জীবনকে উপভোগ করতে চাই জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে
৫ অক্টোবর আজ ,ইউনেস্কো ঘোষিত এ দিনটি বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় অত্যন্ত মর্যদার সাথে। এ দিনটির পালন শুরু সেই ১৯৯৩ সাল থেকে। ১৯৯৩ সালে ইউনেস্কোর তৎকালীন মহাপরিচালক ফ্রেডেরিকো ৫ অক্টোবরকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসাবে ঘোষনা করেন। বিশ্বজুড়ে সরকারি ্ও বেসরকারী ভাবে বিভিন্ন শিক্ষক ও কর্মচারী সংগঠন এ দিবসটি অত্যন্ত মর্যদার সহিত পালন করে। শিক্ষকদের অধিকার ,মর্যদা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি লক্ষ্য রেখে একটি ১৪৬ ধারা বিশিষ্ট ইউনেস্কো আর্š—জার্তিক নীতিমালা স্বীকৃত হয়েছিলো।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে তার উল্লেখযোগ্য কতগুলো এখানে উল্লেখ করা করা হলো এবং এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বেসরকারী শিক্ষকদের অবস্থান ও তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো-
উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো-
১. নাগরিকদের উপযুক্ত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
২. শিক্ষানীতি প্রনয়ণ ও শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণে শিক্ষক ও কর্মচারী সংগঠনের ঘনিষ্ট সহযোগিতা নিতে হবে।
৩. শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাজেট ও জাতীয় আয় থেকে(মোট জাতীয় আয়ের ন্যুনতম ৭%) উপযুক্ত পরিমাণ অর্থ নির্দিষ্ট করে রাখতে হবে।
৪. নিয়োগ বিধিও চাকুরীর শর্তাবলী নির্ধারণে শিক্ষক সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. পরিদর্শক ,শিক্ষা প্রশাসক,শিক্ষা পরিচালক সহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে যতটা সম্ভব অভিজ্ঞ শ্ক্ষিকদের নিয়োগ দিতে হবে।
৬. পরিমাণগত নয়, শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হবে।
৭. শিক্ষকদের সামাজিক মর্যদা, চাকুরীর নিরাপত্তা ও নিয়োগকালের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
৮. শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হলে তার কারণ ও উদ্দেশ্য সুস্পষ্টভাবে উল্লেখকরতে হবে।
৯. শিক্ষকগণ একাডেমিক স্বাধীনতা ভোগ করবেন।
১০. শিক্ষকদের আচরণ বিধি স্থির করণে শিক্ষক সংগঠনের ভুমিকা থাকবে।
১১. শিক্ষকদের বেতনক্রম ও চাকুরির শর্তাবলী চাকুরিদাতা ও শিক্ষক সংগঠনগুলোর মধ্যে আলোচনা ক্রমে নির্ধারণ করতে হবে।
১২. প্রত্যেক শিক্ষক পুরো বেতনে বার্ষিক ছুটি পাবেন।
১৩. সমযোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি অন্য পেশায় যে বেতন পান শিক্ষকদের বেতন তার সমকক্ষ হতে হবে।
১৪. অন্যান্য অনেক প্রকারণের মধ্যে বেতন যেহেতেু সামাজিক মর্যদা নির্ণয়ে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক সেহেতু শিক্ষকদের জন্য ন্যায্যবেতন প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
১৫. জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিজনিত কারণে শিক্ষকদের বেতন কিছুদিন অন্তর অন্তর পর্যালোচনা করতে হবে এবং দেশের বেতন বেতনক্রম বৃদ্ধির প্রবণতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষকদের বেতন বাড়াতে হবে।
১৬. উচ্চ শিক্ষার সুযোগ হবে আজীবন।
১৭. অধিকারের সঙ্গে থাকবে দায়িত্ববোধ ও জবাবাদিহিতা।
১৮. উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে উন্নত দেশগুলোতে মেধা পাচার রোধ করতে হবে।
এখানে সুপারিশমালার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি তুলে ধরা হয়েছে। এবার দেখা যাক বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বেসরকারী শিক্ষকরা কেমন আছেন ।
বড়ই ভালো আছেন ! এ ভালো থাকার কোন শেষ নেই । সবাই সরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়ে ভাবেন, ভাববেনইতো। বেসরকারি মানেই তো ‘বেদরকারী’। তাদের নিয়ে আবার ভাববার কি আছে! তারা দেশের ৯০ ভাগের ও বেশী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাাদান করেন। কিন্তু শিক্ষক হিসাবে তাদের মান মর্য়দা নিয়ে এ আবার ভাবনার কি ? বাকী ১০% নিয়েই ভাবলেই হলো।
এদেশে ইউনেস্কোর সুন্দর সুন্দর সুপারিশমালা গুলো ঐ কাগজেই থাকে , কোন দিন আলোর মূখ দেখে না । সবাই গাড়ি করবেন , বাড়ি করবেন, ট্যাক্স ফ্রী গাড়ি আমদানি করবেন আর শিক্ষকেরা রুটি রুজির সংগ্রামে পথেই থাকবে। সরকার বেসরকারী শিক্ষকদের বেতন দেন না ,দেন অনুদান । আইনের অনেক ফাকিঁ রেখেই অনুদান বলে শিক্ষকদের প্রাপ্তিকে চালিয়ে দেয়া হয় । কারণ তারা তো বেতন পাবার যোগ্য নন, তার করুনার পাত্র , অনুদানের যোগ্য।
টিভি টকশোতে কতকিছুই নিয়েই তো আলোচনা হয়, শিক্ষকদের দাবী শিক্ষকদের বর্তমান নাজুক অবস্থান নিয়ে আমাদের সুশীল সমাজের ভাববার সময় কই ্ তারা তো সরকারের সমালোচনা আর সরকার তাদের উন্ন্য়ণ ফিরিস্তি নিয়েই ব্যস্ত। কেন একজন শিক্ষক সারা জীবন একই পদে থেকে অবসরে যান? কেন তার পদোন্নতি নাই ?কেন তিনি ১০০ টাকা বাড়ি ভাড়া পান ৪০ বছর ধরে ? ১৫০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান ৪০ বছর ধরে ? কোন সম্মানিত সংসদ সদস্য কোনদিন পার্লামেন্টে বসে এসব আলাপ করেছেন ? এসব আলোচনার চেয়ে সংসদ সদস্যরা সংসদে গালাগালি করাকেই পছন্দ করেন বোধহয় বেশী। । বর্তমান সরকার এসে বাড়িভাড়া ১০০ টাকার ৫ গুন ১৫০ টাকার দুই গুন করে পত্রিকায় সাংবাদিক সম্মেলন করে দেশবাসীকে এই মহাকান্ডটি অবহিত করেছেন। এই কারণে শিক্ষা মন্ত্রনালয় বোধহয় পাঁচগুন ছোয়াব অর্জন করেছে।
এ সর্ম্পকে আমার একটি ছড়া প্রথম আলো ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিলো। দয়াকরে আরেক বার দেখতে পারেন-পাঁচগুণ,দুইগুণ-কি দারুণ!কি দারুণ! পাঁচগুণ,দুইগুণ-কি দারুণ!কি দারুণ! । একজন বেসরকারী শিক্ষক তার ছাত্রের সাথে সমান পদ মর্যদায় একই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করার সৌভাগ্য হয় আজীবন! কারণ তার প্রমোশন বলে কিছু নেই। হায়রে বাংলাদেশের শিক্ষক। এই কথাগুলো কেউ বলেনা ।
বললে ও কেউ যেন শুনে ও শুনে না। স্কেল দিয়ে কেড়ে নেয়া হয় আবার ভুল হয়েছে বলে। এসব আমাদের দেশে বেদরকারী শিক্ষকদের জন্যই সম্ভব। আর না দিয়ে পারলেই তো সরকার যেন বেঁেচ যায়। কারণ এ সব বেদরকারী শিক্ষকদের যেন কোন মা বাবা নেই ,তারা এদেশে এতিম।
সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা ঘোষনা করলে তারা থাকেন উপেক্ষিত। তাদের কে অনেক দেন দরবার করতে হবে , কারণ তারাতো অনুদান প্রাপ্য লোক। হোকনা তারা সংখ্যাই ৯০ %। এ দেশে জোর যার মল্লুক তার । সেদিন পত্রিকায় দেখলাম এনসিটিবি সিলেবাস প্রণয়ন ও সম্পাদনার দায়িত্বে থাকার পারিশ্রমিক দিয়েছেন শিক্ষকদের যত সামান্যই ।
আমলারা এ সিদ্ধান্ত কারী। কিছু কিছু আমলারা তো শিক্ষকদের কোন মানুষই মনে করেন না। বছরের প্রথমে ছাত্রছাত্রীদের হাতে বই তুলে দিয়ে তারা শিরোনামে আসেন কিন্তু মাসের প্রথমে শিক্ষকরা বেতন পান কিনা এই খবর কেউ রাখেন না । একবার পেলে তো তিনবার পান না। মাঝে মাঝে শিক্ষকের কথা তো মনে থাকেই না।
আমাদের মত দেশে ইউনেস্কোর সুপারিশ মালাগুলো বেসরকারী ুশিক্ষকদের কাছে এক ধরণের অন্ত:সারশূন্য কথামালা। গতকাল প্রত্রিকায় দেখলাম সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন মান মর্য়দা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেখানে সংবাদ হয়েছে একজন প্রধান শিক্ষকের বেতন১৬০০০(ষোল হাজার) টাকার উপরে ,সহকারী শিক্ষকের বেতন ১৩০০০(তের হাজার)টাকার উপরে হবে। ভালো কথা ,আমরা অত্যন্ত খুশী সরকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ভাতা, মান মর্য়দা বাড়ছে । কিন্তু সদাশয় সরকার বেদরকারীদের নিয়ে ভাববেন না ? তারা মাস্টার্স পাশ করে বছরের পর বছর ১৫০০০ হাজার টাকায় কিংবা আরো কমে, যা এখানে উল্লেখ নাই করলাম ঐ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের চেয়েও অধম থেকে যাবেন ? যাক পারলে বেদরকারীদের আরো কয়েক ধাপ নীচে নামিয়ে দেন ।
তাদেরকে পারবেন ,তারাতো বেদরকারী শিক্ষক । তাদের অত টাকার দরকার কি? তাদের জন্য বাড়ি ভাড়া কেন ? তারা ফুটপাতে থাকতে পারে। তাদের জন্য চিকিৎসা ভাতা কেন ? তারা তারাতারি মরে গেলে জনসংখ্যা কমে। কারণ তারা বড়ই বেদরকারী । সময়ে সময়ে দ্রব্য মূল্যের সাথে সংগতি রেখে বেতন পর্যালোচনা করার কথাতো দূরের কথা কেন তারা শিক্ষার মতো একটি গুরুত্বপর্ণ সেক্টরে যুগ যুগ ধরে অবহেলিত এবং জীবন সংগ্রামে পরাজিত হচ্ছেন তার খবর কি কেউ রাখে ? এ দেশে তাদের অবস্থা হচ্ছে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো।
কেউ কেউ খেয়ে যাচ্ছে আর কেউ না খেয়ে লাফাচ্ছে। ভোটের সময় আবার বেদরকারীদের বেশী দরকার। সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে সমান পদমর্যদায় এদের ভোট কর্মকান্ডে নিয়োগ দেয়া হয় কিন্তু তাদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধায় আকাশ পাতল ব্যবধান। সবকিছু ডিজিটাল হচ্ছে, কিন্তু বেদরকারী বলেই হয়তো তাদের বেতনভাতা প্রপ্তির পদ্ধতি টি সেকালের থেকে যাচ্ছে। এই ভাবে পাবে পাবে আশা করে ইহ লীলা সাঙ্গ করেছেন অনেকেই ।
সরকার বলেছেন আগামীবার ক্ষমতায় এলে ডিগ্রী পর্যন্ত এক্কে বারে ফ্রি করে দেবেন ,ভালোকথা। বলে দেন আগামীতে শিক্ষদেরকে ফ্রি পড়াতে হবে, কারণ শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার । বেদরকারীরা এদেশের ৯০% এর উপরে । তারা ফ্রি শিক্ষা ব্যবস্থার দায়িত্ব নিতে পারলে দেশের ৯০% সাগ্রমিক উন্নতি সাধিত হবে। এ দেশে বিশ্ব শিক্ষক দিবস আসে আবার যায় ঐ শিক্ষকদের অন্তরের কথাগুলি বিচারের বানীর মত নিভৃতে কাঁদে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।