আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্ন দেখেছি যে তুমি তোমার বাস্তবতা হারিয়ে ফেলেছো...
দীর্ঘ সাড়ে পাচ বছর পর আজ ভাবলাম প্রোফাইল বৃত্তান্ত বদলানো উচিত। অনেক বার ভেবেছি--অনেক কিছু নিয়ে- অনেক ভাবে লিখতে চেয়েছি। । পারিনি। হয়ে উঠেনি।
আলসেমি, ভাবালুতা, অকর্মণ্যতা, অপারগতা-- নানাবিধ বহুবিধ কারন কিংবা অকারনে। যাই হোক- সামহয়্যার ইন আমার জীবন বদলে দিয়েছে। কিভাবে দিয়েছে সেই গল্প আরেকটু সময় নিয়ে লিখতে চাই। আজ আমি যেখানে বসে লিখছি -- সেই জায়গায় বসে লিখার সৌভাগ্য হয়েছে যার বদন্যতা কিংবা উদারতায় তার সঙ্গে আমার পরিচয় সামহয়্যার ইন এর সুত্রে। তাই আরেকটু সময়, মনোযোগ, গভীরতা প্রাপ্য সেই লেখাটার।
আপাতত অন্যকথা। কিছু ডিসক্লেইমার দেয়া উচিত শুরুতেই। আমি ভেবেছি, এমনকি সবসময় ভাবি সামহয়্যার ইন হবে আমার জীবনের এপিটাফ, ছিন্ন পাতার তরণী। আমার জীবনের পরবাস কিংবা নিজ দেশের অভিজ্ঞতাগুলোকে, ভাবনা গুলোকে সাজানোর প্লাটফর্ম। তাই যা লিখি কিংবা লিখবো তা নিত্যান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত।
মাফ করবেন; শিরোনামের সাথে আপাত ভাবে অসংগতিপূর্ণ প্যাচালের জন্য।
যাই হোক, সেল ও মলিকিউলার বায়োলজিতে পিএইচডি'র সুত্র ধরে আজ আমি ওয়াশিংটন ডিসি তে। ডিপার্টমেন্টের আমার ল্যাব এর জানালার কাঁচ দিয়ে দেখা যায় পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর পার্লামেন্টারিয়ানদের আলোচনার স্থান ক্যাপিটাল হিল বিল্ডিং। কাজ করতে গিয়ে হটাত সে দিকে চোখ পড়লে ভাবি এই মুহুর্তে হয়তো কিছু পলিসি ওখানে আলোচিত হচ্ছে যা হয়তো পৃথিবীর আগামী দিনের সময়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করবে। সেই সাথে এও ভাবি-- কোথাকার কে আমি--যার ছোট বেলায় পড়ার সংগী ছিলো হারিকেনের আলো আর মাটিতে বিছানো পাটি -সেই আমি আজ এমন এক জায়গাতে যেখানে আমি যে আকাশ দেখি, যে বৃষ্টি দেখি, জোছনা দেখি কিংবা যে বাতাসে শ্বাস নেই -- একই ভুগোলে হোয়াইট হাউসে বসে একই জোছনা কিংবা রোদ-বৃষ্টি দেখছেন পৃথিবীর অন্যতম আলোচিত এবং ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট।
মাফ করবেন এই রকম বাহুল্য ভাবনার জন্য। নিত্যান্তই ব্যক্তিগত। (ডিস্ক্লেইমার দ্রষ্টব্য)। :-)
এইখানে আসার পর সবসময় ভাবি- আমার আচরন কিংবা লাইফষ্টাইলেই এখানকার মানুষদের মনে আমার দেশ সম্পর্কে ধারনার জন্ম দেবে। তাই এ বিষয়ে সর্বদা সচেতন থাকি।
যদিও প্রায়শই কেও আমাকে ইন্ডিয়ান ভেবে ভুল করে। এমন কি আমার দেশ বাংলাদেশ বললেও ভাবে এইটা ইন্ডিয়ার অংশ। আমি অত্যন্ত সচেতন এবং সযতনে ওদের এই ভুলটা ভাঙ্গিয়ে দেই।
এই যেমন আমি যেই প্রফেসর এর টিচিং এসিসটেন্ট সেই ভদ্রমহিলা (মহিলা না বলে ইয়ং লেডি বলা উচিত )পড়াশুনা করেছেন কর্ণেল থেকে এবং উনার হাজব্যন্ড চাকরি করেন ওয়ার্ল্ড ব্যঙ্ক এ। তো সেই ইয়ং লেডি'র হাজব্যন্ড কয়েকদিনের অফিসিয়াল ট্যুরে যাবেন ঢাকায়।
সেদিন উনার সাথে ডিপার্টমেন্টের কাজেই বাসে করে একসাথে যাচ্ছিলাম কেপিটাল বিল্ডিং এর দিকে। পথে আমাকে জিজ্ঞেস করলো 'আমার হাজব্যন্ড তোমাদের দেশে যাচ্ছে দেখে আমি কয়েদিন তোমাদের দেশের নিউজপেপার দেখছিলাম। তো ওখানে একটা নিউজ দেখলাম একটা গার্মেন্টস বিল্ডিং ধসে কিংবা আগুন লেগে অনেক মানুষ মারা গিয়েছে এবং কলাপ্সিবল গেট আটকানো থাকাতে অনেকেই বের হতে পারিনি , এইটা কি ওখানে প্রায়শই ঘটে? " আমার বুঝতে বাকী রইলোনা সে কী দেখেছে কিংবা পড়েছে। আমি খানিকটা দম নিয়ে বললাম - দ্যাখো এইটা এক্সিডেন্ট এবং ইট ক্যান হ্যাপেন এনি হয়্যার ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড, এমেরিকাতেও তুমি নিশ্চই কয়েক দিন আগে দেখেছ ফিলাডেলফিয়া তে একটা চারতলা বিল্ডিং ধসে ৬/৭ জন মারা গিয়েছে কিংবা একটু পেছনে তাকালে ১৯৮০'র দিকে মিসৌরীতে হায়াত রিজেন্সি ভেঙ্গে পরেছিলো জাষ্ট স্ট্রাকচারাল ডিফর্মেশনের জন্য। তবে হ্যা, আমাদের দেশে এই জিনিসটা ইদানিং বাড়ছে কারণ গার্মেন্টস মালিকদের অতি মুনাফা লোভি মানুষিকতার জন্য।
তাছাড়া মালিকরাই আমাদের সিনেটর দের হাতের মুঠোই রাখেন তাই সরকার চাইলেই অনেক রেগুলেশন এডপ্ট করা সম্ভব হয়না। আর আমার দেশের রেভিনিঊ এর ৭০ ভাগ আসে এই গার্মেণ্টস থেকে তাই কিছু হলেই মালিকরা বলে তারা দেশ টা কে অচল করে দেবে।
আমার প্রফেসর পালটা প্রশ্ন করে- "তাহলে তারা চলবে কিভাবে?'''''
ওহ! তাদের নিজেদের ছেলেমেয়েদের পরাশুনা করায় লন্ডন কিংবা এমেরিকায়-- সো দে ডোন্ট কেয়ার এবাওট মাই কান্ট্রি--দে আর জাষ্ট মেকিং মানি-- হেল লট অব মানি। তুমি যে ৫০ টাকায় শার্ট পরে আছো তার জন্য তারা পে করে কতো জানো? অনলি ১ ডলার কিংবা তারও কম।
প্রফেসর অবাক হয়ে বললেন -- "ওহ রিয়েলী, দ্যাটস নট ফেয়ার এট অল।
। " আমি মনে মনে ভাবলাম-- ফেয়ারনেস শুধু প্রসাধন সামগ্রীর চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনের শব্দ আমার দেশে...
আমি তাকে আশার বাণী শুনালাম- এতো অল্প টাকায় এই পোষাক কারা বানায় জানো, এবং এতো নিপুন ভাবে?
--"কে"
আমি গর্ব নিয়ে বললাম আমার দেশের মেয়েরা। এই বঞ্চিত শ্রমিকদের ৭০-৮০ ভাগই মেয়ে। এবং এরাই আমাদের কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ।
প্রসংগ পাল্টিয়ে আমার প্রফেসর, সবে ৩০ পেরুনো ইয়ং লেডিকে আরো বললাম -- তুমি জানো আমার দেশে গাছ লাগানোর জন্য এতো পরিস্রম করতে হয়না। তুমি কোন ফল খেয়ে ফেলে দিলেই সেখান থেকে ২/৩ দিন পরেই দেখবে চারা গজিয়ে গেছে। এতোই উর্বর আমার দেশ!!!! একারনেই সেখানে এতো মানুষ হওয়া সত্ত্বেও আমরা তাদের খাওয়াতে পারি। ...
ও বলে তোমরা কি তাহলে গম কিংবা রাইস খাও, এবং তিন বেলা তেই?
আমি বললাম--- ( আগামী পর্বের জন্য থাক...)
সেদিন সারা দিনে আরো অনেক কথা হলো তার সাথে। সেই সাথে ঘোরা হয়েছে কেপিটাল বিল্ডিং, বোটানিকাল গার্ডেন, পেনসিল্ভেনিয়া এভিনূ, নিউইয়র্ক এভিনূ, আর্কাইভস বিল্ডিং---
( চলবে...)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।