আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হজের আগে আরাফাতের ময়দানে

হজের অন্যতম অংশ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা। সব হজযাত্রীকে আরাফাতে অবস্থান করতে হয়।
হাজিরা কোথায় এসে অবস্থান করবেন তা দেখার জন্য গতকাল আমরা কয়েকজন একটি বাসে চেপে গেলাম আরাফাহ দেখতে। আরাফাতের ময়দানে যাতায়াতের জন্য একাধিক রাস্তা তৈরি করা আছে। আটটি রাস্তা দিয়ে গাড়িতে আরাফাতে আসা যায়।

এর একটি পায়ে হেঁটে যাঁরা আসতে চান, তাঁদের জন্য।
আরাফাহ ও আরাফাত—এই দুটো শব্দই আরবিতে প্রচলিত। দৈর্ঘ্যে দুই মাইল, প্রস্থেও দুই মাইল। এই বিরাট সমতল ময়দানের নাম আরাফাত। ময়দানের তিন দিক পাহাড়বেষ্টিত।

ময়দানের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে মক্কা হাদা তায়েফ রিং রোড। এই সড়কের দক্ষিণ পাশে আবেদি উপত্যকায় মক্কার উম্মুল কুরআ বিশ্ববিদ্যালয়। উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাত সীমান্ত পশ্চিমে প্রায় এক কিলোমিটার। সেখান থেকে দক্ষিণে মসজিদে নামিরায় গিয়ে আরাফাত সীমান্ত শেষ হয়েছে।

এই ময়দানে ৯ জিলহজ হজযাত্রীরা ‘অকুকে আরাফাহ’ করেন অর্থাৎ আরাফাতে অবস্থান করেন।
ময়দানজুড়ে অনেকগুলো নিমগাছ চোখে পড়ল সেখানে। মক্কাপ্রবাসী মাকসুদ সেলিম জানালেন, ওই সব নিমের চারা নাকি বাংলাদেশ থেকে এনে রোপণ করা হয়েছে। নিমগাছ রোপণের পর প্রতিদিন গাছের গোড়ায় পানি দেওয়া হয়। পানি দেওয়ার কাজ করেন বাংলাদেশি শ্রমিকেরা।

কিছু দূর পর পর পানির ট্যা্প বসানো আছে। শ্রমিকেরা তাতে পাইপ লাগিয়ে গাছে পানি দেন, গাছের পরিচর্যা করেন। বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি শ্রমিকের সঙ্গে সেখানে কথা হলো। শরীয়তপুর জেলার নড়িয়ার আবদুস সালাম বলেন, ‘দুই বছর ধরে এখানে আছি। ৯ জিলহজ হজযাত্রীরা আসেন।

তবে অন্য লোকজন তেমন আসেন না। কিছু লোক জাবালে রহমত দেখতে আসেন মাঝেমধ্যে। ’

জাবাল মানে পাহাড়। জাবালে রহমত হলো, রহমতের পাহাড়। এই পাহাড়ে একটি উঁচু পিলার আছে।

একে কেউ কেউ দোয়ার পাহাড়ও বলেন। পিলারের কাছে যাওয়ার জন্য পাহাড়ের গায়ে সিঁড়ি করা আছে। সিঁড়ি বেয়ে চূড়ায় উঠেছি। পিলার পেছনে রেখে লোকজন ছবি তুলছেন। আবেগের বশে কেউ কেউ তাতে বাংলা, ইংরেজি, আরবি ভাষায় নিজের নামও লিখে রেখেছেন।

জনশ্রুতি আছে, হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া এখানে এসে মিলিত হয়েছিলেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই পাহাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।

মাথায় এই ইতিহাস থাকলেও জাবালে রহমত এক ঝটকায় বাস্তবে নামিয়ে আনল। মনে হলো পরিচিত কোনো জায়গায় এসেছি। প্রতিটি সিঁড়ির ধাপে ধাপে একেকজন বিকলাঙ্গ মানুষ শুয়ে-বসে বিভিন্ন স্বরে ‘আল্লাহ-আল্লাহ’ বলে ডাকছেন।

পরিচিত স্বর নিজের অজান্তেই একজনের কাছে টেনে নিয়ে গেল। বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি। কারও হাত নেই, কারও পা নেই। ঢাকার রাস্তার পরিচিত দৃশ্য যেন। এঁরা এখানে ভিক্ষা করছেন।

দু-একজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম। দেশি মানুষ পেয়ে অন্য বাংলাদেশিরা খুশি হলেও এঁরা খুবই বিরক্তি প্রকাশ করলেন। কথাই বলতে রাজি নন কেউ কেউ। ত্বরিত আলাপে যতটুকু জানা গেল, এঁরা বেশির ভাগই হজযাত্রী হিসেবে এসেছেন। হজের আগে-পরে প্রায় দুই মাস হজ ভিসার মেয়াদ থাকে।

এই সময় অবৈধদের বিষয়ে পুলিশি তৎপরতা থাকে না। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর ‘ব্যবসায়ী’ এই বিকলাঙ্গ মানুষগুলোকে এখানে নিয়ে আসেন। তাঁদের বড় একটা অংশই আরাফাতের ময়দানে গিয়ে ভিক্ষা করেন। হজের আগে-পরে সারা বিশ্ব থেকে আসা মুসলিমরা জাবালে রহমতের কাছে আসেন। তাঁরা এই ফকিরদের সাধ্যমতো দান করেন।

নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানালেন, প্রতিদিন ৫০০-৬০০ রিয়াল আয় হয়। এর একটা অংশ তাঁদের দিয়ে বাকিটা ‘ব্যবসায়ীরা’ নিয়ে যান।

জাবালে রহমতের কাছে কয়েকটা ঘোড়াও দেখলাম। পিঠে চড়তে ১০ রিয়াল লাগে। তাৎক্ষণিক ছবি তুললে লাগে আরও ১০ রিয়াল।

এই কাজ পাকিস্তানি ও বাংলাদেশিরাই বেশি করেন। অনেকক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে মজার অভিজ্ঞতা হলো। বাংলাদেশের লোক দেখলে তাঁরা নিজেদের ভারতীয় বা পাকিস্তানি বলে পরিচয় দেন।

জেদ্দা বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত ১৯০টি ফ্লাইটে ৭৬ হাজার ৪৪৫ জন হজযাত্রী সৌদি আরব এসেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এক হাজার ৫৫৩ জন এবং বাকিরা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এসেছেন।

প্রতিদিন হাজিদের ছবি, মৃত হাজির তালিকা ও জরুরি তথ্য জানতে বিজিট করুন www.hajj.gov.bd.—এই ঠিকানায়।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।