ঘাটের এই পারে বসে আছি ঐ পারে যাওয়ার অপেক্ষা।
ঈগল পাখীর ডানা আর কত বড়?খুব বেশী বড়না। কিন্তু এই ছোট ডানা দিয়েই সে পুরো আকাশ উড়ে বেড়ায়।
আমাদের গল্পের মজিদ মিয়া ও একদিন নীলিমার আকাশে ঈগল পাখির ন্যায় উড়িয়িছিলেন তারুণ্য। কিন্তু আজ বুড়ো হয়েছেন।
জীবন যুদ্ধে চৈত্রের উত্তপ্ত মাঠে ফসল ফলাতে চোখের নোনা জল আর বুকের ঘাম একাকার করেছেন। প্রখর তপ্ত রোদে জারুল ছায়া কাছে ডেকেছে বারবার। কিন্ত মজিদ মিয়া আকাশের ঈগল পাখীর সাথে পাল্লা দিয়ে জমিনে কর্তৃত্ব করেছেন। জারুল আর বটের ছায়ায় জিরিয়ে নেয়ার ত্বষ্না হয়নি তার।
সন্তান বড় হয়েছে আজ।
মজিদ মিয়ার মনের গহিনের ছোট আশা নীলিমায় ডানা মেলে দেয়া ঈগল পাখীর আকাশের চেয়েও এখন অনেক বড়। জারুল আর বটের ছায়ার চেয়েও শান্ত তার আশা আর শান্তির মতো স্নিগ্ধ তার মন।
নিস্তব্ধ নিথর রাত। বাইরে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। আজকের রাত যেন এক ঘুটঘুটে অন্ধকার।
রাত বাড়ছে ধীরে ধীরে।
সাথে বাড়ছে বৃদ্ধ ,জীর্নশীর্ন ,রোগাগ্রস্থ মজিদ মিয়ার কাশি। এ কাশিতে মাঝে মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসে তার।
একটা চারকোনা খাবার টেবিল। চারপাশে চারজন বসা।
মজিদ মিয়া, তার বড় ছেলে,পুত্র বধু আর আদরের ৯ বছরের নাতি।
মজিদ মিয়া বয়সের ভারে ন্যুব্জ। বুক কাঁপে ,বুকের সাথে হাত কাঁপে। এক লোকমা খাবার মুখে নেন তো ,আরেক লোকমা মুখের বাইরে পড়ে যায়। প্লেটের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে খাবার পড়ে টেবিলটা বড় বেশী নোংরা হয়ে আছে।
দামি ডাইনিং টেবিল। টেবিলের নীচে আরো দামি কার্পেট পাতা। ঝকঝকে নতুন।
পুত্র বধু খুব অস্বস্থি বোধ করে। আর সন্তান বাপের দিকে চেয়ে চোখ রাংগায়।
মজিদ মিয়ার বুক আবারো কেঁপে ওঠে। তবে এবার বার্ধ্যেকে না ভয়ে ঠিক বুঝা যায়না।
পরের রাত । এক টেবিলে তিনজন বসে খাবার টেবিলে,আরেক টেবিলে শুধুইএকজন। একা বসা আমাদের মজিদ মিয়া।
বড় নিঃসংগ আর বড় একাকী।
মজিদ মিয়া কাঁপা কাঁপা হাতে পানির গ্লাস ওঠালেন। কিন্তু চুমুক দিতে না দিতেই গ্লাস হাতের বাঁধন থেকে আলগা হয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে একবার আদরের সন্তানের দিকে তাকান। আরেকবার হৃদয় বিদীর্ণ করা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন।
নিজের হাতকেও যেন আর বিশ্বাস করতে পারেন না।
এবার হাত বাড়ালেন প্লেটের দিকে। প্লেটেরও গতি হলো মাটিতে। পড়ে আছে ভাংগা-ভাংগা টুকরা। একেকটা ভাংগা টুকরো যেন মজিদ মিয়ার একেকটা স্বপ্নের মতো।
মজিদ মিয়ার দীর্ঘশ্বাস প্লেটের উপর পড়ে, কিন্তু সেই দীর্ঘশ্বাস ভাঙা প্লেটকে আর জুড়া লাগাতে পারে না।
এর পরের রাত। আজ মজিদ মিয়ার খাবার টেবিলে কোনো কাঁচের প্লেট নেই, নেই কোনো কাঁচের গ্লাস। শুধু কাঠের একটা সানকি। আর কাঠের আরেকটা গ্লাস।
মজিদ মিয়ার বড় ছেলে আর পুত্রবধু আজ বড় নিশ্চিত।
নয় বছরের ছোট ছেলেটি শুধু দূর থেকে এক জীর্ণ, শীর্ণ, ব্যর্থ বুড়ো দাদুর দিকে চেয়ে থাকে।
পরের দিন বেলা দ্বি প্রহর। বুড়ো মজিদ মিয়া বিছানায়একাকী শুয়ে আছেন।
নিজ সন্তান আর পুত্র বধু বাইরে থেকে ফিরেছে।
ঘরে ঢুকেই দেখেন তাদের ছেলে বাপের পাশে বসে কাঠ আর পেরেক নিয়ে আপন মনে খেলছে।
বাবা,জিজ্ঞেস করেন-সোনা মনি কি করছ?
ছেলে মিষ্টি হেসে দারুন উতফুল্ল হয়ে বলে - কাঠের প্লেট আর কাঠের গ্লাস বানাচ্ছি বাবা। তোমরা ও যে একদিন দাদুর মতো বুড়ো হবে। খাবারের টেবিল নোংরা করে রাখবে। দামী কাঁচের গ্লাস,প্লেট সব ভেংগে ফেলবে।
তাই আগে থেকেই তোমাদের জন্য কাঠের প্লেট আর কাঠের গ্লাস বানিয়ে রাখছি । ভালো করছি না বাবা?
(একটি ইংরেজি লিখার ভাবানুবাদ-)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।