বাংলা আমার দেশ
সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের রায় দিয়েছেন গত ১৭ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার । এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জ্বীবন কারাদ- দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ কর্তৃক এই মৃত্যুদন্ডের রায়ের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে প্রচার করেছে। তবে এক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হলো আন্তর্জাতিক গণামধ্যমগুলোর বিশেষ কয়েকটি গণমাধ্যমে কাদের মোল্লাকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থী নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র 'ইসলাম' শব্দটির অর্থ- যেখানে শান্তি এবং যেখানে এই কাদেরের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হানাদার পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে অসংখ্য হত্যা, ও নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে সেখানে তাকে ইসলামপন্থী নেতা হিসেবে গণমাধ্যমে প্রচার বিশ্বব্যাপী শান্তিপ্রিয় মানুষদের এবং মুসলিম বিশ্ব বিবেককে আশ্চার্যান্বিত করেছে।
কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশের রায়ের খবরকে আন্তর্জাতিক কোন্ গণমাধ্যম কীভাবে প্রচার বা সম্প্রচার করেছিল? ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আপিল বিভাগ থেকে এই রায় প্রচারের পর পরই বিবিসি অনলাইনের শীর্ষ সংবাদ হিসেবে স্থান করে নেয় এই খবর যার শিরোনাম ছিল -'যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির সাজা ইসলামপন্থী কাদের মোল্লার'। অবশ্য বিবিসির প্রতিবেদনে মুক্তিযুদ্ধকালে ঢাকার মিরপুরে নৃশংস গণহত্যা পরিচালনার জন্য কাদের মোল্লা যে 'কসাই' নামেও অভিহিত হন, সেটাও উল্লেখ করা হয়।
আল-জাজিরার শিরোনাম ছিল, 'বাংলাদেশের ইসলামপন্থী নেতার মৃত্যুদন্ড'। ব্রিটিশ পত্রিকা 'ইনডিপেন্ডেন্ট'-এর শিরোনাম ছিল, 'বাংলাদেশের ইসলামপন্থী নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড। 'বাংলাদেশ টপ কোর্ট অর্ডারস সিনিয়র ইসলামিষ্ট টু হ্যাং' শিরোনোমে 'ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া' জানায়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যাকা- সংঘটিত করার দায়ে ইসলামপন্থী নেতা কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
'যুদ্ধাপরাধের দায়ে ইসলামী দলের নেতার মৃত্যুদন্ড' শিরোনামে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ওয়াশিংটন পোষ্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিচারকের প্যানেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকার কারণে মৃত্যুদন্ডের রায় দিয়েছেন।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ডন 'জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নেতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের ফাঁসির আদেশ' শিরোনামে বলেছে, বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্ট একজন জ্যেষ্ঠ ইসলামপন্থী নেতাকে গণহত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন।
উপসাগরীয় এলাকার শীর্ষ দৈনিক খালিজ টাইমস বলেছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের ইসলামীর নেতা কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল ষ্ট্রীট জার্নাল-এর শিরোনাম ছিল, বাংলাদেশের আদালতে ইসলামি রাজনীতিবিদের মৃত্যুদন্ড'। এতে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্ট দেশটির জ্যেষ্ঠ ইসলামি রাজনীতিবিদ কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড দেন।
এভাবে অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করা গেছে যে, কাদের মোল্লাকে ইসলামপন্থী নেতা বা ইসলামী রাজনীতিবিদ ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষিত করার হিড়িক দেখা যায় বিভিন্ন বিদেশী গণমাধ্যমে। কাদের মোল্লাকে এভাবে বিশেষায়িত করে বাংলাদেশের কোন কোন গণমাধ্যমকর্মী বা সাংবাদিকগণ মিথ্যাচারের পথ ধরে ওইসব বিদেশী গণমাধ্যমগুলো কাদের খুশী করতে চেয়েছে তা বোধগম্য নয়। এটা কি শান্তির ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে তাদের এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর অজ্ঞতা নাকি ইসলাম ধর্মের শান্তির ধারাকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে এটাকে একটি জঙ্গী দল হিসেবে বাংলাদেশের মাটিতে প্রতিষ্ঠিত করার একটি সূদুরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ।
ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ওফাতের পর থেকেই একটি কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী ইসলাম ধর্মের আলখেল্লা পরে ধর্মকে পার্থিব ভোগ-বিলাসের রাজনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উপায় হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছিল যার সর্বনিষ্ট উদাহরণ স্থাপন করে মানবজাতির কাছে আজও ঘৃণিত হয়ে আছে মুয়াবিয়া ও ইয়াজিদ। ইয়াজিদ ইসলাম ও পবিত্র কুরআনের দোহাই দিয়েছিল এবং আরবসহ বিশ্বের অনেক দেশে ইসলামের নামে কায়েম করেছিল ইয়াজিদতন্ত্র তথা রাজতন্ত্র ।
সেই ধারা আজও অব্যাহত এবং তারই আজকের দিনের জ্বলন্ত উদাহরণ ইসলামের নামে ওহাবী বাদের প্রতিষ্ঠাতা সৌদি আরব যার প্রভু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন তথা পশ্চিমা বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী চক্র। এই পশ্চিমা শক্তি ইসলামের নামে সারা বিশ্বে প্রচার করে চলেছে এই ওহাবীবাদ তথা এই উপমাহাদেশে মওদুদীবাদ। নবী মুহাম্মদ (দঃ)-এর চিরশত্রু নজদের আব্দুল ওয়াহাবের প্রবর্তিত এই ওয়াহাবীবাদকেই এরা বর্তমান বিশ্বে ইসলাম ধর্ম বলে চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের চিরাকাঙ্খিত শান্তি (ইসলাম) ধর্মকে বিতর্কিত ও বিভ্রান্ত করে বিশ্বে অশান্তির বীজ বপন করে রাখাই এদের মূল লক্ষ্য। আর এদেরই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় কাদের মোল্লার মতো একজন অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীকে ইসলামপন্থী নেতা বা ইসলামী রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রচার করেছে চলেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম।
ইসলাম কোনোদিন কাউকে আঘাত করার অনুমতি দেয়নি। বাংলাদেশের জাতীয় কবি, সাধক নজরুলের ভাষায় বলতে হয়, 'ইসলাম কাউকে গোলাম করতে আসেনি এবং কারো গোলাম হতেও আসেনি'। ইসলাম সাম্য, মৈত্রী ও সত্যের ধর্ম। আর কাদের মোল্লারা এর প্রকাশ্য শত্রু। তাই এরা ১৯৭১ সালে এদেশের মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল।
এদের প্রভু পাকিস্তানী জেনারেল টিক্কা খান বলেছিল, 'বাংলার মানুষ চাই না, মাটি চাই'। কাদের মোল্লা সেদিন ঢাকার মিরপুরের কসাই হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিল, আর টিক্কা খান খ্যাতি পেয়েছিল 'বুচার অব বেঙ্গল' অর্থাৎ বাংলার কসাই হিসেবে। আর এ কারণে এসব ব্যাপারে দেশের গণমাধ্যমকর্মী ও সাংবাদিক সমাজ এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো আরও সচেতন হয়ে সংবাদ প্রচারে সচেষ্ট হবে-সেটিই আশা করে এদেশের শান্তিপ্রিয় সকল মানুষ। অবশ্য মুহাম্মদী ইসলামকে বহু নামে এখন বিশ্বে প্রচলন করা হয়েছে। মিরপুরের কসাই নামে পরিচিত এবং সর্বোচ্চ আদালত হতে দন্ডপ্রাপ্ত কাদের মোল্লাকে কোনো গণমাধ্যম ইসলামী রাজনীতিবিদ বা ইসলামপন্থী নেতা হিসেবে উল্লেখ করলেই মুসলমান হিসেবে নিজেদের অজ্ঞতা, হীনমন্যতা বা সংকীর্ণতার পরিচয় দেয়া হবে এবং দেশের মানুষ বিভ্রান্ত হবে যা কখনোই প্রত্যাশা করে না আজ এদেশের শান্তিপ্রিয়, বিবেকবান ও সচেতন মানুষ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।