ্লেষ্মা শঙ্কা ও সাবধানের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। সে আমারই বয়সের দোষ। সকল বয়সেরই একটা কাল আছে,আমার সে বয়স গেছে হয়তো।
অশোভনতার মধ্যে বাস করলে নিজের প্রতি তেমন শ্রদ্ধা থাকে না, নিজের চতুর্দিক নিজেকে অপমান করতে থাকে আর সুখ-স্বাস্থ্যের তো কথাই নেই। আমরা যেমন প্রতিদিন জলে শরীর অবগাহন করি এবং শুভ্র বস্ত্র পরিধান করি তেমনি বাড়ির চারদিকে যত্নপূর্বক একফালি বাগান করে রাখা ভদ্রপ্রথার একটি অবশ্যকর্তব্য অঙ্গ হওয়া উচিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।