আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের কল্যাণ বয়ে আসুক মস্কো সফরের মাধ্যমে

মস্কো সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ¬াদিমির পুতিনের সঙ্গে তার ক্রেমলিন কার্যালয়ে বৈঠক করবেন। এ বৈঠকে একাত্তরের চেতনায় রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পাশাপাশি বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিভিন্ন সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভের নেতৃত্বে সে দেশের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন শেখ হাসিনা। দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হওয়া রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প বিষয়ে দুটি চুক্তি ও একটি সমঝোতা স্মারক, সামরিক ক্রয়সংক্রান্ত চুক্তি এবং কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সন্ত্রাস দমন, আইন ও বিচার ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে পৃথক ৬টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে। রুশ সরকারের আমন্ত্রণে গতকাল সোমবার সকাল সোয়া ৯টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে মস্কো রওনা হন।

তার সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম ওয়াহিদুজ্জামান এবং কৃষি, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এম কে আলমগীর, বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান, রেলওয়েমন্ত্রী মুজিবুল হক, সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ, কেবিনেট সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান, ঢাকায় রাশিয়ান দূতাবাসের চার্জ দ্য এফেয়ার্স ও সিনিয়র কর্মকর্তারা। জানা গেছে, স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে মস্কোর শেরেমেতিয়েভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন তিনি। বিমানবন্দরে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয় শেখ হাসিনাকে। সশস্ত্র বাহিনীর একটি দল তাকে সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানায়।

এ সময় দুদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ইগর ভলাদিমিরোভিচ। এ সময় রাশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম সাইফুল হক উপস্থিত ছিলেন। বিমানবন্দর থেকে কড়া নিরাপত্তায় প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রাসহ মস্কোর প্রেসিডেন্ট হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। রাশিয়া সফরকালে শেখ হাসিনা এ হোটেলে অবস্থান করবেন।

আরো জানা গেছে, সফরকালে শেখ হাসিনার তার সম্মানে ভøাদিমির পুতিনের দেয়া এক মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। এছাড়াও রাশিয়ার কাউন্সিল অব দ্য ফেডারেশন অব ফেডারেল এসেম্বলি ভেলেন্তিনা ওয়ানের চেয়ারপার্সন ম্যাট ভিয়েনকো এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের যোগাযোগ ও গণমাধ্যমমন্ত্রী নিকোলে নিকিফোরভ শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সফরের শেষ দিনে আগামীকাল বুধবার শেখ হাসিনা সে দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ‘সমকালীন বাংলাদেশ : রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা’ শীর্ষক বক্তৃতা করবেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মস্কোর অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্বে এবং জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবেন তিনি। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী মস্কোর সৈন্যদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বিখ্যাত ক্রেমলিন জাদুঘর ও বলশয় থিয়েটার এবং বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি গ্যাসপ্রম কেন্দ্র পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন। প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক মস্কো সফরের পর এটিই কোনো বাংলাদেশী শীর্ষ নেতার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর। এর আগে ২০১০ সালের নভেম্বরে শেখ হাসিনা রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক ফোরামের এক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে অংশ নেন। কী আছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও সামরিক ক্রয় চুক্তিতে : প্রধানমন্ত্রীর মস্কো সফরে স্বাক্ষরের জন্য চূড়ান্ত হওয়া রূপপুরে এক হাজার মেগাওয়াটের দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আর্থিক, কারিগরি এবং নির্মাণ পূর্ববর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য পৃথক ২টি চুক্তি ও একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরমাণু চুক্তির খসড়া অনুসারে, এতে ১ হাজার মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট থাকবে।

বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলার। তবে নির্মাণ ব্যয় কম-বেশি হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের নিরাপত্তা বিষয়ক একটি ব্যবস্থার ওপর। ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। জাপানের ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্রে পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর নিরাপত্তার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। রাশিয়া এই কেন্দ্রের পুরো সময় জুড়ে জ্বালানি সরবরাহ করবে এবং সবচেয়ে বিপজ্জনক বর্জ্য ফিরিয়ে নেবে।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শুরুর পূর্বপ্রস্তুতির জন্য ৫০ কোটি ডলারের স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট চুক্তি এবং ঢাকায় পরমাণু শক্তি তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য আরো একটি চুক্তি সই হবে। এদিকে সইয়ের জন্য চূড়ান্ত হওয়া সামরিক ক্রয়সংক্রান্ত চুক্তির খসড়া অনুসারে, রাশিয়ার কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় ঋণে ২০১৭ সালের মধ্যে আট হাজার কোটি টাকার (১০০ কোটি ডলার) সমরাস্ত্র কিনবে বাংলাদেশ। এ অস্ত্র কেনার অগ্রিম হিসেবে ঋণের ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৮০০ কোটি টাকা দিতে হবে। ঋণের সুদ হবে সাড়ে ৪ শতাংশ। জানা গেছে, এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর জন্য সাত ধরনের এবং বিমান বাহিনীর জন্য চার ধরনের সমরাস্ত্র কেনা হবে।

এছাড়াও কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সন্ত্রাস দমন, আইন ও বিচার ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে আরো ৬টি এমওইউ আজ স্বাক্ষরের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.