আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুজোর আগের গ্রুমিং টিপস

সাজগোজ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট এখনকার চলতি হাওয়া। তার ওপর পুজো দোড়গোড়ায়। তাই দেদার কেনাকাটা, আর পুজোর ক'দিন মনভরে সাজগোজ। সেই ফর্মুলা ফলো করে ইতোমধ্যেই কেনাকাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ বার শুধু কাউন্ট ডাউন।

তার পর গো অ্যাজ ইউ লাইকের মতো যেমন খুশি তেমনটি সেজে বেরিয়ে পড়া! কিন্তু এমনটা করলে পুরো সাজই মাটি হতে পারে বলে মনে করছেন আজকের সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞরা। আসলে যুগটা গ্রুমিং-এর। সেই মাপকাঠিতে চলতি ট্রেন্ডের দামি পোশাক, চোখ ধাঁধানো গয়না বা সাজগোজই শেষ কথা নয়। নিজেকে সবার মধ্যে আলাদা করে তুলে ধরতে চাই আরও বিশেষ কিছু। তার জন্য না-ই বা হলেন আপনি ডানা কাটা পরি।

থাকতেই পারে চেহারায় অজস্র খুঁত। দরকার এমন কিছু। যা খামতিগুলোকে ঢেকে ফেলবে। সঙ্গে জানতে হবে নিজেকে যথাযথ ভাবে উপস্থাপন করার কায়দা। আর তা আয়ত্তে আনতে না পারলে, নামের সঙ্গে জুড়ে যাবে 'আনস্মার্ট' বিশেষণ।

গ্রুমিং-ই শেষ কথা গ্রুমিং ব্যাপারটা অনেকটা আশির দশকের 'ওগো বধূ সুন্দরী' সিনেমার মতো। বাঁদর নাচ দেখানো বস্তির মেয়েটিকে মেজেঘষে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় নামিয়েছিলেন উত্তমকুমার। সেই মাজাঘষাই আজকের গ্রুমিং। গুছিয়ে কথা বলা, শরীরী ভাষার ব্যবহার, কতটুকু বলব, কোথায় থেমে যাব ইত্যাদি সব কিছুর মিশেলে নিজেকে ঝকঝকে করে তোলাই গ্রুমিং-এর নানা পর্ব। এক সময় এই গ্রুমিং ব্যাপারটা ছিল একচেটিয়া সিনেমা-মডেলিং-সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার জন্য।

এখন স্কুলের চাকরি থেকে শুরু করে কর্পোরেট চাকুরে বরের সঙ্গে পার্টিতে যেতেও দরকার হচ্ছে গ্রুমিং। আসলে সৌন্দর্যের সংজ্ঞাটাই যে বদলে গিয়েছে। স্মার্টনেস, ব্যক্তিত্ব আর সুন্দর ব্যবহারেরই জয়জয়কার। তাই গ্রুমিং নিয়ে মাথা ঘামানোটা জরুরি হয়ে পড়েছে। পুজোর দিনগুলিতে তো বটেই, গ্রুমিং দরকার বছরের ৩৬৫টি দিনের জন্য।

তাই শুরুটা বরং হয়ে যাক এই পুজোর মরশুমে।

গ্রুমিংয়ের প্রথম পাঠ প্রথমত সাজগোজ। নিজের চেহারা সম্বন্ধে জানতে হবে। কী আমাকে মানায় না, সে সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে জানাচ্ছেন  গ্রুমিং বিশেষজ্ঞরা। প্রয়োজনে পেশাদারদের সাহায্য নিতে পারেন।

কারণ এই সাজগোজই অনেকটা মার্কস ক্যারি করে, বলছিলেন দ্য ড্রিম মার্চেন্টের গ্রুমার সঞ্চিতা কুশারি। 'শাড়ি সালোয়ারে যিনি অভ্যস্ত, ছোট স্কার্টে তিনি নিজেকে মানাতে পারবেন না। শুধু স্কার্টের তলা টানবেন। আবার বেঢপ মোটা চেহারার অনেকেই ঢিলেঢালা পোশাক পরেন। তাতে আরও বেশি মোটা দেখায় তাদের।

সেটা তারা ভেবে দেখেন না। তাই সবার আগে দরকার একটা ওয়ার্ডড্রোব'।

তাই বলে উঠল বাই তো শপিং যাই, একেবারেই নয়। নতুন করে কিচ্ছুটি কিনতে হবে না। যা আছে তাই দিয়েই মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করুন।

কোথায় যাচ্ছেন সেটাও মাথায় রাখুন। মোদ্দা কথা, পোশাক বাছুন বুদ্ধি খাটিয়ে। আর যা-ই পরুন আগে তা পরখ করে দেখুন,  স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন কি না। জুতো ব্যাগ বা অন্যান্য অ্যাকসেসারিজের ব্যাপারেও একই কথা। মেক-আপ শিল্পী অনিরুদ্ধ চাকলাদার যেমন বললেন, 'অনেককেই দেখি ওয়েস্টার্নের সঙ্গে শাঁখা-পলা পড়তে, বা সুন্দর করে একটা টিপ পরছে।

কায়দা করে চুল কাটল, কিন্তু সেটা মেনটেন করার ধার ধারল না। চুলের এক দিকের কালার উঠেই গেল। বা নেলপলিশের অর্দ্ধেকটা উঠে গেল। তার চেয়ে বরং নেলপলিশ না-ই বা পরলেন। এ রকম ছন্নছাড়া ভাব একেবারই গ্রুমিং বিরোধী'।

আর শুধু সাজলেই হবে না। সুন্দর সাজলেন, কিন্তু গা দিয়ে দুর্গন্ধ বেরোলে পুরোটাই মাটি। সে রকম হলে রোজ ফিটকিরি মেশানো জলে স্নান করুন। ডিয়ো-পারফিউম মাস্ট। মুখে রাখুন লবঙ্গ বা ক্লোরোমিন্ট।

পুজোর দিনই হোক বা অফিস-ডে সকালের সাজটা সারা দিন ধরে রাখতে জানতে হবে। ব্যাগে রাখুন টিস্যু পেপার, ডিয়ো, চ্যাপস্টিক, আয়না, চিরুণির মতো প্রয়োজনীয় টুকিটাকি। ওয়াশরুমে গিয়ে মাঝে মাঝে এগুলোর সদ্ব্যবহার করে মেক-আপটা ঝালিয়ে নিন। সতেজ ভাবটা ফিরে পাবেন। নিজেকে সারাক্ষণ পরিপাটি করে রাখতে পারলে দেখবেন, কাঁধটা সোজা হয়ে গেছে, আত্মবিশ্বাস বাড়ছে।

নিজের গ্রুমার নিজেই এর পর ভেতরের ঘাটতিগুলো মেরামতের ব্যবস্থা করতে হবে। ভেতরে ভেতরে আত্মবিশ্বাসের অভাব অনেকেই বোধ করেন।   তার থেকেই অচেনা কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সব কেমন গুলিয়ে গেল। এক ঘর লোকের সামনে কথা বলতে অনেকেরই গলা কেঁপে যায়। আত্মবিশ্বাসের অভাবই এর কারণ।

এ ক্ষেত্রে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্র্যাকটিস করতে পারলে সবচেয়ে ভাল।

দরকারে কারও মুখের দিকে না তাকিয়ে মাথার ওপর দিকে তাকিয়ে কথা বলা রপ্ত করতে হবে। যেন সামনে কেউ নেই। শুনতে কেমন লাগলেও এটাই বাস্তব। সবচেয়ে মজার কথা, অনেক বাঘা বাঘা ঝকঝকে চেহারার এমবিএ-রা এ ভাবেই নিজেদের তৈরি করেন।

আমরা জানতেও পারি না। ভয়েস গ্রুমার বন্দিতা সরকারের কথায়, 'ভেতরকার এ সব ছোট বা বড় ত্রুটি মেরামত করতে কোনও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নাম লেখাতে হবে না। নিজের গ্রুমিং নিজেই করুন। দরকার নিজের খামতিগুলো চেনার মানসিকতা। বাড়ির কারও সাহায্য নিতে পারেন।

যিনি নিজেকে না রেখেঢেকে আপনার নেগেটিভগুলো ধরিয়ে দেবেন'।

আবেগের ঘরে তালা আবেগ নয়, কথা বলুন মেপে। শুধু পেশাগত জীবনেই নয়, বাস্তবের সঙ্গে পা মেলাতে বশে রাখতে হবে আবেগকে। বসের ঘরে ডাক পড়েছে। বুকের ভেতর উথালপাথাল।

গলা শুকিয়ে কাঠ। মুখ শুকিয়ে আমসি। মোটেই চলবে না এই সব দেখনদারি। পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, মুখে থাকবে এক চিলতে হাসি। হাসি মুখে ঝুলিয়ে রাখা অভ্যেস করুন।

কথাবার্তায় ও শরীরী ব্যবহারে থাকবে পজিটিভ অ্যাটিটিউড। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর একটি মানুষ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে হবে। ভেতরে যা-ই থাকুক না কেন, বাইরে তুলে ধরুন, আপনি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। আত্মবিশ্বাসের অভিনয় করতে করতে তা এক সময় চামড়ার সঙ্গে মিশে যাবে।  



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।