মানবিক, যৌক্তিক আর অযৌক্তিক। সোজা কথা আরেকটা মানুষ। দশ জনের ভীরে ডুবে থাকার প্রানান্ত চেষ্টায় থাকা মানুষ।
আচ্ছা, গত পর্বে ডাল-ভাতে শেষ করেছিলাম; ওখান থেকেই শুরু করি।
তো, সে রাত ঘুমালাম।
কিন্তু, দিনের শুরুতেই আবার চিন্তা পেয়ে বসলো। সবাই বলতো, চাকুরির বাজার মন্দা; খুব খারাপ অবস্থা। আমিতো ভাবলাম- সব শেষ! কুড়োল মেরে এসেছি নিজের পায়ে। দিন যাচ্ছিল, যেভাবে যায়। সারাদিন গান-বাজনা-ফেবু-মাঝে মাঝে পড়ালেখার ভান, বিকেলে টুইশন, রাতে আড্ডা।
এর মাঝেই দিল বিবিএ-এর রেজাল্ট। লিখতে আমার ক্লান্ত লাগেনি কখনই, তাই টিউটোরিয়ালে ঘোড়ার আন্ডা সব আমার ভাগ্যে জুটলেও বলার মত একটা ফলাফলই হোল। এবার তো আরও ভালভাবে এপ্লাই করা শুরু করলাম। ব্রাউজারে এক ট্যাবে ফেবু তো আরেক ট্যাবে বিডি জবস খোলা থাকতো। কি করবো কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।
অনেক অনলাইন এপ্লিকেশন তো স্রেফ মজা নেবার জন্যেই করেছিলাম। একবার ICDDRB -তে চিকিৎসক পোস্টেও এপ্লাই করেছি। হে হে হে... সে ঘটনা অবশ্য অনেকের জানা। তাই বিশদ বলছিনা।
প্রিমিয়ার ইয়ুনি-তে মার্কেটিং এর লেকচারার হিসেবে এপ্লাই করেছিলাম।
ডাক আসলো। ভাইবা দিতে গেলাম। সকালে ১০.৩০ মিনিটে ভাইবা শুরু হবার কথা। সকাল গড়িয়ে- দুপুর গড়িয়ে- বিকেল ৩ টা বেজে আরও কিছুক্ষণ হবে, আমার ডাক পড়লো...
ভিতরে ঢুকে দেখি, মহামান্য মেয়র সাহেবও আছেন বোর্ডে। আই ওয়াজ সিমপ্লি ফ্রিজড এন ব্ল্যাঙ্কড আউট।
আল্লাহ সাক্ষী... আমি সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কিছুই জানিনা, এখন কি করি...!!! যাই হোক, উনি বড় মানুষ, তাই পুরো সময়টা চুপ করে ছিলেন। ভাইভা হোল। মার্কেটিং এর হবু প্রভাষক থেকে ওনারা জিজ্ঞেস করলেন অর্থনীতির বিভিন্ন টপিক্স। একটা হলে আরেকটা, শেষ মেশ আমি মেজাজ হারালাম, বললাম- I thought I have applied for da post of lecturer in marketing sir. It was not for economics...!!!!...তারা বুঝতে পারলেন মনে হয়, যে বিষয় দুটো আলাদা। আমাকে মাফ করে দেয়া হোল।
বললেন- আপনার এমবিএ নেই। আপনাকে নিতে পারছিনা। দুঃখিত।
বাহ বাহ... খুশিতে আমি বেরিয়ে পড়লাম। আমার এমবিএ নেই, কিন্তু আমাকে ডেকে, আমার ভাইবা নিয়ে আমাকে চিরঋণী করেছেন ওনারা।
আই ওয়াজ সো ইমোশনাল অন দ্যাট নোট। ...
এর মধ্যেই হাতে আসলো বেসিক ব্যাংকের একটা সার্কুলার। এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, এসিস্ট্যান্ট অফিসার, অফিসার পোস্টে। আমার তখনো কোন ব্যাঙ্ক একাউন্ট ছিল না, ব্যাঙ্ক নিয়ে খুব একটা ভালো ধারনাও ছিল না। এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার যে বেসিকের প্রবেশন সেটা বুঝিই নি।
নাম শুনে বেশ ভারি ভারি পদ মনে হয়েছিল, বেতন ও ছিল অনেক্কক্কক্কক্ক... অথচ, আমাদের অনেকেরই যোগ্যতা ছিল তাতে এপ্লাই করার। আমরা বন্ধুরা কেউ যদি গরুর হাটেও আবেদন করতাম, তাও ঢোল বাজিয়ে শুনাতাম সব্বাইকে। এত লুকোছাপা ছিলনা কারুর মধ্যে। হোল কি- আমরা বন্ধুরা এপ্লাই করলাম এসিস্ট্যান্ট অফিসারে। আর সহপাঠী অনেকে যারা বুঝতে পেরেছিল, তারা AM পদেই আবেদন করল।
এখানেই গাইডেন্সের আসল বিষয়। এগুলোই ছোটখাটো ভুল বলে মনে হলেও আদতে পুরো জীবন বদলে দেয়া গল্প। কিছু বিষয় কখনই তোমরা টেক্সট থেকে জানবেনা, সেটা জানাবে জীবন। এই কারণেই টেক্সট- এ আমার চরম অবিশ্বাস। থাক, সেসব কথায় না যাই।
যেসব কথায় যেতে হবে, তা অন্য আরেকদিন... সে পর্যন্ত ভালো থাকুক সবাই।
ভালবাসা রইল ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।