আরাফাত ময়দানটি মিনা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের জন্য অবশ্যকর্তব্য আনুষ্ঠানিকতা। এই ময়দানে নামিরা মসজিদ থেকে হজের খুতবা দেওয়া হয়। হজের খুতবা টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। আমাদের তাঁবু মসজিদে নামিরা থেকে অনেক দূরে থাকায় আমরা মসজিদের জামাতে শামিল হতে পারিনি।
নিয়ম হচ্ছে, কেউ মসজিদের জামাতে শামিল হতে না পারলে নিজ নিজ তাঁবুতেই জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করবে। তবে সে ক্ষেত্রে জোহর এবং আসরের নামাজ একত্রে না পড়ে জোহর ও আসরের ওয়াক্তে আলাদাভাবে পড়তে হবে। আমাদের পরবর্তী কাজ সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা দেওয়া।
আমরা আরাফাত ময়দানের একপ্রান্তে অবস্থান করছিলাম। তাই ময়দানে মুজদালিফার দিকের প্রান্তে পৌঁছাতে আমাদের পুরো মাঠ অতিক্রম করতে হলো।
যতই অগ্রসর হই, ততই দেখি আমাদের চলার পথ ফাস্ট ফুডের খালি প্যাকেট এবং সফট ড্রিঙ্কসের ক্যান দিয়ে কার্পেটের মত ঢাকা পড়ে গেছে।
মাগরিব ও এশার নামাজ আমরা একসঙ্গে আদায় করলাম। আরাফাতের ময়দানে অথবা আরাফাত থেকে মুজদালিফা যাওয়ার পথে মাগরিবের নামাজের সময় হলেও নামাজ পড়া নিষিদ্ধ। মুজদালিফায় পৌঁছানোর পর মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে পড়তে হয়। মুজদালিফার খোলা প্রান্তরে উন্মুক্ত আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়।
এই মাঠেও কিছু দূর পরপর শৌচাগার রয়েছে। সারা রাতই এগুলোর সামনে লম্বা লাইন লেগে থাকে। নামাজ শেষে আমরা আশপাশ থেকে ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করলাম। জামারায় শয়তানের উদ্দেশে পর পর তিন দিন ছোড়ার জন্য প্রয়োজনীয় পাথরের টুকরো এখান থেকেই সংগ্রহ করতে হয়। ৭০টি পাথর সংগ্রহ করার পর আমরা শুয়ে একটু বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করলাম।
আমাদের আশপাশে যাঁরা অবস্থান করছিলেন তাঁদের কেউই বাংলাভাষী নন। হঠাৎ একজন জিজ্ঞাসা করল, ‘ভাই, আপনাদের বাড়ি কোথায়?’ তাঁর সঙ্গে অনেক কথা হলো। জানতে পারলাম, তাঁর নাম রিয়াসাদ জামান। বাড়ি মাদারীপুরের সদর থানায়।
মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব।
আমরা ফজরের নামাজ পড়ে দোয়া-দরুদ পড়ে সূর্যোদয়ের কিছু আগে মিনার উদ্দেশে রওনা দিলাম। তাঁবুতে পৌঁছে বিশ্রাম ও নাশতা সেরে নিলাম। বড় জামারায় গিয়ে শয়তানের উদ্দেশে পাথর নিক্ষেপ করলাম। জামারা হলো মিনা ময়দানে অবস্থিত তিনটি স্তম্ভ। এগুলোর নাম জামারাতুল উলা বা ছোট জামারাহ, জামারাতুল উসতা বা মধ্যম জামারাহ এবং জামারাতুল কুবরা বা বড় জামারাহ।
পাথর নিক্ষেপের পরবর্তী কাজ হলো কুরবানি করা। আমরা যেহেতু আগেই কুরবানির টাকা নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিয়েছিলাম, তাই আমাদের আর কুরবানির জন্য নির্ধারিত স্থানে যেতে হলো না। আমরা জামারাহ থেকে বেরিয়ে মাথা মুণ্ডন করার জন্য নাপিতের দোকানের খোঁজ করলাম।
কোনো কোনো জায়গায় দেখলাম, কিছু হজযাত্রী পয়সার বিনিময়ে অন্য হজযাত্রীদের মাথা মুণ্ডন করে দিচ্ছেন।
১০ জিলহজ তাওয়াফে জিয়ারত করার জন্য মক্কার পথে রওনা হলাম।
এটি হজের অন্যতম ফরজ কাজ। কাবা শরিফের তাওয়াফ শুরু করতে হয় হাজরে আসওয়াদ থেকে। ভিড়ের কারণে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ বা চুমু দেওয়া সম্ভব না হলে ইশারায় চুমুু দিতে হয়। শুরু করলাম তাওয়াফ। প্রচণ্ড ভিড়।
আগে যেখানে আমাদের তাওয়াফ ১৫ মিনিটের মধ্যে হয়ে যেত, সেখানে আজ আমাদের তাওয়াফ করতে লাগল দুই ঘণ্টা। আর সায়ি (সাফা-মারওয়া সাতবার আসা যাওয়া) করতে লাগল আরও প্রায় দুই ঘণ্টা। এখান থেকে আবার জামারাতে যেতে হবে পাথর ছোড়ার জন্য।
মসজিদুল হারামের চত্বরের একপ্রান্ত থেকে একটা পায়ে চলা পথ জামারার দিকে চলে গেছে। রাস্তাটির বেশির ভাগ অংশই পাহাড়ের বুক চিরে তৈরি করা টানেল।
টানেলের ভেতর পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা আছে। মাথার ওপর বিশাল আকৃতির ফ্যানগুলো থেকে বিকট শব্দে বাতাস ছাড়া হচ্ছে। এই টানেল দিয়ে হাঁটার সময় একটু ভয় ভয় লাগা অস্বাভাবিক নয়। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে এক এক করে ছোট, মধ্যম ও বড় জামারায় সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করলাম।
হাজিরা মিনায় দুদিন অবস্থান করে হজের অন্য আনুষঙ্গিক কাজ যেমন প্রতিদিন জামারায় তিনটি শয়তানকে সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন।
মিনার কাজ শেষে আবার মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ করার পর নিজ নিজ দেশে ফিরবেন। যাঁরা মদিনায় যাননি, তাঁরা মদিনায় যাবেন। যদিও মদিনায় যাওয়া হজের অংশ নয়।
প্রতিদিন হাজিদের ছবি, মৃত হাজির তালিকা ও বুলেটিনে তথ্য হালনাগাদ করা হয় www.hajj.gov.bd. এই ঠিকানায়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।