আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটগল্পঃ গল্পকারের মৃত্যু || অতঃপর মৃত্যুজট

বিশ্বাস চিরঞ্জীব । মুক্তমন । :█▓▓▓▒▒▒░░░░
গেল বছরে পরপর তিনবার পুলিশ ও ডিবি কর্তৃক রিমান্ডে ডিম থেরাপি এবং র‌্যাব কর্তৃক ডান্ডাবাড়ির পর 'রূপম' মোটামুটি শান্ত-শিষ্ট ও একজন লেজ বিশিষ্ট্য ভদ্র হয়ে গিয়েছিল। এক পুলিশের মেয়ে 'নিশি'কে কেন্দ্র করে সে প্রেমের গল্প লিখত। ব্লগে-ফেসবুকে এসব লিখে বেড়াত।

তাই তাকে একটু আদর করেছিল নিশির বাবা। একবার তো র‌্যাবের এক মহিলা সদস্যাকে জড়িয়ে প্রেমের গল্প লিখে কালকাঠির ডান্ডাবাড়ি সইতে না পেরে ছয় মাস বিছানাতেই পড়েছিল রূপম। কিন্তু এই ছয় মাসই তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ছিল। এই সময়ে তিনি একজন অলরাউন্ডার গল্পকার হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন। গল্পের কারণে তার এতো এতো সুনাম এবং প্রেমের গল্পের কারণে তার এই করুণ পরিণতি দেখে শেষ পর্যন্ত নিশি সত্যিই তার প্রেমে পড়ে গিয়েছিল।

হতভাগা পাগলা লেখক রূপম ততদিনে অন্য একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে একেবারেই ডুবে গেছে। একদিন নিশি রূপমকে দেখতে আসল তার বাসায়। একটা ফুলের তোড়া নিয়ে। টকটকে লাল গোলাপ। কিন্তু রূপম টিনার প্রেমে এতটাই বিভোর যে, নিশিকে সাধারণ একজন ভক্তের স্তরে রেখে এক সময় বলেই ফেলল- ☺ "জানো নিশি, আজ আমি অনেক অনেক হ্যাপি।

" যেন একটু ক্ষোভ থেকেই বলেছে মনে হয়। ফুলের তোড়ার জন্য একটু ধন্যবাদও বেরুল না তার মুখ থেকে। তার এধরণের কথায় নিশি মর্মাহত হয়ে বলল- ☻ " জানিতো, আপনি অনেক বড় গল্পকার মানুষ। চাইলেই এক মিনিটে শত শত গল্প বানাতে পারেন। এখন কি আর আমাদের কথা মনে থাকে? ☺ না. না. ওইরকম কিছু না।

আমি সুখি অন্য কারণে। ☻ কী সেটা. জানতে পারি? ☺ কেন নয়, অবশ্যই জানতে পারো। " এই বলে রূপম ভাবতে লাগল, নিশিকে টিনার কথা বলবে কিনা! কিন্তু নিশি তাড়া দেয়- ☻ কি হলো রূপম ভাই। কি ভাবছেন? ☺ ওহ, হ্যাঁ! আমি একটু ভাবছিলাম আর কি... ভাবছি ব্যাপারটা তোমাকে বলব কিনা! ☻ আশ্চর্য! কোন ব্যাপারটা? আমিতো কিছুই বুঝতে পারছিনা। তাছাড়া আমাকে বললে আপনার কি কোনও নোবেল টোবেল চুরি হয়ে যাবে? আমি কী করবো ওসব দিয়ে... ☺ তুমি যদি কিছু মনে কর? ☻ আমি কিচ্ছু মনে করিব না, জাহাঁপনা।

আপনি এইবার বলিয়া ফেলুন. পিলিজ..... ☺ ইয়ে মানে, ইয়ে, ওইযে, তোমার একটা বান্ধবী আছে না... টিনা না কি যেন নাম?" ন্যাকামি করে বলে রূপম। ☻হ্যাঁ, আছে তো.. কি হয়েছে! ☺ কিছু হয়নি। তবে ও আমাকে খুব ভালোবাসে, আমিও তাই .............. ☻ নিশি ভাবল, লেখক মানুষ তো... তাই তাকে কতো মেয়ে ভালোবাসে আজ। আহারে, কেনো যে আমি এতোদিন পরে তার প্রেমে পড়লাম। এর সব দোষ প্রেম হারামজাদার।

প্রেম বলদটা কেনো এতোদিন আমার উপরে পড়েনি! তাহলে তো এতোদিনে বিশিষ্ট লেখক রূপমের শ্রাবণী' হতে পারতাম। রূপম আমার জন্য দু-দু'বার রিমান্ডে গিয়েছিল। কততো গুলা রাধাহাসের ডিম তাকে হজম করতে হয়েছিল। রূপমের জন্য তার কষ্ট লাগে খুব। পর মূহুর্তেই বাস্তবে ফিরে আসে।

রূপমকে জিজ্ঞেস করে- ☻ আপনি মনে হয় টিনাকে নিয়েও একটা প্রেমের গল্প লিখেছেন, তাইনা রূপম ভাই... সবার আগে আমাকে পড়তে দিবেন কিন্তু-- বলেই এক গাল হাসি উপহার দেয় রূপমকে ☺ রূপম তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে- আরে না, তাকে নিয়ে কোনও গল্প লিখব না। বরং তার সাথে আমার হাজার হাজার গল্প তৈরি হবে। আমিও যে তাকে ভা লো বা সি ......... ☻নিশির মাথায় যেন সপ্ত আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। বহুদূর থেকে ছুটে আসা দ্রুতগামীর একটা এক্সপ্রেস ট্রেন যেন নিশিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল। নিশি অস্বাভাবিক ভাবেই হঠাৎ ঝাঁকি খেল খুব।

তার এই অবস্থা দেখে রূপম ঘাবড়ে গিয়ে বলল- ☺ কী ব্যাপার! তোমার শরীর খারাপ নাকি! কোনও সমস্যা? নিজেকে সামলে নিয়ে নিশি বলল- ☻ না, ভাইয়া! আমার কিছু হয়নি। কেমন যেনো ভূমিকম্পের মতো লাগল। তাই এমন হয়েছে। ☺ কই নাতো, আমি তো টেরই পাইনি। ভূমিকম্প হয়নি তো! ☻ ঠিক আছে রূপম ভাই।

আমি তাহলে আজ আসি? ☺ আচ্ছা, টিনাকে একটু আসতে বলবে, কেমন? ☻ ওকে, আপনি ভালো থাকবেন” বলে রূপমের বাসা থেকে বেরিয়ে আসল নিশি। আনমনে পথ চলতে চলতে নিশি ভাবছে- রূপম একসময় তাকে খুব ভালোবাসতো। আজ সেও রূপমকে ভালোবাসে। এখানে তৃতীয় কারও স্থান হতেই পারে না। যে করেই হোক, রূপমকে টিনার হাত থেকে বাঁচাতেই হবে।

নিশি শপথ করল- তার জীবন থাকতে সে রূপমকে অন্য কারও হতে দিবেনা। রূপম নিশিরই থাকতে হবে, যেমনি নিশি রূপমের। নিশির উপর একরকম রাগ করেছে রূপম। তার এত কিছু হলো। নিশি কোনও খবরই নিল না।

এখন আসছে ঢং দেখাতে। এর চাইতে টিনা-ই ভালো। রূপম দূরে ঠেলে দিলেও সে তার আরও কাছে আসে। রূপম ভাবে। নিশিকে ডিলিট করে টিনাকে নিয়েই সে ভবিষ্যৎ স্বপ্ন দেখবে।

টিনা খুব ভালো একটা মেয়ে। কখনও তাকে অবহেলা করেনা। তার সাথে কখনও নিশির মতো ভাব দেখায় না। কল করলে বরং কেটে দিয়ে ব্যাক করে। বাহ্, এতে রূপম বেশ মজা পায়।

নিশির মতো শান্ত নয়। উচ্ছল, চঞ্চলা-চপলা মেয়ে টিনা।                                     –––––––––––○•○•○––––––––––– ডিউক। একজন পেশাদার কুখ্যাত খুনি। টাকার বিনিময়ে সে যাকে-তাকে খুন করতেও দ্বিধা করে না।

এই পর্যন্ত দেড় শতাধিক খুন করার পরও পুলিশের ব্ল্যাকলিস্টে তার নাম নেই জেনে সে প্রায়ই অবাক হয়। খুনি জীবনে তার চেহারায় কেউ করুণার ছাঁপ দেখেনি। আজ তিন সপ্তাহ গত হতে চলেছে অথচ তার হাতে কোনও এ্যাসাইনমেন্ট নেই। গেল সপ্তাহে সিংগাপুর বেড়িয়ে এল। হাতে কোনও কাজও পাচ্ছে না যে সময় কাটাবে।

অবসর তার খুব যন্ত্রণাদায়ক মনে হলেও এখন সেই যন্ত্রণাতেই সে সময় পার করছে। একটু আয়েশ করে ইজি চেয়ারটায় গিয়ে বসল। 'লিপসে'র প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করল। এ্যাশট্রে-র দিকে তাকাতে তাকাতে ওটা সিগারেটটা ধরিয়ে আয়েশ করে দিল লম্বা এক টান। একটু পর ধিরে ধিরে নাক-মুখ দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে লাগল।

তাকিয়ে আছে বাতাসে হারিয়ে যেতে থাকা ধোঁয়ার কুন্ডলীর দিকে। আহা... মানুষের জীবনটাও তো এভাবে মিলিয়ে যায় কত সহজে। জীবনটা যেন একটা ধোঁয়ার পাক। এর কোনও নিশ্চয়তাই নেই। ডিউকের ভাবনারা বেশিদূর যেতে পারেনা।

মৃদু শব্দে তার মুঠোফোন বেজে উঠল। অপরিচিত নাম্বার। রিসিভ করে কানে ঠেকাতেই অপর প্রান্তে একটা নারী কণ্ঠ শুনতে পেল। ☻ হ্যালো... এখানে কি ডিউক নামে কেউ থাকেন? ☺ হ্যাঁ... আমিই ডিউক, আপনি কে বলছেন? ☻ আপনি আমাকে চিনবেন না। তবে আপনাকে আমার একটা কাজ করে দিতে হবে।

☺ তার আগে শুনি, আপনার কাজটা কী রকম? ☻ কাজটা হলো... ... ... ... ... ... ... ... ☺ তা লোকটা কে? ☻ রূপম। গল্পকার.. চেনেন? ☺ কোন রূপম! নিশির নামে প্রেমের গল্প লিখে তিনবার রিমান্ডে গিয়েছিল যে, সেই রূপম? ☻ হুম... ঠিক ধরেছেন। ☺ নাহ। কাজটা আমি পারব না... রূপম খুব ভালো ছেলে। দেশের রত্ন।

☻ আমার ভালো করেই জানা আছে সে কেমন ছেলে, আমার চেয়ে আপনি বেশি জানেন না... ☺ তবুও আমি পারব না. ☻ আমি যদি আপনাকে দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দেই, তাহলে করবেন? সেলফোন হাতে ডিউক নিরব। ওপাশের কণ্ঠটাও নিশ্চুপ... কেন জানি আজ ওকে খুব মানবতায় পেয়েছে। ও ভাবতেই থাকল। কিন্তু কোনও কুল কিনারায় পৌঁছুতে পারছে না... আকস্মাৎ ছেদ পড়ল তার চিন্তায়- ☻কী ব্যাপার... কথা বলছেন না কেন? ☺তাড়া খেয়ে হুট করেই বলে ফেলে ডিউক- আমাকে তিনগুণ দিতে হবে আপনার। রাজী? ☻ওকে, ব্যাপার না।

আপনি কাল দুপুরের পূর্বেই আপনার একাউন্টে পারিশ্রমিকের দ্বিগুণ পৌঁছে যাবে। বাকী চার লক্ষ টাকা (সম্মানী'র এক লক্ষ সহ) কাজ সম্পূর্ণ করার পর পাবেন। তবে আমার একটা শর্ত আছে। আপনাকে রাখতেই হবে তা। ☺ কী সেটা!!! ☻ রূপমকে কোনও কষ্ট দেয়া যাবে না।

হোহো করে অট্টহাসি বেরিয়ে এল ডিউকের মুখ থেকে। সে বলল- ☺ আপনার কথা শুনে আমার কৌতুহল বোধ হচ্ছে। আপনার মাথা ঠিকাছে তো? কষ্ট না দেওয়ার কথা তো আপনার কাছে আশা করা যায় না!!! হাহাহাহা. হাহাহহহাহাহা হোাহহাহাহাহাহাহাহাহ ☻হাসবেন না, আমি ঠিক আছি। সুস্থ মনেই বলছি- তাকে একটুও কষ্ট বা ব্যাথা দিবেন না, প্লীজ। আর কাজ শেষ হলেই আমাকে ইনফর্ম করবেন।

☺ ওকে, ডান।                                     –––––––––––○•○•○––––––––––– দুপুরে অলসভাবে বসে বসে ব্লগ দিয়ে নেট ব্রাউজ করছিল হেক্টর বাবু। সে ফেবুতে তেমন একটা যায় না। সেখানে গেলেই তাকে ঝাঁক বেঁধে উড়ে আসা বিরহের পাখিরা ঘিরে ধরে। তাদেরই এলাকার টিনাকে সে কতোবার ফেবুতে রিকু পাঠিয়েছে।

তাকে এক্সেপ্ট করেনি টিনা। ফেইক আইডি থেকে রিকু পাঠাবার সুবাদে যদিও এড হতে পেরেছে, পরিচয় বলার পর আনফ্রেন্ডসহ ব্লক খেয়েছে হেক্টর। তবুও ভালো ছিল। ইদানিং দেখা যায় পাশের এলাকার স্বনামধন্য এক পিচ্চি লেখকের প্রেমে পড়েছে। মাঝে মাঝেই ওদের হাত ধরাধরি করে হাটতে দেখলে হেক্টরের বুকের গহিনে চিন্ চিন্ করে ওঠে।

খুব ব্যথা লাগে অন্তরের ভেতরে। হেক্টরের ছোটভাই লাভলু তো সেদিন বলেই ফেলেছিল- ভাইয়া, তুই শুধু একবার অনুমতি দে, দেখবি দুইটারে আমি কী নাকানি-চুবানি খাওয়াই। নইলে আমার নামই পরিবর্তন করে ফেলব। হিক্টর তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিল- ওদের তো কোনও দোষ নেই। হয়তো-বা পারে হেক্টর টিনার যোগ্য হতে পারেনি।

মনিটরের স্ক্রিনে নিজের হতাশার বালি গুণছে এমন সময় ডিউকের কল পেল। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ দিয়েছে ডিউক। আজ লেখক সাহেবের কপালে মনে হয় শনি ঘুরছে। রূপমকে নাকি আজ অনুসরণ করতে হবে। কোথায় যায়, কী করে, সব খবর রাখতে হবে তাকে।

রাত অবধি। তার একার পক্ষে সম্ভব নয়। সে লাভলুদের জানিয়ে দিল। আপাতত লাভলুরা সামাল দিক। টিনাকে নিয়ে সে একটা গল্প লিখছে।

গল্পটা শেষ করে ব্লগে দিতে হবে আজ। তার মানে সে এখন অনেক বিজি।                                     –––––––––––○•○•○––––––––––– প্রতিদিনের মতো আজও সন্ধ্যায় রূপম টিনাদের বাড়ির পেছনের বাগান ঘেষা পথে হাটছে আর ফোনে কথা বলছে টিনার সাথে। ও খেয়াল করল- প্রায় আধঘন্টা ধরে একটা ছেলে তাকে অনুসরণ করছে। রূপম যেদিকে যায়, ছেলেটাও সেদিকেই যায়।

রূপম কোথাও থামলে একটু দূরে সেই ছেলেটাও থেমে দাঁড়ায়। ওর খুব অস্বস্তি লাগছে। ছেলেটা এখানে কী করছে। রূপম এখন যেখানটায় দাঁড়ানো সেখান থেকে টিনাকে দেখা যাচ্ছে। টিনা ওদের পেছনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিল।

দু'জন দু'জনকে দেখছিল। উভয়ের দূরত্ব ত্রিশমিটারের হলেও মোবাইল তা কমিয়ে খুব কাছে নিয়ে এসেছে। রূপমকে চুপ করে থাকতে দেখে টিনা বলে ☻ কি ব্যাপার চুপ করে থাকলা কেনো? কথা বলো... ☺ টিনা, আমি তোমাকে একটু পরে ফোন করবো। এখন রাখি, বাই। " টিনার ফিরতি কথা ওর কানের ধারে পৌঁছার আগেই কলটা কেটে দিল।

টিনার মন খারাপ। সে ফেবুতে স্ট্যাটাস দিল- ফিলিং স্যাড। ৫ মিনিটেই ১১৭ টা লাইক, ২৯৬ টা কমেন্ট পড়ল তাতে। ওদিকে রূপম এগিয়ে গেল সেই ছেলেটার দিকে। ☺ এইযে ভাই, এখানে কী করছেন।

☺☺ কী করছি মানে, হাওয়া খাচ্ছি। " একই সাথে চঞ্চল ও নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে ছেলেটা। ☺ তাহলে একটু ওইদিকে যান। আমার প্রবলেম হচ্ছে। ☺☺ ওই মিয়া!" ছেলেটা রেগে বলল- "আপনের কী? এটা কী আপনের কেনা জায়গা?" ☺আরে! আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন? আমি তো আপনাকে অনুরোধ করলাম মাত্র।

লাভলু ছেলেটাও সুযোগ হাত-ছাড়া করতে যেন নারাজ। সে বলল- ☺☺ তুমারে আজকা খাইসি আমি। তুমি আমারে ওইদিকে যাইবার কইলা কেন্! আমাগো এলাকায় আইসা আমাগো চোক্ষের সামনে দিয়া পিরিত কর!! আজগা শিখাইয়া দিমু পিরিত কারে কয়... ☺ কী করবেন আপনি? ☺☺ একটু পরেই টের পাবা" বলে পথের বাঁকে আড্ডা দিতে থাকা বাকিদের ফোন করল। আর যায় কোথায়? মূহুর্তেই আট-নয়জন এসে জেঁকে ধরল রূপমকে। ওদিকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রূপমের এই অবস্থা দেখে টিনার খুব ভয় করতে লাগল।

ও জানেনা রূপমের সাথে ছেলেগুলোর কী নিয়ে সমস্যা! ও পুলিশকে ফোন করতে চলে গেল। ছেলেগুলোকে রূপম বারবার চেষ্টা করেও বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে এক পর্যায়ে বলল- ☺ তোমরা জানো, আমি কে? আমি গল্পকার রূপম। তাছাড়া আমি ঢাকা সিটির পরিবেশ বন্ধু খ্যাত জি.এস. মাসুদ রানা ওরফে এম.আর নাইটের ঘনিষ্ট লোক। আমাকে কিছু করে তোমরা একটাও ছাড় পাবেনা। বখাটে ছেলেগুলো হোহো করে হেসে ফেলল।

☺☺ কয় কী... পেরিবেশ বেন্দু আমাগো কী করবো দেখতে মুনচায়.. পারলে কিছু করতে বলিস। টুপ করে হেক্টরকে ফোন লাগাল লাভলু। ☺ বস... পোলাডায় তো গেঞ্জাম লাগাইয়া দিছে। ☺☺ তোরা একটু অপেক্ষা কর। ওরে কুনু রকমে আটকায়া রাক।

ডিউক আইতাসে। এতক্ষনে তো পৌঁছায়া যাওনের কতা... ডিউকের কথা শুনে লাভলু ঢোক গিলল। "ঠিকাছে" বলে লাইন কেটে দিল সে। ও বুঝে ফেলল কী ঘটতে যাচ্ছে। তবুও বুঝলনা- মশা মারতে কামান দাগানো হচ্ছে কেন? সেতো জানেনা- বেচারা রূপমের মূল্য এখন দশ লক্ষ টাকা মাত্র।

ডিউক তার জীবনে এইরকম নিরীহ কোনও ভালো মানুষকে আঘাত করেছে বলে মনে হয়না তার। ক্ষণিকের জন্য রূপমের জন্য তার মায়া লাগে। একবার ভাবে যা হবার হয়েছে, রূপমকে পালাতে সাহায্য করবে এবার। কিন্তু পরক্ষণেই ডিউকের ভাবমুর্তিকে একটা জিপসি হোন্ডায় আসতে দেখে বুকটা তার জমে গেল আতংকে। এতোক্ষণে রূপমকে ঘিরে থাকা ছেলেগুলো তাকে মনের মতো করে গণধোলাই দিয়েছে।

রূপমের চেহারাটা ফুলে গেছে এত্তোগুলো কিল-ঘুষি সহ্য করতে না পেরে। ডিউককে কাছে আসতে দেখে ওরা সবাই চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। খুব ভয় পেয়েছে ওরা। যদিও জানেনা ডিউক কেন এসেছে এখানে! কারণ, লাভলুই তো এই মাত্র জানতে পেল। রূপমের শরীরের অবস্থা দেখে লাভলুর মন কেঁদে উঠল।

রূপমের এই হাল আজ নির্দয়-পাষাণ ডিউকের মনেও কিছুটা প্রভাব ফেলেছে (রূপমের কয়েকটা ছবি ডিউককে মেইল করেছিল নিশি)। তবে সে তা প্রকাশ করল না। শুধু মনে একটু কষ্ট পেল। তার কি কোনও কালে মন ছিল!!! হুম... অবকাশে তাকে ভাবতে হবে এই ব্যাপারে। তার দায়িত্ব ছিল- রূপমকে কোনও কষ্ট দেয়া চলবেনা।

সে তা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। জীবনে এই প্রথম তার কর্তব্যে ঊনিশ-বিশ হলো। যা উচিত হয়নি। যাকগে, তাকে তার মূল কাজটা শেষ করতে হবে আগে। পরে সব ভাবা যাবে... রূপম অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়াল।

ডিউককে সে কোনও দিন দেখেনি। তবুও চেহারাটা চেনা মনে হচ্ছে। হয়তো ব্লগে, ফেবুতে বা পত্রিকার পাতায় দেখেছিল কখনো। ডিউক তার খুব কাছে আসল। রূপম তাকে জিজ্ঞেস করল- ☺ আপনাকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে।

কে আপনি? ☺☺ আমি তোমার বন্ধু। " বলতে বলেতে সাইলেন্সারযুক্ত একটা মিনি ওয়ালথার ওয়ান সেভেন্টি ফাইভ বের করে আনল। রূপম কিছুই বুঝতে পারল না। সেই অবকাশটুকু পাবার আগেই খুট করে একটা শব্দ হলো। রূপমের দেহখানা লুটিয়ে পড়ল মাটিতে।

বোকা একটা ছেলে মুখ ফসকে বলেই ফেলল- "জয় বাংলা-বুলেট সামলা"। জিপসি হোন্ডা চলে গেছে। রাস্তার শেষ মাথায় নেমপ্লেট বিহীন একটা মাইক্রোবাসকে স্টার্ট নিতে দেখা গেল। টিনা ফোন শেষ করে এসে দেখে সব কিছুই নিশ্চুপ হয়ে গেছে। রূপমের লাশ পড়ে আছে মাটিতে।

নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারল না সে। বাইরে বেরিয়ে এল। মৃতদেহের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। [গল্পে এই পর্যায়ে এসে রূপমের মৃত্যুর কথা লিখতে খুব কষ্ট হচ্ছে লেখকের। ] টিনা ভাবতেই পারছেনা- এতদ্রুত এতকিছু ঘটল কী করে!! একটু পরেই পুলিশ এসে ময়নাতদন্ত করাতে লাশ নিয়ে চলে গেল।

                                    –––––––––––○•○•○––––––––––– বাড়ির ছাদে পায়চারি করছে নিশি। তাকে খুব অস্থির দেখাচ্ছে। শুধু ভাবছে ডিউককে দেয়া কাজ শেষ হবে কখন। কখন ওকে ইনফর্ম করবে ডিউক। প্রতীক্ষার ঘড়িকে থামিয়ে দিয়ে এক সময় সেলফোনটা বেজে উঠল।

☻ হ্যালো... ☺ আপনার কাজটা শেষ হয়ে গেছে। ” ভরাট কণ্ঠে বলল ডিউক- “তবে আমি দুঃখিত। আপনার দেয়া শর্তটা আমি রক্ষা করতে পারিনি। ☻ কী হয়েছে, খুলে বলেন... ☺ আমি পৌঁছুবার আগেই এলাকার কিছু ছেলে রূপমকে খুব মেরেছিল। তাই ভাবছি- বাকি টাকাটা আর নেবনা।

নিশির চেহারাটা মূহুর্তেই কালোমেঘে ঢেকে গেল যেন। তবুও নিজেকে সংবরণ করে বলল- ☻ না, এলাকার ছেলেগুলোর দোষ আপনি নিজের ঘাড়ে চাপাবেন না। আপনি আপনার পাওনা পেয়ে যাবেন। আজ রাতেই আমি ফার্স্ট ট্র্যাকে আপনার একাউন্টে যুক্ত করিয়ে দিচ্ছি। আপনি আমার অনেক বড় একটা উপকার করেছেন।

এর ঋণ কোনও কিছুর বিনিময়ে শোধ করা সম্ভব নয়। ☺ আমি কি আপনার পরিচয়টা জানতে পারি?” বিগলিত কণ্ঠে ডিউক বলল। ☻ হুম... পারবেন। তবে এখন নয়। আপনাকে অন্তত কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

                                    –––––––––––○•○•○––––––––––– প্রাণাধিক প্রিয় রূপম, আশা করি তুমি খুব ভালো আছো। খুব সুখে আছো। তোমাকে ভালো থাকতেই হবে। তোমার মতো ছেলে শান্তিতেই থাকতে পারে। তাদের স্থান হয় স্বর্গে।

আমি জানি, তুমি খুব একাকীত্ব বোধ করছো। শুন, আমি কথা দিচ্ছি- তোমাকে এভাবে বেশিক্ষণ অতিবাহিত করতে হবেনা। বুঝে নিও। আমি একটুও অনুতপ্ত নই। বরং আমি গর্বিত তোমাকে সেই মেয়েটার খপ্পর থেকে মুক্তি দিতে পেরে।

আমাকে তুমি ভুল বুঝনা প্রিয়। আমি তোমার ভালোই চেয়েছি। ভালোই করেছি। ওই মেয়েটা একটা হিংসুটে। তুমি আমাকে ভালোবাসো জেনে সে তোমাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল।

তুমি তার জ্বালে বন্ধি হয়েছিলে। তাই। জানো! ওরা তোমাকে অনেক মেরেছে। আমি তোমাকে মারতে বলিনি। তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে।

তাইনা...। অনেক ব্যাথা পেয়েছিলে তুমি। এটা জানতে পেরে আমি খুব কেঁদেছি। এখনও কাঁদছি। আর কাঁদবোনা।

তোমাকেও আর একা একা পড়ে থাকতে হবে না সোনা...। আমিও আসছি। তোমার কাছে। আমরা দু-জনে হাতে হাত রেখে, দূর আকাশের তারাদের লুকোচুরি খেলা দেখবো। আকাশের সব কয়টা তারা একটা একটা করে গুণবো।

কী মজা হবে তখন। লক্ষ্মীটি আমার। আর একটু অপেক্ষা করো। আমি আসছি... উপরের চিঠিটা পাওয়া গেছে নিশির হাতের মুঠোয়। এটা লেখার পর ও বোধ হয় বেশি সময় পায়নি।

রিডিং টেবিলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে গিয়েছিল। চিরনিদ্রায়। চলে গেছে সে এক অসীম জীবনে। এক হাতে চিঠি; অপর হাতে কফির মগ। এখনও কিছু কফি অবশিষ্ট্য রয়েছে।

টেবিলের মাঝে পড়ে আছে বিষাক্ত ঘুমের অষুধ নিকোটা’র প্যাকেট। রিডিং টেবিলটা ছিল ওর বেডরুমেই। অনেক বেলা হবার পরও যখন নিশি রুম থেকে বের হচ্ছিলনা, দরজা ভেঙ্গে দেখা গেল সে ঘুমিয়ে রয়েছে পড়ার টেবিলে। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ল খবর। টিনা অনুতপ্ত হলো।

ডিউক বুঝতে পারল সে কার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। এরপর ডিউক আর কোনও খুন করেনি। জীবনটা যে আসলেই সিগারেটের ধোঁয়া। চোখের সামনে দিব্যি দেখা যায়। অথচ একটু পরেই তা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।

▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌▌ খবরে প্রকাশঃ সকাল ১০:০৫। রবিবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০০৭। বিশিষ্ট তরুন গল্পকার এবং ব্লগার রূপম গতকাল রাতে রহস্যজনকভাবে খুন হয়েছেন। রাতেই ডিএমপি পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে রূপমের মরদেহ আজ সকালে গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গায় স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

গুলিবিদ্ধাবস্থায় খুন হলেও তার শরীরে মারধর ও অনেক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে তার সর্বশেষ গার্লফ্রেন্ড এবং তার হবু স্ত্রী টিনা শ্যামপুর থানায় অজ্ঞাতনামা ৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড মামলা দায়ের করেছেন। রেজা ঘটক, ব্লগারনিউজ২৪.কম। নিউজ আপডেট: দুপুর ১২:১০। রবিবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০০৭।

গল্পকার ও ব্লগার রূপম হত্যাকান্ড রহস্য নাটকীয় মোড় নিয়েছে। এই খুনে তার প্রেমিকা নিশির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তবে প্রকৃত খুনি এখনও ধরাছোয়ার বাইরে। ধারণা করা হচ্ছে- ব্যক্তিগত মনোমালিন্যের কারণে নিশি কোনও পেশাদার খুনি দ্বারা তাকে খুন করিয়েছিলেন। আজ দুপুরে নিশির একটা সুইসাইড নোট প্রকাশ হবার পর এমনটাই বলেছেন তদন্তকারী দল।

একই সাথে নিশির বান্ধবী ও রূপমের সাময়িক প্রেমিকা টিনা তার গতকালের দায়ের করা তার মামলাটি তুলেন নেয়। তবে এই ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে একই মর্মে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। তদন্ত চলছে আপন গতিতে। রেজা ঘটক, ব্লগারনিউজ২৪.কম। উৎসর্গঃ প্রিন্স হেক্টর, অপু তানভীর, দিকভ্রান্ত*পথিক কে..
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।