পেনড্রাইভের মাধ্যমে রায়ের তথ্য চুরি করেন ট্রাইব্যুনালের পরিচ্ছন্নতা কর্মী নয়ন আলী। তিনি সেই তথ্য সরবরাহ করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের সহকারী মেহেদী হাসানের কাছে। এরপরই রায় ইন্টারনেটে ফাঁস করা হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম গতকাল বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দিয়ে বলেন, নয়ন আলী তাদের হেফাজতে রয়েছে। বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।
এদিকে রায় ঘোষণার আগেই রায়ের খসড়া ফাঁস হওয়ার অভিযোগে আইসিটি আইনে শাহবাগ থানায় ৫৪, ৫৭ ও ৬৩ ধারায় গতকাল একটি মামলা দায়ের করেন পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান। মামলায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী নয়ন আলী, কর্মচারী ফারুক এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবীর সহকারী মেহেদী হাসানসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। ট্রাইব্যুনালের কর্মচারী ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল সন্ধ্যায় গোয়েন্দা অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে মেহেদী হাসানকে পুলিশ এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি।
অপর একটি সূত্র বলেছে, ফখরুলের অফিসের এক কর্মচারীসহ চারজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তবে পুলিশ তা অস্বীকার করেছে।
এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপির আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের অফিসে গতকাল বিকালে তল্লাশি চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় কয়েকটি কম্পিউটার ও বেশ কিছু কাগজপত্র জব্দ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম এ কথা জানান।
ডিবি জানায়, গ্রেফতার হওয়া নয়ন আলী দেড় বছর আগে ট্রাইব্যুনালের পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে নিয়োগ পান। তবে কম্পিউটার পরিচালনায় তিনি দক্ষ। ডিবি জানায়, নয়ন আলী সাকা চৌধুরীর রায়ের খসড়া ফাঁসের ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। সাকা চৌধুরীর আইনজীবী ফখরুল ইসলামের সহকারী মেহেদী হাসান মোটা টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ও ব্ল্যাকমেইল করে তাকে দিয়ে এ কাজ করিয়েছেন। রায় যখন ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটারে কম্পোজ করা হচ্ছিল তখন নয়ন আলী পেনড্রাইভের মাধ্যমে সেটি সাকার আইনজীবীর সহকারীকে দেন।
ডিবি ধারণা করছে, আইনজীবীর সহকারী মেহেদী হাসান তা বাইরের কোনো দেশে পাঠান। সেখান থেকেই ইন্টারনেটে তা ফাঁস করে দেওয়া হয়।
গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায়ের দিন তিনি ও তার পরিবার অভিযোগ তোলেন, ওই রায়ের কপি আগের দিনই একটি ওয়েবসাইটে পেয়েছেন তারা। এরপর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার নাসির উদ্দিন মাহমুদ গত বুধবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় এই জিডি করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রায় ঘোষণার কয়েক দিন আগে খসড়া পর্যায়ে তা ফাঁস হয়ে থাকতে পারে।
ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটার থেকেই খসড়া 'লিকড' হয়েছে। রায় ফাঁসের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের করা জিডির তদন্তে গোয়েন্দা পুলিশ বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল কার্যালয়ে যায় এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় যে কম্পিউটারে কম্পোজ করা হয়েছিল, তা জব্দ করে। খসড়া কম্পোজের কাজে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। এ সময় পুলিশ নয়ন আলীকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা দফতরে নিয়ে যায়।
আইনজীবী ফখরুলের অফিসে তল্লাশি
ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটার জব্দ করার পর গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ৬১/৯ নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ফখরুল ইসলামের কার্যালয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ।
সেখান থেকে ডিবি কম্পিউটারের দুটি সিপিইউ, একটি প্রিন্টার ও ৫০-৬০টি সিডি জব্দ করেছে। গতকাল বেলা ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত রাজধানীর কাকরাইলে ফখরুল ইসলামের কার্যালয়ে তল্লাশি চালায় ডিবি। কার্যালয়ের কর্মচারীরা জানান, বেলা ২টার দিকে ডিবি পুলিশের ৫০ জনের বেশি সদস্য কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন সাদা পোশাকেও ছিলেন। কার্যালয়ের বাইরে ডিবি পুলিশ লাইন ধরে দাঁড়িয়েছিল।
ভেতরে তিনজন ঢোকেন। এর পর তারা তল্লাশি চালান। কার্যালয়ের কর্মচারীরা আরও জানান, ডিবি পুলিশের সদস্যরা ফখরুল ইসলামের কক্ষে ঢুকলেও সেখান থেকে কিছু জব্দ করেননি। তারা জুনিয়র আইনজীবীর কক্ষ থেকে দুটি সিপিইউ, প্রিন্টার ও সিডি জব্দ করেছেন।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার ফখরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি চেম্বারে ছিলাম না।
তবে চেম্বারের লোকজন আমাকে জানিয়েছে, বেলা আড়াইটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শ'খানেক লোক এসে আমাদের লোকজনকে ঘিরে ফেলে এবং তল্লাশি করে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী বলেন, চেম্বারে তার কক্ষ তালাবদ্ধ ছিল। অভিযানের কথা শুনে তিনি চাবি পাঠিয়ে দিলেও তা পৌঁছানোর আগেই পুলিশ দরজা ভেঙে তার ঘরে ঢোকে। সেখান থেকে দুটি কম্পিউটার, একটি প্রিন্টার এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায়ের সার্টিফাইড কপির একটি ফটোকপি নিয়ে গেছে। বেলা ৪টার দিকে ডিবি পুলিশ চলে গেছে বলে জানান তিনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।