গত পর্বে আমি “ব্রেনওয়েভ এনট্রেইনমেন্ট” প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিভাবে আমাদের ব্রেন এর কাজ ও মনের অবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবর্তন করা যায় সে ব্যাপারে আপনাদের জানিয়েছিলাম। আজকের পর্বে আমাদের ব্রেন-এ যে ব্রেনওয়েভগুলো পাওয়া যায় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
আগের পর্ব যদি পড়ে থাকেন তাহলে ব্রেনওয়েভ ও ব্রেনওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি কি সে বিষয়ে আশা করি আপনাদের একটা ধারণা হয়েছে। এ দুটো বিষয় সম্বন্ধে যদি আপনি না জানেন তাহলে আজকের পর্বের কিছু কিছু বিষয় আপনি বুঝতে পারবেন না। এ দুটো বিষয় না জানলে আপনাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে আজকের পর্ব পড়ার আগে পর্ব-০৪ এ গিয়ে এ দুটো বিষয় সম্বন্ধে একটু পড়বেন।
এবার মূল কথায় আসি।
বিজ্ঞানীরা মানুষের ব্রেন এ যে ব্রেনওয়েভগুলো পেয়েছেন ফ্রিকোয়েন্সির উপর ভিত্তি করে সেগুলোকে মোট পাঁচ (৫) ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।
১. ডেল্টা
২. থিটা
৩. আলফা
৪. বিটা
৫. গামা
১. ডেল্টা ব্রেনওয়েভ
ডেল্টা ব্রেনওয়েভ হচ্ছে সবচাইতে ধীরগতির ব্রেনওয়েভ। সবচেয়ে ধীরগতির ব্রেনওয়েভ মানে হচ্ছে এই শ্রেণীর ব্রেনওয়েভের ফ্রিকোয়েন্সি সবচেয়ে কম।
ফ্রিকোয়েন্সি সীমাঃ ০.৫ -৩.৯ হার্জ
এই ব্রেনওয়েভের সাথে সম্পর্কিত মানসিক অবস্থাঃ
i) গভীর ঘুম (ঘুমের এই স্তরে আমরা স্বপ্ন দেখিনা)
ii) শরীর ও মনের স্ব-নিরাময় (self-healing)
iii) শরীর ও মনের সবচেয়ে গভীর বিশ্রাম
২. থিটা ব্রেনওয়েভ
ডেল্টা ব্রেনওয়েভ এর চেয়ে দ্রুতগতির কিন্তু আলফা ব্রেনওয়েভ এর চেয়ে ধীর গতির ব্রেনওয়েভ হচ্ছে থিটা ব্রেনওয়েভ।
যখন এই ব্রেনওয়েভ সবচেয়ে সক্রিয় বা নিয়ন্রণকারী ব্রেনওয়েভ হিসেবে থাকে তখন সম্মোহিত করার মাধ্যমে নিজেদের মনকে অনেক সহজে পরিবর্তন করা যায়।
ফ্রিকোয়েন্সি সীমাঃ ৪.০- ৭.৯ হার্জ
এ ব্রেনওয়েভের সাথে সম্পর্কিত মানসিক অবস্থাঃ
i) ঘুমের হাল্কা স্তর (এই স্তরে আমরা স্বপ্ন দেখি)
ii) মনের সম্মোহিত অবস্থা (এই স্তরে মনকে নিয়ন্ত্রণ ও নতুনভাবে প্রোগ্রামিং করা সম্ভব। সঠিকভাবে মনকে প্রোগ্রামিং করতে পারলে আপনি আপনার মনে নতুন ধরণের চিন্তাধারা যোগ করতে পারবেন এবং পুরনো চিন্তাধারাকে পাল্টে ফেলতে পারবেন। )
iii) তন্দ্রাভাব
iv) থিটা ব্রেনওয়েভের সীমার উপরের অংশটি (মোটামুটিভাবে আপনি ৬.০ - ৭.৯ হার্জের ফ্রিকোয়েন্সিকে এই অংশের মধ্যে ধরতে পারেন) হচ্ছে আমাদের মনের সৃজনশীলতার ক্ষমতা এবং কল্পনা করার সাথে সম্পর্কিত।
v) থিটা স্তরে থাকা অবস্থায় আপনার মনের সচেতন ও অচেতন অংশের যোগাযোগ অনেক সহজে হয়।
৩. আলফা ব্রেনওয়েভ
আমরা যখনই চোখ বন্ধ করি তখনই আলফা ব্রেনওয়েভ তৈরী হয়। আবার যখন আমরা ঘুম থেকে যেগে উঠি তখনও ব্রেন-এ প্রচুর পরিমাণে আলফা ব্রেনওয়েভ তৈরী হয়। আলফা ব্রেনওয়েভ যে কোন মানুষের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্রেনওয়েভ কারণ এটি আমাদের সম্পূর্ণ সচেতন অংশের সাথে অবচেতন ও অচেতন অংশের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
ফ্রিকোয়েন্সি সীমাঃ ৮.০ – ১৩.৯ হার্জ
এই ব্রেনওয়েভের সাথে সম্পর্কিত মানসিক অবস্থাঃ
i) জাগ্রত কিন্তু সম্পূর্ণ জেগে থাকা অবস্থার চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশী পরিমাণে রিলাক্সড।
ii) মানসিক শিথিলতা (Mental Relaxation) ও কম পরিমাণে মানসিক চাপ যুক্ত অবস্থা
iii) থিটার মত আলফা ব্রেনওয়েভ যদি কোন সময় আপনার নিয়ন্ত্রণকারী ব্রেনওয়েভ হয় তাহলে সেই সময় আপনার মনকে প্রোগ্রামিং করা অনেক সহজ হয়।
iv) থিটা ব্রেনওয়েভ এর নিচের অংশের সাথে (মোটামুটিভাবে আপনি ৮.০ – ৯.০ হার্জের ফ্রিকোয়েন্সিকে এই অংশের মধ্যে ধরতে পারেন) মনের সম্মোহিত অবস্থার যোগাযোগ আছে বলে বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রমাণ পাওয়া গেছে।
v) মনের সৃজনশীল অবস্থা
vi) দিবাস্বপ্ন দেখা এবং কোন কিছু কল্পনা করা
৪. বিটা ব্রেনওয়েভ
ব্যতিক্রম কিছু না হলে, আমরা সম্পূর্ণ ভাবে জেগে থাকা অবস্থায় নিয়ন্ত্রণকারী ব্রেনওয়েভ হিসেবে বিটা ব্রেনওয়েভই সবচেয়ে বেশী সক্রিয় থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণে বিটা ব্রেনওয়েভ না থাকলে মানসিক অস্থিরতা, বিষন্নতা ও আবেগজনিত নানাবিধ জটিলতা তৈরী হয়।
ফ্রিকোয়েন্সি সীমাঃ ১৪.০ – ৩৯.৯ হার্জ
এই ব্রেনওয়েভের সাথে সম্পর্কিত মানসিক অবস্থাঃ
i) সম্পূর্ণরুপে জাগ্রত
ii) উত্তেজিত
iii) মানসিক চাপ ও মানসিক অস্থিরতা
iv) নতুন কোন দক্ষতা অর্জন অথবা নতুন কিছু শেখা
v) মনোযোগ দিয়ে কোন কাজ করা
vi) উদ্বিগ্নতা
৫. গামা ব্রেনওয়েভ
গামা ব্রেনওয়েভ হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুতগতির ব্রেনওয়েভ। এই ব্রেনওয়েভ অতি মনোযোগ এবং খুবই উচ্চস্তরের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কিত।
ফ্রিকোয়েন্সি সীমাঃ ৪০.০ হার্জ এবং এর ঊর্ধ্বে
এই ব্রেনওয়েভের সাথে সম্পর্কিত মানসিক অবস্থাঃ
i) উচ্চস্তরের মানসিক দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তা
ii) খুব দ্রুত কোন কিছু শিখতে পারা
iii) খুব দ্রুত কোন কিছু স্মরণ করতে পারা
iv) খুব দ্রুত কোন কিছু চিন্তা করতে পারা
v) চরম পর্যায়ের মানসিক উত্তেজনা ও অস্থিরতা
আশা করি আজকের পর্ব পড়ে বিভিন্ন ধরণের ব্রেনওয়েভ সম্বন্ধে আপনাদের কিছুটা হলেও ধারণা হয়েছে।
এই প্রযুক্তি যেহেতু আমাদের ব্রেন এর কাজ ও মনের অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাই বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন হয়। আগামী পর্বে আমি এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
~ এহসান
(চলবে.........)
আগের পর্বঃ
১।
পর্ব -০১: বিস্ময়কর প্রযুক্তি ব্রেনওয়েভ এনট্রেইনমেন্টঃ (পরিচয় হওয়ার গল্প)
২। পর্ব -০২: বিস্ময়কর প্রযুক্তি ব্রেনওয়েভ এনট্রেইনমেন্টঃ (আমাদের জীবনে এর ব্যবহার)
৩। পর্ব -০৩: বিস্ময়কর প্রযুক্তি ব্রেনওয়েভ এনট্রেইনমেন্টঃ (ইতিহাস)
৪। পর্ব -০৪: বিস্ময়কর প্রযুক্তি ব্রেনওয়েভ এনট্রেইনমেন্টঃ (কিভাবে এই প্রযুক্তি কাজ করে)
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই লেখাটির সর্বস্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।