শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘রূপকল্প ২০২১, গত ৫ বছরের অর্জন, আগামী ৫ বছরের অঙ্গীকার’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জয়।
পরে ঘণ্টাব্যাপী উন্মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দেন তিনি।
ভালো কাজের পরও পাঁচ সিটি করপোরেশনে পরাজয়ের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে কিনা এবং তা মোকাবেলায় কি পদক্ষেপ নেবেন- প্রশ্নটি ছিল ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের।
জবাবে জয় বলেন, “অপপ্রচার অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ। ”
“ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অপপ্রচার করে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে অ্যাডভানটেজ নেয়া হয়।
সেটাই দেশের মানুষকে বুঝতে হবে। আমরা দলের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব প্রচার করব। ”
নির্বাচনের আগে জনগণের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাস ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
আওয়ামী লীগে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব, সংস্কারবাদী ইস্যু ও সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত না করলে আগামীতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হবে কিনা- শ্যামল দত্তের এই প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, “গণতান্ত্রিক দলে মত-দ্বিমত থাকবেই। এটা গণতন্ত্রের মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে।
আর সেটা আমরা করছি। ”
“গণতন্ত্রকে আমরা ফেলে দিতে পারি না। গণতন্ত্রের মধ্যেই আমাদের থাকতে হবে। অগণতান্ত্রিক দলে যেখানে মার্শাল ল’ থাকে সেখানে এমন হয় না। ”
আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিকভাবেই করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
দেশের তৃণমূল পর্যায়ে রাজনীতির পরিবর্তনে কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা- জয়ের কাছে জানতে চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন কাদের।
জবাবে তিনি বলেন, “আমি অবশ্যই বাংলাদেশের রাজনীতির পরিবর্তন চাই। ’৭৫ সালের পর স্বৈরশাসককে মোকাবেলা করার জন্য রাজনীতির একটা ধারা এসেছে। তারা শক্ত না হলে স্বৈরশাসকের পতন হতো না। ২০০৭ সালের ঘটনার কারণে রাজনৈতিক পরিবর্তনে আমাদের সময় লাগছে।
”
বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমির ছাত্র সাকিব হাসান চৌধুরী জয়ের কাছে জানতে চান তরুণ নেতাদের বার্তা কীভাবে পাবেন তারা।
উত্তরে জয় বলেন, “এখন সোসাল মিডিয়ার যুগ। আমার নিজেরও একটি ফেইসবুক পেইজ আছে। আমাদের তিনশ প্রার্থীরও নিজস্ব ফেইসবুক পেইজ থাকবে। সেখানে আমাদের ম্যাসেজগুলো পাবেন।
”
একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করার পরিকল্পনা আছে কিনা- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরে আলম সিদ্দিকী জানতে চান জয়ের কাছে।
জবাবে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে সময় লাগবে বলে জানান জয়।
তিনি বলেন, “আমাদের ওয়াদা ছিল গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে বিনা বেতনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা। শিক্ষাকে একমুখী করতে বর্তমান সরকারের ও পলিসির ধারাবাহিকতা লাগবে। ”
‘বিভিন্ন দেশে সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে রাষ্ট্রপ্রধানরা নিয়মিত ভাষণ দেয়ায় তাদের রাজনৈতিক মহাসমাবেশে ততটা দেখা যায় না’- উল্লেখ করে বুয়েট শিক্ষার্থী আমিনুর রহমান পলাশ জানতে চান, নির্বাচনী ইশতেহারের বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি নিয়ে প্রতি বছর আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়া হবে কিনা।
উত্তরে প্রধানমন্ত্রী তনয় বলেন, একেকজন মানুষের কাছে একেকভাবে ম্যাসেজ পৌঁছাতে হয়। ফেইসবুক, টেলিভিশন ও মহাসমাবেশের মাধ্যমে একেক ধরনের মানুষ একেক বার্তা পায়। সফলতার বিষয় মাথায় রেখেই প্রচারণা করতে হবে।
সাম্প্রতিক বিলবোর্ড প্রচারণায় সরকারের ইমেজ কমেছে- সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘সাপ্তাহিকের’ গোলাম মোর্তজার এমন বক্তব্যের বিষয়ে জয় বলেন, “এই যে আপনি আজকের অনুষ্ঠানেও সেই বিলবোর্ডের প্রসঙ্গ নিয়ে এসেছেন। এটা কিন্তু পাঁচ বছরের সাফল্য ও আগামী পাঁচ বছরে আমরা কি করব সে বিষয়ে কথা বলতে এসেছি।
আপনি যে প্রশ্নটা করলেন এটাও কিন্তু নেতিবাচক প্রচারণার মধ্যে পড়ে। ”
মোর্তজাকে তিনি প্লাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, তাতে বিলবোর্ডের মালিকরা কি অসন্তুষ্ট ছিল?
টেলিটক থ্রিজিতে গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করতে না পারায়ই কি অন্য অপারেটরদের এই সুযোগ দেয়া হচ্ছে?
মোর্তজার এ প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, টেলিটক কিন্তু মরে যায়নি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতা দরকার। টেলিটক থাকলে এই প্রতিযোগিতা থাকবে। তাদেরকে আমরা সাপোর্ট দিয়ে যাব।
শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারী, হলমার্ক, পদ্মাসেতু নিয়ে সরকারের ব্যাখ্যায় জনগণ সন্তুষ্ট নয় এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে জয় বলেন, ডেসটিনি, হলকমার্ক ২০০৬ সালের আগে বিএনপি-জমায়াতের আমলে প্রতিষ্ঠিত। তখন কি বিচার করা হয়েছে? কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে? আওয়ামী লীগ বিচার করেছ। সেই সময় তারা অনেক দুর্নীতি করলেও আমরা তাদের বিচার করে যাচ্ছি। আমরা দুর্নীতি মোকাবেলা করছি। সরকার বিচার করে দুর্নীতি কমিয়েছে।
মোবাইল খাতে ট্যাক্স কমানোর দাবি জানিয়ে টেলিকম নীতিমালা আধুনিকায়নের বিষয়টি তুলে ধরেন গ্রামীণ ফোন কর্মকর্তা মাহমুদ হোসাইন।
জয় বলেন, “মোবাইল খাতের ট্যাক্স কমানোর ব্যাপারে আলোচনা চলছে। আপনাদের সমস্যা আমরা সব সময় শুনব। ”
তথ্য কমিশনার অধ্যাপক সাদেকা হালিমের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরে জয় বলেন, “অ্যাকশন ও পলিসিতে গ্যাপ খুঁজতে গেলে তা খুঁজে পাবেন। কারণ সব কিছুতে শতভাগ করা যা না।
ম্যাক্সিমাম উন্নয়ন করতে পেরেছি কিনা সেটাই দেখার বিষয়। ”
‘বাংলাদেশে কোনো দল জানে না কীভাবে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হতে হয়; এটা আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ কিনা- সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খানের এই প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, “এটা দেশের মানুষের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে বিএনপি-জামায়াতের কালো দিনে আমরা ফিরে যেতে চাই না। ”
জেলায় জেলায় এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে কিনা আকতারুল ইসলাম নামে একজনের প্রশ্নের উত্তরে জয় বলেন, “অবশ্যই আমি জেলায় জেলায় এমন অনুষ্ঠান করব। ”
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমণ্ডির কার্ালয়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দেয়া ‘তিন দিন পরের চকমের’ বিষয়ে জানতে চান লন্ডন প্রবাসী ফজলুল হক।
উত্তরে জয় বলেন, “চকমের বিষয়টি মিডিয়া বানিয়ে লিখেছে। আমি কোনো চমকের কথা বলিনি। ”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত আরো কয়েকজনের প্রশ্নের জবাব দেন জয়। পরে দর্শক সারিতে এসে অনেকের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। জয়কে কাছে পেয়ে অনেকেই তার সঙ্গে ছবি তুলেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।