গত পর্বে “ব্রেনওয়েভ এনট্রেইনমেন্ট” প্রযুক্তির সাথে আমার পরিচিত হবার গল্পটা বলেছিলাম। এই পর্বে মানুষের জীবনে এই প্রযুক্তির ব্যবহার সম্বন্ধে বলব।
উন্নত বিশ্বে এই প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যপক ও বিস্তৃত। এর অন্যতম প্রধান ২ টি কারণ হচ্ছেঃ-
(১) এটি খুব কার্যকরী একটি পদ্ধতি
(২) এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরী করা পণ্য ব্যবহার করা খুব সহজ। শুধুমাত্র শব্দের মাধ্যমে তৈরী করা পণ্য (মিউজিক) যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে।
আপনি যদি গত পর্বের লেখাটা পড়ে থাকেন তাহলে হয়তোবা আপনার মনে আছে যে, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের ব্রেন ও মনের বেশ কিছু কার্যক্রম ও অবস্থা শুধুমাত্র বিশেষ প্রকৃতির শব্দ অথবা আলোর মাধ্যমে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এ কারণে উন্নত বেশ কিছু দেশে শুধুমাত্র এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্লিনিক্যালি কিছু মানসিক সমস্যার চিকিৎসাও করা হয়।
সাধারণভাবে উন্নত দেশগুলোতে এই প্রযুক্তির নিম্নরুপ ব্যবহারগুলো বেশী হয়ঃ
১। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও প্রশান্তি লাভ
২। মেডিটেশন করা (এই প্রযুক্তির সাহায্যে অল্প সময়ের মধ্যে মনকে মেডিটেশনের বিভিন্ন স্তরে নিয়ে যাওয়া যায় এবং এই স্তরগুলোতে যতক্ষণ ইচ্ছা মনকে স্থির করে রাখা যায়)
৩।
সৃজনশীলতা বাড়ানো এবং সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা
৪। ঘুম আসতে সাহায্য করা ও ঘুমের সমস্যা দূর করা
৫। মনোযোগ বৃদ্ধি করা
৬। সাধারণ মাথাব্যথা কমানো এবং সম্পূর্ণ রুপে দূর করা
৭। মাইগ্রেন এর ব্যথা কমানো
৮।
স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করা
৯। না ঘুমিয়ে শরীর ও মনের গভীর বিশ্রাম দেয়া
১০। ওজন কমাতে সাহায্য করা
১১। বদ-অভ্যাস দূর করা
১২। মন নিয়ন্ত্রণ করা
১৩।
মানসিক অবসাদ, বিষন্নতা ও অস্থিরতা দূর করা
১৪। মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা
১৫। শরীর থেকে মন আলাদা হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হওয়া। ইংরেজীতে এটিকে Out of Body Experience অথবা সংক্ষেপে OBE বলে। পুরো ব্যপারটি আমার কাছে এখনও খুব অদ্ভুত লাগে।
আমি এই ধরণের কিছু করার ব্যপারে এখন পর্যন্ত আগ্রহ বোধ করিনি। পুরো ব্যপারটি কতটুকু সত্য তাও জানিনা। তবে বিদেশী কিছু ব্লগ এবং সাইটে কেউ কেউ এ ধরণের অভিজ্ঞতা অর্জনের কথা বলেছেন।
১৬। দূর অনুধাবনে সাহায্য করা।
এটিও কতটুকু সত্য জানিনা। বিদেশী কিছু ব্লগ এবং সাইটে কেউ কেউ এ ধরণের অভিজ্ঞতা অর্জনের কথাও বলেছেন।
১৭। Lucid Dream এর অভিজ্ঞতা অর্জন।
(Lucid Dream হচ্ছে এমন এক ধরণের স্বপ্ন যাতে যে ব্যক্তি স্বপ্ন দেখেন তিনি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন যে তিনি স্বপ্ন দেখছেন।
আপনি যদি কখনো এই ধরণের স্বপ্ন দেখেন তাহলে স্বপ্নের মধ্যেই আপনি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন যে আপনি স্বপ্ন দেখছেন। এর ফলে আপনি আপনার মানসিক শক্তি প্রয়োগ করে স্বপ্নের মধ্যেই অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন!
এই ধরণের স্বপ্ন যারা দেখেছেন বলে দাবি করেছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ এরকমও বলেছেন যে এই ধরণের স্বপ্ন দেখার সময় তারা নিজের ইচ্ছামত এমন অনেক কিছুও করেছেন যা বাস্তবে করা সম্ভব না যেমনঃ সুপারম্যানের মতন উড়তে পারা!!!
সত্যিই খুব বিস্ময়কর! তাই না?
উপরে দেয়া ব্রেনওয়েভ এন্ট্রেইনমেন্টের প্রায় সব ব্যবহারের (১ -১৪ নম্বর পর্যন্ত) ফল বিজ্ঞানীদের গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত। তবে ১৫ - ১৭ নম্বর ব্যবহারগুলো হল কিছু কৌতুহলী মানুষের ব্যক্তিগত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল।
এখন প্রশ্ন হল বাংলাদেশীদের জন্য এই প্রযুক্তির কি ব্যবহার আছে?
ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি এই প্রযুক্তির ব্যবহার অন্য দেশের মানুষের মত অনেক বাংলাদেশীর জীবনেও অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবে।
খুব সহজভাবে একটা বিষয় নিয়ে বলছি।
মনে করেন, আপনি বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা, সমস্যা ও আরও নানাবিধ কারণে ঠিকমত ঘুমাতে পারেন না। ঠিকমত ঘুমাতে না পারার কারণে আপনার মেজাজ ঠিক থাকেনা, সারাদিন আপনার মধ্যে একটা ঘুম ঘুম ভাব থাকে, আপনি কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না, কাজে ভুল হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
আপনার ঘুমের সমস্যা স্বল্পমেয়াদী হোক বা দীর্ঘমেয়াদী হোক এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রাকৃতিকভাবে আমাদের যেভাবে ঘুম আসে (প্রাকৃতিকভাবে আমাদের ব্রেন এর কার্যক্রমে যে পরিবর্তনগুলো হওয়ার কারণে ঘুম আসে) তা আপনি নিশ্চিত করতে পারবেন এবং আপনার ঘুমের সমস্যার সমাধাণ করতে পারবেন।
আপনি যদি ঘুমের সমস্যার সমাধাণ করতে পারেন তাহলে এই সমস্যা সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সমস্যাগুলোরও সমাধাণ হয়ে যাবে। ফলাফলস্বরুপ আপনার জীবনে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
এভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপনি আপনার জীবনের বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারবেন।
তাছাড়া একবার ভাবুনতো আমাদের দেশে কত মানুষ কত ধরণের সমস্যায় আক্রান্ত। সারাদিনের ব্যস্ত জীবনে কত মানুষের একটু রিলাক্সড হওয়ার সুযোগ হয়না। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুব সহজে তারা মানসিক চাপ কমাতে পারবে এবং নিয়মিত ব্যবহারে আগের চেয়ে সহজে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
আবার যারা বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন মানসিক চাপে ও অস্থিরতায় ভুগছে তাদের জন্য এই প্রযুক্তির দীর্ঘমেয়াদী নিয়মিত ব্যবহারে মানসিক অস্থিরতা অনেক কমে যাবে কারণ কোন কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে যে দীর্ঘদিন ব্যবহারে এই প্রযুক্তির সাহায্যে আমাদের ব্রেন এ স্থায়ী পরিবর্তন আনা সম্ভব।
তাছাড়া যারা নিজের সৃজনশীলতাকে উজ্জীবিত করার মাধ্যমে তাদের সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চায় তারাও এই প্রযুক্তি ব্যবহারে উপকৃত হবেন। সৃজনশীলতা বাড়ানো অথবা এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির কার্যকারিতা বৈজ্ঞানিক গবেষনায় প্রমাণিত।
যাদের মনোযোগের সমস্যা আছে তারা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মনোযোগ আরও বাড়াতে পারবে।
যারা তুলনামুলক ভাবে অল্প সময়ে মেডিটেশনের সুফল পেতে চান এবং নিজের ইচ্ছামত মেডিটেশনের বিভিন্ন স্তরে নিজেকে নিয়ে যেতে চান তাদের জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহারের বিকল্প খুব একটা আছে বলে আমার মনে হয় না। সত্যি কথা বলতে কি, বছরের পর বছর মেডিটেশন চর্চা করে মেডিটেশনের যে সুফল পাওয়া যায় তার চেয়ে অনেক কম সময়ে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মেডিটেশনের সুফল পাওয়া সম্ভব।
এছাড়াও এই প্রযুক্তির সাহায্যে নিজের মনকে সম্মোহিত করার মাধ্যমে যে কেউ নিচের কাজগুলো অনেক সহজে করতে পারবে-
• মোটিভেশন বাড়ানো
• বদঅভ্যাস দূর করা
• আত্মবিশ্বাস বাড়ানো
• মানসিক উদ্বিগ্নতা কমানো ইত্যাদি ইত্যাদি
তবে আমাদের দেশে এই প্রযুক্তির ব্যবহার তো দূরের কথা এই ধরণের একটি প্রযুক্তি যে আছে তাই তো মানুষ জানেনা।
আর এ কারণে এই প্রযুক্তির ব্যবহার ও এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরী করা কিছু পণ্য (মিউজিক) বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যে আমি নিচের ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছি-
Brainwaveoptimizer.com
এটির মাধ্যমে বিদেশের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে এই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা মিউজিক বিক্রি করছি। বর্তমানে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমি যে মিউজিকগুলো বিক্রি করছি তাতে আপনি নিচের কাজগুলো করতে পারবেনঃ
১। সহজে মানসিকভাবে রিলাক্সড হতে পারবেন এবং আপনার মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন
২। স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের সমস্যা দূর করতে পারবেন
৩।
আপনার সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারবেন
৪। খুব সহজেই মনকে মেডিটেশনের গভীর স্তরে নিয়ে যেতে পারবেন
৫। আত্মসম্মোহন করার মাধ্যমে নিজের মোটিভেশন ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারবেন
৬। আত্মসম্মোহন করার মাধ্যমে মানসিক উদ্বিগ্নতা কমাতে পারবেন
৭। আপনার মনোযোগ বাড়াতে পারবেন
৮।
মানসিক অবসাদ দূর করতে পারবেন
৯। শরীর ও মনকে অল্প সময়ের মধ্যে গভীর বিশ্রাম দিতে পারবেন
আপাতত আমি এই ধরণের কাজগুলো করার জন্য মিউজিকগুলো তৈরী করেছি। ভবিষ্যতে সময় ও সুযোগমত আরও বিভিন্ন ধরণের কাজ করার জন্য নতুন নতুন মিউজিক তৈরী করার ইচ্ছা আছে।
এখন একটা কথা আপনাকে জানিয়ে রাখি। বর্তমানে আমি দুটো মিউজিক নিয়ে কাজ করছি।
এই দুটো মিউজিক তৈরি করা হলে আমি আমার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনাদের ফ্রি ডাউনলোড করতে দিব।
যা হোক আজকেও অনেক কথা বলে ফেললাম। আর কথা বাড়াবো না।
আগামীপর্বে ব্রেনওয়েভ এন্ট্রেইনমেন্ট প্রযুক্তির সংক্ষিপ্ত একটা ইতিহাস আপনাদের জানাব। সেই পর্যন্ত ভাল থাকুন।
সুস্থ থাকুন।
~ এহসান
(চলবে.........)
আগের পর্বঃ
পর্ব -০১: বিস্ময়কর প্রযুক্তি ব্রেনওয়েভ এনট্রেইনমেন্টঃ (পরিচয় হওয়ার গল্প)
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই লেখাটির সর্বস্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।