দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সব দলের মধ্যেই রয়েছে উৎকণ্ঠা। বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা কোনোভাবেই ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না। অন্যদিকে বর্তমান সংবিধানের আওতায় তত্ত্বাবধায়ক কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে একদলীয় কোনো নির্বাচনে তারাও যাবে না। ইসলামী মনোভাবসম্পন্ন রাজনৈতিক দলগুলো কেউ তাকিয়ে আছে বিএনপির দিকে, আবার কারও দৃষ্টি জাতীয় পার্টির অবস্থানের দিকে।
সরকার থেকে চেষ্টা চলছে জাতীয় পার্টিকে টেনে এনে নির্বাচন সম্পন্ন করার। এ পরিস্থিতিকে নির্বাচনের জন্য অনিশ্চিত পরিবেশ বলে মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি কোনোভাবেই সর্বদলীয় নির্বাচনের অনুকূল নয়। ছাড় দেওয়ার মানসিকতা বড় দুই দলের কারোরই নেই। বিরোধী দল হতে রাজি নয় কেউই।
এ কারণে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জটিল মেরুকরণ তৈরি হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে খোদ সরকারি দলের কাছেও সার্বিক পরিস্থিতি স্পষ্ট নয়। তারাও বুঝতে পারছে না শেষ পর্যন্ত সব দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নাকি একতরফা নির্বাচন হবে। এ কারণে সরকারি দলের অনেক এমপিই দুই ধরনের প্রস্তুতি রাখছেন। মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির নেতারাও সংশয়ে রয়েছেন নির্বাচন আদৌও হবে কি না তা নিয়ে।
বিএনপিও আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখছে। আগামী নির্বাচন বিষয়ে জানতে চাইল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংবিধান মোতাবেক যথাসময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সব সময়ই নির্বাচনের পক্ষে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছে। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন স্থানে জনসভায় নৌকা মার্কায় ভোট চাইছেন।
আওয়ামী লীগ এখন নির্বাচনমুখী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছি। আর বিএনপি সে নির্বাচন বানচাল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের লোকজনদের উসকে দিচ্ছে। তারা নির্বাচন চায় না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের সংশয় নেই।
বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ামাত্রই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। সাংবিধানিক পদ্ধতিতে যথাসময়েই নির্বাচন হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। যে কারণে তারা নির্বাচন নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চরম মিথ্যাচার করে।
অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আগামী নির্বাচন নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচন নিয়ে শুধু দেশবাসীই নয়, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও উৎকণ্ঠিত।
তারা সব দলের অংশগ্রহণে সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য একটি সংসদ নির্বাচন দেখতে চায়। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে এ ব্যাপারে একটি উদ্যোগও নিয়েছিলেন মহাসচিব নিজে। কিন্তু সরকারের কারণে তা সফল হয়নি। কারণ তারা ইচ্ছা করেই সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দিয়ে এ সংকটের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু দেশের নব্বই ভাগ মানুষ আজ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়।
কারণ ভোটের মাধ্যমেই তারা এ সরকারকে পরাজিত করতে চায়। জনগণ যদি সেই সুযোগ না পায় তবে তাদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ কীভাবে ঘটবে, তা অগ্রিম বলা সম্ভব না হলেও এটা বলা যায়_ যুগে যুগে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই সব স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। কাজেই জনগণের প্রতিক্রিয়ার বিস্ফোরণ কীভাবে ঘটবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে ভয়াবহ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে এর সব দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ বলেন, আমি মনে করি আপাতত নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই।
নির্বাচন না হলে অগণতান্ত্রিক পরিবেশে আমাদের বসবাস করতে হবে। দুই নেত্রীর সমঝোতা না হলে দেশ ও দেশের মানুষ একটা অগণতান্ত্রিক পরিবেশে বসবাসে বাধ্য হবে।
একই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমার ধারণা বাংলাদেশের কেউ বলতে পারবে না আগামী নির্বাচন হবে কি না। তবে বিরোধী দল নির্বাচন ইস্যুতে সারা দেশে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ যদি চেষ্টা করে তারা নির্বাচন না করে ক্ষমতায় থাকবে সেটি কারও জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে না।
সে ক্ষেত্রে সমঝোতার সম্ভাবনাও খুব কম। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রচণ্ড মনস্তাত্তি্বক যুদ্ধ চলছে। দুই দলের এ যুদ্ধে জনগণের ভেতর মারাত্দক প্রভাব পড়ছে। অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতা গ্রহণ করলে তা দেশ ও মানুষের জন্য খুবই খারাপ হবে।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের মানুষ এখন চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছে।
কারণ নির্বাচন নিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে যাচ্ছে- তাতে গোটা দেশই একটা নৈরাজ্যের দিকে চলে যাবে। এতে সংঘাত একেবারে অনিবার্য হয়ে উঠছে। কোনো দলই হারতে চায় না। আবার একের ওপর আর একজনের আস্থা ও বিশ্বাসেরও অভাব প্রকট। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধও নেই।
দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্র নেই। সরকার নিজেদের স্বার্থে সংবিধান সংশোধন করে আজ বলছে- নির্বাচনে কেউ আসুক বা না আসুক এই সংবিধান রক্ষায় তারা অনড়। উৎকণ্ঠা-উদ্বেগের কারণে স্কুল-কলেজগুলোতে এবার আগেভাগেই পরীক্ষা নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কারণ খুব শীঘ্রই এ সংকটের কোনো সমাধানেরও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে যতই দিন যাচ্ছে- মানুষের উৎকণ্ঠা ও ভয়ভীতি ততই বাড়ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।