আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের ক্রিকেট‘পরিবারতন্ত্র’

ক্রিকেটের মাধ্যমে ভারতের ‘অমরনাথ’ পরিবার, পাকিস্তানের ‘মোহাম্মদ’ পরিবার শুধু নিজ দেশেই না, সুপরিচিত হয়েছেন পুরো ক্রিকেটবিশ্বেই। ক্রিকেটের একেবারে শুরুর দিকে ইংল্যান্ডের ‘গ্রেস’ পরিবারও ছিলেন অগ্রদূতের ভূমিকায়। আর অস্ট্রেলিয়ার ওয়াহ ভাইদের স্মৃতি তো এখনো বেশ উজ্জ্বল ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। ক্রিকেটের এই বিখ্যাত পরিবারগুলো নিয়ে ইতিমধ্যেই একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশেও এমন কিছু পরিবার আছে, যাঁদের অনেক অবদান আছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অগ্রগতির পেছনে।

নিজ দেশের সেই কৃতী পরিবারগুলোর কথাই থাকছে প্রথম আলো অনলাইনের পাঠকদের জন্য।
এখন হয়তো অনেকেই ভুলে গেছেন, কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের একেবারে শুরুর দিকের এক পরিচিত নাম আজহার হোসেন শান্টু। তখনও টেস্ট ক্রিকেট খেলার সৌভাগ্য অর্জন করেনি বাংলাদেশ। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মাত্র সাতটি একদিনের ম্যাচেই সীমাবদ্ধ ছিল আজহার হোসেনের ক্যারিয়ার। তবে একটি কারণে আজীবনই বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্মরণীয় হয়ে থাকবে এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের নাম।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম অর্ধশতকটি যে এসেছিল আজহার হোসেন শান্টুর  ব্যাট থেকেই।
চাচা আকরামের অবদান অবশ্য অন্যরকমই। তাঁর ব্যাট না হাসলে হয়তো তামিম-নাফিসের এত কিছু করা হতো না। হ্যাঁ, ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়ের কথাই বলা হচ্ছে। হল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টি-বিঘ্নিত ওই ম্যাচটি হয়তো ভুলতে পারবেন না বাংলাদেশের কোনো ক্রীড়াপ্রেমীই।

প্রতিকূল পরিবেশে আকরামের অবিস্মরণীয় ৬৭ রানের ওপর ভর করেই বাংলাদেশ সেদিন হল্যান্ডকে হারিয়ে উঠে গিয়েছিল সেমিফাইনালে। পরবর্তী সময়ে সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয় দেশের, আর ফাইনালে কেনিয়াকে হারানোর ওই ইতিহাস তো সবারই জানা। হল্যান্ডের বিপক্ষে আকরামের ওই ইনিংসটি ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস রচনা করে দেওয়ার মতোই। অথচ, কী প্রতিকূল পরিবেশে, কী ভয়াবহ চাপের মধ্যেই না আকরাম খানকে সেদিন ব্যাট করতে হয়েছিল। আকরাম সেই ৬৭ রান করেছিলেন পুরো দেশের প্রত্যাশার ভার বয়ে।

অসাধারণ ওই ইনিংসটিকে অনেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসের মর্যাদা দিয়ে থাকেন। ১৯৯০ সালে শারজাহতে অস্ট্রেলেশিয়া কাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি খেলেছিলেন ৫৪ রানের ইনিংস। আর খুবই মজার ব্যাপার যে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম শতকটিও এসেছিল এই একই পরিবার থেকে। ১৯৯৯ সালে ঢাকায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০১ রান করা মেহরাব হোসেন সম্পর্কে শান্টুরই ভাতিজা। চাচা সুযোগ না পেলেও অপি বাংলাদেশের পক্ষে মাঠে নেমেছিলেন নয়টি টেস্টে।

ওয়ানডে খেলেছেন ১৮টি। তবে প্রতিশ্রুতি জাগিয়েও মেহরাবের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা খুব দীর্ঘ হয়নি। ২০০৩ সালের পর দেশের হয়ে আর কোনো ম্যাচ খেলেননি মেহরাব।

১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচটিতে একসঙ্গেই মাঠে নেমেছিলেন দুই ভাই। মিনহাজুল আবেদীন (নান্নু) আর নুরুল আবেদীন।

শ্রীলঙ্কায় এশিয়া কাপের সেই ম্যাচে বাংলাদেশ খেলেছিল ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, জাভেদ মিয়াঁদাদ, মুদাসসর নজরদের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের বিপক্ষে। বড় ভাই নুরুল আবেদীন ইমরানের শিকারে পরিণত হয়ে শূন্য রানেই ফিরেছিলেন সাজঘরে। আর মিনহাজুল আবেদীন ২৩টি বল মোকাবিলা করে সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন মাত্র ছয় রান। তাঁকে সাজঘরে পাঠিয়েছিলেন ওয়াসিম আকরাম। নুরুল আবেদীন এরপর খেলতে পেরেছেন মাত্র তিনটি ম্যাচ।

চার ম্যাচের সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারে তাঁর সংগ্রহ ছিল মাত্র ১৫ রান। তবে বড় ভাই না পারলেও ক্রিকেটবিশ্বে খ্যাতি কুড়িয়েছেন মিনহাজুল আবেদীন। ২৭টি একদিনের ম্যাচে অংশ নিয়ে জমা করেছেন ৪৫৩ রান। এখনকার হিসেবে খুব আহামরি কোনো পরিসংখ্যান হয়তো নয়। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের টেস্ট-পূর্ব যুগে মিনহাজুল ছিলেন অন্যতম নির্ভরতার প্রতীক।

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের পেছনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল নান্নুর। টেস্ট খেলুড়ে কোনো দলের বিপক্ষে সেটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম জয়। সেই ম্যাচে ব্যাট হাতে ১৪ রানের পর নান্নু বল হাতেও নিয়েছিলেন একটি উইকেট। সেটিই ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে।
তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বিখ্যাত পরিবারটির কথা এখনো বলাই হয়নি।

চট্টগ্রামের ‘খান’ পরিবার। চাচা আকরাম খানের মতোই বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে নক্ষত্রের মতো জ্বলছেন ভাতিজা তামিম ইকবাল। আরেক ভাই নাফিস ইকবাল অবশ্য নিজেকে বেশ দুর্ভাগাই ভাবতে পারেন। একটা সময় নাফিসকে জাতীয় দলের ভবিষ্যত্ অধিনায়ক হিসেবেই বিবেচনা করা হতো, অথচ ধারাবাহিক চোটের শিকার হয়ে একটা সময় দৃশ্যপট থেকেই হারিয়ে গেলেন তিনি। তবে তামিমের মতো দেশের হয়ে টেস্ট সেঞ্চুরি আছে নাফিসেরও।

২০০৫ সালে ঢাকায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নাফিসের রুদ্ধশ্বাস সেঞ্চুরিতেই টেস্ট ড্র করে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ।
দেশের হয়ে আটটি টেস্ট ও ৪৪টি ওয়ানডে খেলেছেন আকরাম খান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তাঁর সংগ্রহ ৯৪৪ রান। ২০০৩ সালে তিনি বিদায় নেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। এ দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আকরাম খান এক গুরুত্বের জায়গাতেই থেকে যাবেন চিরকাল।


চাচার ঋণ এই মুহূর্তে বহন করে চলেছেন তামিম ইকবাল। এ দেশের ক্রিকেটের এক হার্টথ্রব সুপার-স্টার। বাম হাতে প্রতিপক্ষকে ‘খুন’ করতে যার মোটেও দ্বিধা নেই। ২০০৭ সালে অভিষেকের পর খেলে ফেলেছেন ১২২টি ওয়ানডে। নামের পাশে জমা হয়েছে ৩৬৩৯ রান।

২৮টি টেস্ট খেলে করেছেন ২০১০ রান। ২৪ বছর বয়সী তামিম যে আরও অনেক দূরই যাবেন, সেটা নিঃসন্দেহেই বলা যায়। কারণ এখনই তাঁকেই গণ্য করা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ওপেনার হিসেবে।
নাফিস ২০০৬ সালের পর দেশের হয়ে আর খেলেননি। ১১টি টেস্ট আর ১৬টি ওয়ানডে খেলেই বিরতিতে চলে যেতে হয়েছিল তাঁকে।

তবে হাল ছাড়েননি। চোট-টোট কাটিয়ে আবার ক্রিকেটে ধারাবাহিক হয়েছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই রান করে চলেছেন। স্বপ্ন দেখেন আবার জাতীয় দলে ফেরার। নাফিস নিজেকে ফিরে পেলে, ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে দেশের ক্রিকেট আবার উপভোগ করবে দুই ভাইয়ের শৈলী।

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ইনিংসের গোড়াপত্তন করছেন দুই ভাই—এমন স্বপ্নটা তো অসম্ভব কিছু নয়!

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.