আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাবনায় ঢাকা লিগ ও নিউজিল্যান্ড

আমি ক্রিকেটের যাযাবর। এদেশ-ওদেশ ঘুরি। ব্যস্ত জীবনের কোন মোড়ে যে তাঁর সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল, জানি না। কিন্তু তাঁকে যখন হারালাম, বুকটা হু হু করে উঠল। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়—নানাকে আর কখনো দেখব না!
নানার সঙ্গে সর্বশেষ দেখা গত বিপিএলের সময়।

খুলনায় খেলতে গিয়ে দুই দিনের জন্য স্ত্রী শিশিরকে নিয়ে মাগুরায় গিয়েছিলাম, তখন। বুঝতে পারিনি ওটাই নানাকে শেষ দেখা। মাগুরা শহরের পাশেই আলোকদিয়া গ্রামে আমার নানাবাড়ি। আমার ছেলেবেলার বড় একটা অংশ কেটেছে ওখানে। মনে পড়ে, নানার কাছে গল্প শোনার বায়না ধরতাম।

নানা যখন গল্প শোনাতেন, আমি ওনার দাড়িতে বিলি কাটতাম। গল্প শোনাতে শোনাতে উনি প্রায়ই বলতেন, ‘নানু, একদিন তুমি অনেক বড় হবে। যখন মাগুরায় আসবে, রাস্তায় লোকে ভিড় করে তোমাকে দেখবে। ’ কদিন আগে নানার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে মাগুরা ছুটে যাওয়ার সময় এসব কথা খুব মনে পড়ছিল।
প্রিয়জন হারানোর বেদনা মনের গহিনে শুকনো ক্ষতের মতো থেকে যায়।

তার পরও বাস্তবতা এমনই নিষ্ঠুর যে সে শোক কাটিয়ে উঠতে না-উঠতেই আমরা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ি। আমার কথাই ধরুন, আমি এখন প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ আর আসন্ন নিউজিল্যান্ড সিরিজ নিয়ে ভাবছি।
আঙুলের চোটের কারণে লিগটা শুরু থেকে খেলতে পারিনি। এটা আমার জন্য বিরাট একটা ক্ষতি। ইংল্যান্ডের ফ্রেন্ডস লাইফ টি-টোয়েন্টি, এরপর ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ—গত কয়েক মাসে যা খেলেছি, সবই টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।

তবে এমন না যে টি-টোয়েন্টি খেলেছি বলে ওয়ানডে-টেস্টে খুব সমস্যা হবে। পেশাদার খেলোয়াড়দের তো এসব মানিয়ে নিতেই হয়।
তবে হ্যাঁ, নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে ম্যাচ প্র্যাকটিসটা খুব জরুরি ছিল আমার জন্য। কিন্তু চোট-টোট নিয়ে আমি কখনোই জোরাজুরি করার পক্ষে না। চোটে পড়লে সব সময়ই আগে চাই সুস্থ হতে।

সে জন্যই লিগে এখন পর্যন্ত খেলিনি। তবে আশা করছি, পরের ম্যাচ থেকে খেলতে পারব। আঙুলের সর্বশেষ এক্স-রে রিপোর্ট ভালো এসেছে। ব্যথা সামান্য আছে, ওটা নিয়েই খেলতে হবে। তার আগে কাল (আজ) প্র্যাকটিস করলে বুঝতে পারব, ব্যাটিং-বোলিংয়ের অবস্থা কী।

নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে যে কয়টা ম্যাচই খেলি, সবগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। নিজের ফিটনেস, স্কিল—সবকিছুকে ঝালাই করে নেওয়ার সুযোগ এটা। আমি কখনোই অর্ধেক ফিট থেকে খেলতে চাই না। এভাবে খেলে পারফরম্যান্স খারাপ হলে পরে নিজেরই কষ্ট লাগে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের ক্যাম্পে যোগ দিতে এখনো ১০-১২ দিন সময় আছে।

এর মধ্যে যদি তিনটা ম্যাচও ভালোভাবে খেলতে পারি, আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়বে।
আত্মবিশ্বাস যে এখনো খুব কম আছে, তা নয়। ইংল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজে ব্যাটিংটা খারাপ করলেও নিয়মিতই উইকেট পেয়েছি। সে জন্য সফরে থাকার সময় অন্তত আমার মনে হয়নি, কিছু হচ্ছে না বা কিছু করতে পারছি না। তা ছাড়া এবার সঙ্গে স্ত্রী ছিল।

খেলার বাইরের সময়টাতে ক্রিকেট পুরোপুরিই আউট। শুধু ঘুরে বেড়িয়েছি দুজন। প্রথমে তো আমেরিকা গিয়ে কিছুদিন শ্বশুরবাড়িতে বেড়ালাম। এরপর ফ্রেন্ডস লাইফ টি-টোয়েন্টি খেলতে গেলাম ইংল্যান্ডে। কাউন্টি খেলতে গিয়ে এর আগে একটা সময়ে একাকীত্বে ভুগেছি।

মনে হতো, ধুর! এখানে খেলতে না এসে দেশে থাকলেই বুঝি ভালো থাকতাম। এবার সঙ্গে শিশির ছিল বলে সেটা হয়নি। সে-ও খুব উপভোগ করেছে সময়টা। তবে ইংল্যান্ডে ও কোনো দিন মাঠে যায়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজেও গেছে মাত্র এক দিন।

সেন্ট লুসিয়ায়। সেটাও তখন তামিমের বউ সেখানে ছিল বলে। আসলে তামিমরা থাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সময়টাই বেশি মজায় কেটেছে।
আমার কথা শুনে মনে হতে পারে, দেশের চেয়ে আমার বুঝি বিদেশই বেশি ভালো লাগে। এর আগে ইংল্যান্ড থাকাকালে প্রথম আলোয় আমার কিছু বক্তব্য পড়েও অনেকের তা মনে হয়ে থাকতে পারে।

ব্যাপারটা মোটেও সে রকম নয়। সবকিছুর ওপরে দেশ—এটা আপনাদের মতো আমারও শেষ কথা। আর এ কারণেই যেখানেই যা খেলি না কেন, বাংলাদেশের হয়ে খেলাটাই আমার কাছে সবার ওপরে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।