আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফাঁস মানেই বাঁশ

আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা অথচ পাঠ্যবইয়ের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। যত আগ্রহ এবং মনোযোগ সব ওই বইয়ের প্রতি। ওই বই বলতে এখানে সিনেমার কথা বোঝানো হচ্ছে। তখন সিনেমাকে 'বই' বলা হতো কি না।

তখন পাড়ায় পাড়ায় ভিসিআর আনা হতো। আর ভিসিআর দেখানো হতো মূলত রাতে। সন্ধ্যার পর সবাই যেখানে বই নিয়ে বসত, আমি তখন ধান্ধা করতাম কীভাবে ভিসিআর দেখতে চলে যাওয়া যায়। ক্ষুধায় নাড়িভুঁড়ি হজম হয়ে যাচ্ছে বলে আগে আগে রাতের খাবারটা খেয়ে নিতাম। খাওয়ার পর সাধারণত আমার ঘরে কেউ আসত না।

কারণ আমি জোরে জোরে পড়তাম। তাই তারা বুঝত আমি মন দিয়ে পড়াশোনা করছি। যাই হোক, খাবার খেয়ে আমি বেরিয়ে পড়তাম ভিসিআর দেখার জন্য। একদিন আমাদের বাড়ির কাজের ছেলেটার সঙ্গে আমার মনোমালিন্য হলো। সে ধুম করে ফাঁস করে দিল আমার ভিসিআর দেখতে যাওয়ার তথ্যটা।

বাবা তো বিশ্বাস করতে নারাজ- না না, সে কোথাও যায়নি। আমি যতক্ষণ জেগে ছিলাম, তাকে জোরে জোরে পড়তে শুনেছি। কাজের ছেলে এবার ফাঁস করল আসল তথ্যটা। বাবা জানতে পারলেন, তিনি যে পড়াটা শুনেছিলেন, সেই পড়াটা ছিল টেপ রেকর্ডারে রেকর্ড করা। জীবনে প্রথমবার আমি গোপনীয়তা ফাঁসের শিকার হলাম।

আর সেই সূত্রে আমার সারা গায়ে ব্যথা হলো। না, ওই বয়সে আমার বাতের ব্যথা ছিল না। ওটা ঘরোয়া ধোলাইয়ের ব্যথা। এরপর থেকে ফাঁসের ব্যাপারে আমি খুবই সচেতন হয়ে গেলাম। কিন্তু সচেতন হলেই তো আর সব সময় মসিবত এড়ানো যায় না! ভার্সিটি লাইফে একবার পরিকল্পনা করলাম একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করব।

স্যাররা থাকবেন মূল ডোনার। তারা ৫০০ টাকা করে দিলেই হয়ে যাবে। তবে স্যাররা একটা শর্তও জুড়ে দিলেন- বাইরের কারও কাছ থেকে টাকা ওঠানো যাবে না। এর মধ্যে আমাদের মাথায় আরেকটা দুই নম্বরি চিন্তা ঢুকে গেল। একটু বাড়তি টাকা উঠিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার পাশাপাশি পিকনিকে যাওয়ার চিন্তা।

যাই হোক আমরা দুই নম্বরি চিন্তা অনুযায়ী কাজ করে স্যারদের কাছে গেলাম টাকার জন্য। প্রথম যে স্যারের বাসায় গেলাম, আমাদের দেখেই তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন- তোমরা একটা টাকাও পাবে না। বলেছিলাম বাইরের কারও কাছ থেকে টাকা ওঠানো যাবে না। তোমরা অমুকের বাসায় টাকার জন্য গিয়েছিলে কোন সাহসে? আমরা থ হয়ে গেলাম। আমাদের দুই নম্বরির কথা স্যারের কাছে ফাঁস করল কে? পরে অবশ্য ফাঁসকারীর নাম প্রকাশ হয়েছিল।

ফাঁসকারীর নাম হচ্ছে মিস্টার সিসি টিভি ক্যামেরা। আমরা চিন্তাও করতে পারিনি, অমুকের বাসার সিসি টিভি ক্যামেরায় আমরা ধরা পড়ব। ফাঁসের ফাঁদে পড়ে জীবনে বহুবার অপদস্থ হলেও পরীক্ষার আগের রাতে যখন শুনতাম প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, তখন বেশ পুলক অনুভব করতাম। তবে এই পুলক কপালে সইত না বললেই চলে। একবার আমার পাশের রুমের সৈকত বলল প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গেছে।

সে অনেক কষ্টে ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্নটা জোগাড় করেছে। আমরা তো পারলে তার পায়ে ধরি। জিজ্ঞাস করলাম কয় টাকা হলে সে প্রশ্নটা আমাদের হাতে দেবে। সৈকত বলল, তোরা আমার বন্ধু। তোদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারি? এই নে, ফ্রি-তে দিয়ে দিলাম।

আমরা প্রশ্ন পেয়ে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিলাম। একটা কথাও প্রশ্নের বাইরে থেকে পড়লাম না। তারপর যখন পরীক্ষার হলে গেলাম, হার্ট অ্যাটাকের মতো অবস্থা। কিচ্ছু কমন পড়েনি। উল্লেখ্য, সেই পরীক্ষায় আমরা সবাই ডাব্বা মারলেও সৈকত হায়েস্ট নম্বর পেয়েছিল।

ফাঁসের কারণে সবাই কম-বেশি ভোগান্তি পোহালেও আমার এক বড় ভাই ভালোই সুবিধা ভোগ করছেন। দশ-বারো বছর পর তার সঙ্গে দেখা। জিজ্ঞাসা করলাম কোথায় কী করছেন। বড় ভাই বললেন, মিয়া, শাদি কইরা সংসারি হইয়া গেলাম তো। তবে পরপর কয়েকবার যদি চাকরির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস না হতো, তালে বিয়াশাদিও করতে পারতাম না, সংসারিও হতে পারতাম না।

কয়েকবার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার পরই আব্বায় কইল, চাকরির মুখ দেখতাম চাই না। বিয়া কর, নাতি পুতির মুখ দেহি।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।