এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের প্রবেশমুখের সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন নাসির আহমেদ। ইতিউতি তাকাচ্ছেন। এই কক্ষ, ওই কক্ষে উঁকি মারছেন। কাছে যেতেই বিরক্ত কণ্ঠে বললেন, ‘আম্পায়ার, ম্যাচ রেফারি কাউকে পাচ্ছি না। মাঠ পরিদর্শন হবে কি না বা আজকের খেলা বাতিল কি না, অফিশিয়ালি কিছু একটা তো জানাতে হবে!’
মাঠের চারপাশ তখন প্রায় পুকুর।
আগের রাত থেকে অবিরাম কেঁদে চলেছে চট্টগ্রামের আকাশ। সকালে সেই বর্ষণ আর নিকষ কালো আকাশ দেখে হয়তো জলদি মাঠে আসার প্রয়োজন মনে করেননি আম্পায়াররা। বিসিবি একাদশের ম্যানেজার নাসির আহমেদ যখন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা শোনার অপেক্ষায়, খেলোয়াড়েরা তখন টেস্ট দলের সঙ্গে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ইনডোরে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছেন। বল যে মাঠে গড়াচ্ছে না, কাল সকালে ঘুম ভেঙে একনজর বাইরে তাকিয়েই বোঝা হয়ে গেছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এল সকাল সাড়ে ১০টায়।
‘অনানুষ্ঠানিক’ একটা ঘোষণাও আছে। মাঠসংশ্লিষ্ট সবার অভিমত, মাঠের যে অবস্থা তাতে তিন দিনের ম্যাচে একটি বলও না গড়ানোরই সম্ভাবনা!
বাংলাদেশ শিবিরে তাতে হা-হুতাশ খুব বেশি থাকার কথা নয়। ‘দল নির্বাচনী’ ম্যাচটি শুধুই গা-গরমের ম্যাচ হয়ে গেছে টেস্ট দল ঘোষণা করে দেওয়ায়। তবে টেস্টের আগে কয়েকজনের জন্য এই ম্যাচ হতে পারে আত্মবিশ্বাসের রসদ জোগাড়ের ম্যাচ। এঁদের মধ্যে আবার সবার আগে থাকবে মাহমুদউল্লাহর নাম।
গত বছর দুয়েকের মতো এই সিরিজেও তিনি মুশফিকুর রহিমের ডেপুটি। তবে বাস্তবতা হলো, টেস্ট দলে সহ-অধিনায়কের জায়গাটাই হয়ে পড়েছে নড়বড়ে! সর্বশেষ টেস্টে তো (হারারে) একাদশেই ছিলেন না। অতীত পারফরম্যান্স আর যথেষ্ট ভালো বিকল্প না থাকাতেই আরেকটা সুযোগ পেয়েছেন। নিউজিল্যান্ড সিরিজটা তাই তাঁর জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ।
চ্যালেঞ্জের জন্য নিজেকে তৈরি করার ভালো একটা সুযোগ এই প্রস্তুতি ম্যাচ।
সেটা হচ্ছে না দেখে যথেষ্টই হতাশ। তবে কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার হলো, বাজে ফর্ম ব্যাপারটি মানতেই নারাজ মাহমুদউল্লাহ! রান না পাওয়া আর বাজে ফর্মকে তিনি একসঙ্গে মেলাতে চান না, ‘আমার কাছে মনে হয় না আমি বাজে ফর্মে আছি। টেস্টে গত তিন-চারটা ইনিংসে হয়তো রান পাইনি কিন্তু ব্যাটিং ভালোই করছিলাম। ’
‘ভালো ব্যাটিং করছিলাম’ দাবির প্রমাণ কিন্তু পারফরম্যান্সে নেই। সর্বশেষ ৬ টেস্ট ইনিংসে করতে পেরেছেন মাত্র ৩৪ রান।
এর মধ্যে আবার এক ইনিংসেই ২১, বাকি ৫ ইনিংসে ১৩। মাহমুদউল্লাহ নিজেও একবার স্বীকার করলেন, ‘ওই ইনিংসগুলোয় হয়তো সেট হতে পারছিলাম না, ভুল করছিলাম, দ্রুত আউট হয়ে যাচ্ছিলাম। ’ পরক্ষণেই আবার যোগ করলেন, ‘আমি কোনো চাপ অনুভব করছি না, অ্যাবসোলিউটলি কমফর্টেবল। ’
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে যে চার ইনিংসের দুটিতে ফিফটি ও একটিতে ৩১ করেছেন, সেটাও মনে করিয়ে দিলেন। কিন্তু দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হয়েও এমন মাঝারি স্কোরে তৃপ্তি খুঁজলে তো প্রশ্ন ওঠে অনেক! হতে পারে চাপ ব্যাপারটিকে মাথায় ঢুকতে না দেওয়ার এটা নিজস্ব পন্থা।
এভাবে ভেবেই হয়তো মানসিকভাবে চাঙা রাখছেন নিজেকে। টেস্ট সিরিজে নিজের সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য নেই বললেন। তবে একটু ঘুরিয়ে আবার লক্ষ্যটা জানিয়েও দিলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে ভালো টাচে আছি। সেট হতে পারলে এবং একটু সময় নিয়ে ব্যাটিং করতে পারলে বড় ইনিংস খেলতে পারব আশা করি। ’
প্রস্তুতি ম্যাচের অধিনায়ক ও দলের সহ-অধিনায়ক যেহেতু, কথা বলতে হলো দল আর সিরিজ নিয়েও।
এবার যথেষ্টই জোর তাঁর কণ্ঠে। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ এখন জিম্বাবুয়ের পেছনে। র্যাঙ্কিংয়ের মই বেয়ে ওপরে ওঠার শুরুটা করতে চান কিউইদের হারিয়েই, ‘গত দু-তিনটি টেস্ট সিরিজ আমরা ভালো খেলেছি, তবে রেজাল্ট আমাদের পক্ষে ছিল না। এবার আশা করব যেন রেজাল্ট পক্ষে আসে। রেজাল্ট আমাদের পক্ষে এলে র্যাঙ্কিংও একাই ভালো হবে।
সামর্থ্যমতো খেলতে পারলে আমরা নিউজিল্যান্ডকে অবশ্যই হারাতে পারি। ’
নিউজিল্যান্ড নামটা এমনিতেই বাড়তি একটা অনুরণন তোলে তাঁর মনে। ক্যারিয়ারের একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরিটি করেছিলেন এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই। ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে আটে নেমে মার্টিন-সাউদি-ভেট্টোরিদের বিপক্ষে খেলেছিলেন ১১৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। এবার সেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই একবিন্দুতে দাঁড়িয়ে তিনি ও তাঁর দল।
তাঁর কাছে যেমন, তেমনি দলের জন্যও সিরিজটির আরেক নাম—চ্যালেঞ্জ!
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।