আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মকবুল ভাইয়ের চ্যালেঞ্জ

মকবুল ভাইয়ের চ্যালেঞ্জ পারভেজ রানা প্রতিদিন দিস্তা দিস্তা কাগজ যাচ্ছে মকবুল ভাইয়ের, লিখছেন, ছিড়ছেন, আবার লিখছেন। সায়রা ভাবি, মানে মকবুল ভাইয়ের স্ত্রী বকতে বকতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন, কী ছাইপাশ লিখছ যে, সবসময় শুধু ছিড়তেই হচ্ছে? মকবুল ভাই তাকে বোঝাতেই পারছেন না, এটা যেন তেন লেখা নয়- এটা একুশের বইমেলার জন্য লেখা। এদিকে মেলা শুরু হতে বাকী আছে ৮ দিন। লিখতে পারেননি ৮পৃষ্ঠাও। কাহিনী সংপে একটা করে রেখেছিলেন, ওটা দিয়েই প্রকাশক প্রচ্ছদ ছেপে ফেলেছে।

এখন বই লিখতে গিয়ে আর মনঃপুত হচ্ছে না। প্রকাশককে টাকাও অগ্রীম দেওয়া হয়েছে অর্ধেকের বেশী। এখন বই জমা দিতে না পারলে ইজ্জত নিয়ে যেমন পড়বে টানাটানি, আর গচ্চাও যাবে অনেকগুলো টাকা। লিখতে লিখতে, ছিড়তে ছিড়তে গতকাল নিয়ে আসা ৫০০ পৃষ্ঠার এক প্যাকেট কাগজ হাঁপিস হয়ে গিয়েছে। সায়রা ভাবি মকবুল ভাইয়ের উপর ত্যক্ত বিরক্ত।

পড়ন্ত যৌবনে এসে মকবুল ভাইয়ের কেন যে সাধ হলো লেখক হবেন, তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। সারা জীবন শুধু একটাই অভিযোগ তার, এই মানুষটা তার সাথে পরামর্শ করে কিছু করে না। মকবুল ভাই এ ব্যাপারে খাড়া তালগাছ। মানে উনি উনার সিদ্ধান্তে অটল। নিজের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হয়।

বিয়ের আগেও তো মকবুল ভাই সায়রার কথা শোনেননি। ভাবির ইচ্ছা ছিল, বিয়েতে উনি পরবেন লেহাঙ্গা। মকবুল ভাই বলেছিলেন, বাঙ্গালী মেয়ে অবশ্যই শাড়ী পরতে হবে। বাধ্য হয়ে সায়রা ভাবি মেনে নিয়েছিলেন, কারণ মকবুল ভাই,গো ধরেছিলেন, বিয়েতে কনে শাড়ি না পরলে উনি শেরোয়ানি পরবেন না, লুঙ্গি পরে যাবেন বিয়েতে। সেই থেকে মকবুল ভাইয়ের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পরেননি সায়রা ভাবি।

সায়রা ভাবি যেমন বাগেরহাটের মেয়ে, মকবুল ভাইও বরিশালের ছেলে। উনার একটাই কথা, আরে ভাই মেয়ে লোকের সিদ্ধান্তে কী আর সংসার চলতে পারে। তারা বরং তরকারিতে ঝাল-নুন-তেল কেমন দেবে সেটাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। শেষ বয়সে এসে লেখক হবার সাধ মকবুল ভাইয়ের এমনিতে হয়নি। দু’বছর আগে তার বাল্যকালের বন্ধু মফিজ মিয়া দশটা বই বের করেছে, বইটা সুপার ডুপার হিট হয়েছে।

মফিজ এখন স্টার। সেই মফিজ কী আর মফিজ আছে? এখন সে নামজাদা টিভি নাট্যকার। মকবুল ভাই তাকে মনে মনে একটা গালি দিয়ে দেয়, কারণ নাটকের নামে সে বাংলাভাষাকে নষ্ট করা শুরু করেছে। মফিজ নিজের নামটাও বদলে ফেলেছে। কারণ হিট হতে গেলে নাকি নাম বদলানো লাগে।

অনেকটা বদলে যাও বদলে দাও শ্লোগানের মত। মফিজ মিয়া এখন মিস্টার মাফি চৌধুরী। নামের সাথে চৌধুরী লাগালে নাকি নামে জোশ আসে। মকবুল ভাইয়ের লেখালেখির কারণ মাফি চৌধুরীর (মফিজ) সাথে তার একটা প্রতিযোগিতা হতে পারে। কিন্তু মকবুল ভাই তো এগুতে পারছে না।

ছোট বেলায় যা দু’কলম লিখেছিল, এখন তো লিখতে লিখতে কলম ভাঙ্গার জোগাড়। মকবুল ভাইয়ের এহেন অবস্থা দেখে সায়রা ভাবি পরামর্শ দিলেন, জীবনে তো আমার কোনো কথা শুনলে না। এবার একটা কথা শোনো। দয়া করে লেখালেখির চেষ্টা বাদ দাও। মকবুল ভাই শুনলেন না সে কথা।

তিনি ভাবলেন পরামর্শ নিতে হবে। ভয়ানক পরামর্শ। মফিজের সাথেই কথা বলতে হবে। মফিজ এতো লেখা কেমনে লেখে? প্রতি বছর বইমেলায় শিয়ালের বাচ্চার মত এক সাথে সাত আটটা করে ওর প্রডাকশন বের হচ্ছে কীভাবে? মফিজকে তো পাওয়াই যায় না। ছোট বেলার বন্ধু মফিজ এখন দেশের একজন স্টার লেখক।

তাকে কী আর সহজে পাওয়া যায়? সাতঘাটের জল খেয়ে অবশেষে তাকে খুঁজে পেলেন হোটেল শেরাটনের বিপরীতে। হাতে একটা প্যাকেট। প্যাকেটের ভেতর কয়েকটা বোতল। নিজে কিছু খেয়ে এসেছে, আর কিছু নিয়ে যাচ্ছে। মকবুল ভাই তাকে অনুসরণ করতে থাকলো।

পরীবাগের বাসাটা খুব দূরে নয়। মকবুল ভাই অনুসরণ করতে করতে সোজা মফিজের বাসায়। একই সময়ে উপস্থিত হয়ে মফিজের সাথেই বাসায় ঢুকে পড়ল। মফিজ মকবুলকে দেখে অবাক। তুই বাসা চিনলি কী করে? মকবুল ভাই বলল, রাস্তায় তোকে দেখে তোর সাথেই হাটতে হাটতে চলে এলাম।

তা কী জন্য এলি? তোর কাছে এলাম কৌশল শিখতে, আমি যেখানে একটা লেখাই লিখতে গলদঘর্ম হচ্ছি, তুই সেখানে প্রতি বই মেলায় শিয়ালের বাচ্চার মত সাত-আটটা করে উৎপাদন করিস কী করে? মফিজও বেশ মুডে ছিল, যা কখনো কাউকে বলেনি তাই আজ বলে ফেলল। হাত ধরে বলল, দোস্ত বুদ্ধি থাকতে হয়। আমার মত ফ্যাক্টরি খুললে সবই সম্ভব। তাই নাকি? তুই কীসের কারখানা খুলেছিস? লেখার। লেখার? মকবুল ভাই একই সাথে অবাক ও প্রশ্নবিদ্ধ।

লেখার আবার কারখানা হয়? দোস্ত হয়, হয়। আমার মত বুদ্ধি থাকলে সবই হয়। মফিজ চার বেডের বাসাটা মকবুলকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। মফিজের কারখানায় উঠতি অনেকেই লিখছে। গভীর মনোযোগে।

কারো মুখে কোনো রা নেই। চেয়ার টেবিলে বসা ভদ্র বালকের মত তারা লিখেই যাচ্ছে। কয়েকজনের গতবারের বই মেলায় বইও ছিল। মকবুল ভাই বলে, তোর এখানে দেখছি অনেকেই বসে লেখে। মফিজ বলল, ওরা হলো আমার পাঁচটা হাত।

আমি একই সাথে পাঁচ হাতে লিখি। আর এক হাতে শুধু খাই। হা হা হা....। আমার কারখানায় ভালোই উৎপাদন হচ্ছে। এবারের বইমেলায় ১০টা.. মকবুল ভাই লেখার এই কারখানা দেখে হতবাক।

নিজে কী একটা কারখানা খুলবেন? টাকা থাকলে সবই সম্ভব। ছিঃ ছিঃ এসব কী ভাবছেন? মকবুল ভাই বাসায় ফিরে গেলেন, লেখা শুরু করলেন। এবার আর ভাবনা-চিন্তা এলোমেলো হচ্ছে না। সরল গতিতে এগিয়ে চলেছে। দশটা নয়, মকবুল ভাই একট তো পারবেন, দশটা বেজন্মার চেয়ে একটা ভালো জাতের কিছু অনেক ভালো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.