ব্যবসায়ীদের চাপে প্রায় নয় মাস ধরে ঝুলে আছে ‘ভোজ্যতেলে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩’ চূড়ান্ত করার কাজ। আইনের খসড়া চূড়ান্ত, জনমত যাচাইও শেষ, কিন্তু দণ্ডের প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা বেঁকে বসেছেন।
আইনে ভোজ্যতেলে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিটামিন-এ না মেশালে পাঁচ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড এবং এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। প্রভাবশালী কোনো কোনো ব্যবসায়ী দণ্ডের বিধান তুলে দিতে চাপ দিচ্ছেন সরকারের ওপর।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা নুরুল ইসলাম প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভোজ্যতেলে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধকরণে আইন করা হচ্ছে।
কিন্তু আইন ভঙ্গকারীর জন্য যে দণ্ডের বিধান রয়েছে, তাতে আমরা একমত নই। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের মতামতের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। ’
অন্যদিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান এককথায় রাজিও হয়েছে। আইন চূড়ান্ত হওয়ার আগে প্রভাবশালী একটি প্রতিষ্ঠান আইন মানবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়।
সে থেকেই এই অচলাবস্থা। কবে নাগাদ আইনটি চূড়ান্ত হবে, সে সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেনি শিল্প মন্ত্রণালয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, একটা সময় ছিল বাংলাদেশের বহু শিশু ভিটামিন-এ-এর অভাবে রাতকানা রোগে ভুগত। রোগ প্রতিরোধে সরকার বিনা মূল্যে ভিটামিন-এ বিতরণ শুরু করে। রোগটি এখন নিয়ন্ত্রণে।
শুধু রাতকানা রোগ নয়, বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন রোধে ভিটামিন-এ খুব জরুরি। সেই কারণে সরকার ২০১০ সাল থেকে ইউনিসেফ ও গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশনের (গেইন) সহযোগিতায় পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তেলে ভিটামিন-এ মেশানোর কাজ শুরু করে।
কী আছে আইনে
ভোজ্যতেলে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩-এর খসড়ায় প্রতি গ্রাম তেলে ২০ থেকে ৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-এ মেশানোর কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রথমবার আইন লঙ্ঘন করলে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং দ্বিতীয়বার বা তার বেশি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর খসড়া আইনের ওপর জনমত যাচাই সম্পন্ন হয়েছে।
কোনো কোনো ব্যবসায়ী বলছেন, প্রয়োজনমতো ভিটামিন-এ মেশানোর পর সূর্যের আলো লাগলে এর পরিমাণ কমে যেতে পারে। এ অবস্থায় ওই তেল পরীক্ষা করলে পরিমাণ কম পাওয়া যাবে। এতে আইন ভঙ্গ করার অপরাধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দণ্ড দেওয়া হবে। লবণে আয়োডিন মেশানোর বাধ্যবাধকতা আরোপের পর বহু প্রতিষ্ঠানকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁরা তেলের বেলা আর এই ‘ঝক্কি’র মুখে পড়তে চান না।
তাই এ বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আশঙ্কায় রয়েছেন।
এদিকে ভোজ্যতেলে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পে যুক্ত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভোজ্যতেলে ভিটামিন-এ মেশানো হয়ে থাকে। সেখানে প্লাস্টিকের প্যাকেটে তেল বিক্রি হয়। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বোতলটা একটু রঙিন করে দিলেই পারেন, তাহলে আর ভিটামিন-এ কমার আশঙ্কা থাকে না। কিন্তু কোনো কোনো ব্যবসায়ী ওই সব যুক্তি মানতে চাইছেন না।
কিছু তেলে মেশানো হচ্ছে ভিটামিন-এ
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউনিসেফ ও গেইন একটি প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশকে ২৯.১ মেট্রিক টন ভিটামিন-এ দ্রবণ এবং ১৮টি ডোজিং পাম্প (ভিটামিন মেশানো মেশিন) সরবরাহ করেছে। গেইনের সিনিয়র কনসালট্যান্ট মো. ওয়াহিদুজ্জমানান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, শিশুদের ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হচ্ছে। কিন্তু বাদ থেকে যাচ্ছে একটা বিশাল জনগোষ্ঠী। সাধারণ মানুষের দেহে ভিটামিন-এ-এর অভাব মেটানোর জন্য ভোজ্যতেলেই এটা মেশানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কোনো কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এ উদ্যোগকে স্বাগতও জানিয়েছে।
ভোজ্যতেল উত্পাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক কাজী সালাহউদ্দিন আহম্মাদ প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ভোজ্যতেলে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধকরণ অবশ্যই ভালো একটি উদ্যোগ।
বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড, টিকে গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, মোস্তফা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, নুরজাহান ও এমসিবি গ্রুপ এরই মধ্যে তাদের তেলে ভিটামিন-এ মেশাচ্ছে।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।