শারদীয় দুর্গাপূজা। সারা দিন এই মণ্ডপ থেকে সেই মণ্ডপ। ঘোরাঘুরির কারণে মণ্ডপে খাওয়া হবে নানা খাবার। কিন্তু ঘরের আয়োজনে তো একটু বৈচিত্র্য থাকা চাই। পূজার দিনে বাসায় আসা অতিথির জন্য কেমন হবে রান্না-বাড়া, তা-ই জানালেন আবাসন নির্মাণ এবিসি লিমিটেডের পরিচালক শ্রাবন্তী দত্ত, ‘পূজায় রান্না একটু বিশেষ না হলে কি চলে! আমিষ বা নিরামিষ যে রান্নাই হোক না কেন, একটু যত্ন নিয়েই রান্না করতে হয়।
অতিথি বা ঘরের মানুষের জন্য পূজার সময় একটি নির্দিষ্ট দিনে করব বিশেষ কিছু খাবার। ’
প্রতিদিন কাজের চাপে রান্না করা না হলেও বিশেষ দিনে রাঁধেন শ্রাবন্তী। রান্নাটা শিখেছেন পড়াশোনার কারণে বিদেশে থাকার সময়। কাঁচা হাতের সেই রান্না খেতেন নিজেই। তবে দেশে ফিরে মা লেখা ঘোষের কাছে হাত পাকিয়েছেন রান্নায়।
কাজের ফাঁকে সময় পেলেই বাসায় রান্না করেন পছন্দের বিভিন্ন পদ।
নকশার পাঠকদের জন্য পূজার দিনের খাবারের থালি সাজালেন শ্রাবন্তী দত্ত।
মিষ্টি পোলাও
উপকরণ: পোলাওয়ের চাল প্রয়োজনমতো, এর সঙ্গে পরিমাণমতো ঘি, আদা বাটা, হলুদ গুঁড়া, জাফরানি রং, এলাচি-দারুচিনি, কিশমিশ, লবণ ও চিনি, তেজপাতা কয়েকটি ও একমুঠ কাজুবাদাম।
প্রণালি: চাল ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। এরপর চালের সঙ্গে সব উপকরণ মাখিয়ে নিন।
পাত্রে তেল বা ঘি গরম করে তাতে তেজপাতা ও কাজুবাদাম একটু ভেজে নিন। এবার মাখানো চাল দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ভাজতে হবে। এবার চালের পরিমাণের দুই গুণ গরম পানি দিয়ে ঢেকে সেদ্ধ করে নিন। নামানোর আগে জাফরান ও ঘি মিশিয়ে নিন।
পোস্ত বেগুনি
উপকরণ: বেগুন মাঝারি একটা, ময়দা ১ কাপ, চালের গুঁড়া পৌনে এক কাপ, পোস্তদানা এক কাপের তিন ভাগের এক ভাগ, খাবার সোডা সিকি চা-চামচ, এক চিমটি হলুদ গুঁড়া, লবণ ও চিনি পরিমাণমতো।
প্রণালি: পাতলা করে বেগুন কেটে নিন। পানির সঙ্গে ময়দা, চালের গুঁড়া, পোস্তদানা, খাবার সোডা ও লবণ-চিনি মিশিয়ে ঘন গোলা করে নিন। বেগুনের টুকরাগুলো মাখিয়ে ডুবো তেলে ভেজে নিন।
সরষে পটোল
উপকরণ: মাঝারি পটোল ১০টি, কালিজিরা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ তিন-চারটি, সরষে বাটা দুই টেবিল চামচ, পোস্তদানা দুই চা-চামচ, লবণ ও চিনি স্বাদমতো।
প্রণালি: পটোল ছিলে লবণ দিয়ে হালকা ভাপিয়ে নিতে হবে।
সরষের তেলে কালিজিরা ও কাঁচা মরিচ ফোড়ন দিয়ে হলুদ, সরষে বাটা ও পোস্তদানা দিয়ে কষিয়ে পটোল দিয়ে রাঁধতে হবে। স্বাদমতো লবণ ও চিনি দিয়ে নেড়েচেড়ে নারকেলের দুধ দিয়ে ঝোল ঘন হলে নামাতে হবে।
ছোলার ডাল নারকেল
উপকরণ: ছোলার ডাল ১ কাপ, নারকেল কুচি আধা কাপ, ঘি, তেল, লবণ, জিরা, আদা বাটা, চিনি পরিমাণমতো। তেজপাতা ও শুকনা মরিচ ৪টা করে।
প্রণালি: লবণ দিয়ে ছোলার ডাল সেদ্ধ করে নিন।
ঘি মেশানো তেলে তেজপাতা, শুকনো মরিচ ও এলাচি-দারুচিনি ফোড়ন দিতে হবে। এতে নারকেল কুচি একটু ভেজে নিয়ে তাতে আদা বাটা, আস্ত জিরা ও কিশমিশ দিতে হবে। এবার সেদ্ধ ডাল ঢেলে দিয়ে নেড়েচেড়ে পরিমাণমতো লবণ-চিনি দিতে হবে। নামানোর আগে একটু ঘি ও বাটা গরম মসলা মেশাতে হবে।
চিতল মাছের কোপ্তা কারি
উপকরণ: পিঠের দিকের চিতল মাছ আধা কেজি, সেদ্ধ আলু মাঝারি তিনটি, আদা-রসুন বাটা ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, ফেটানো টক দই চার চা-চামচ, টমেটো সস স্বাদমতো, কাঁচা মরিচ, লবণ ও চিনি স্বাদমতো।
প্রণালি: চিতলের পিঠের মাছ কুরিয়ে নিয়ে তাতে সেদ্ধ আলু, আদা-পেঁয়াজ-রসুন বাটা, মরিচ গুঁড়া ও লবণ দিয়ে মাখিয়ে মণ্ড বানিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। পছন্দমতো আকারে কেটে টুকরাগুলো ভেজে কোপ্তা বানাতে হবে।
এবার তেলে তেজপাতা ও গরম মসলা ফোড়ন দিয়ে প্রথমে পেঁয়াজ, রসুন, আদা বাটা, পরে মরিচ ও ধনিয়া গুঁড়া দিয়ে ভালোমতো কষাতে হবে। এতে ফেটানো দই ও টমেটো সস দিয়ে মিনিট খানেক নাড়াচাড়া করে ভাজা ভাজা কোপ্তাগুলো দিতে হবে। আন্দাজমতো লবণ ও চিনি দিয়ে এতে গরম পানি ও কাঁচা মরিচ দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
কিছুটা ঝোল থাকা অবস্থায় নামিয়ে নিতে হবে।
পাঁঠার ঝাল মাংস
এটি পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া মাংস রান্না করার একটি সনাতন পদ্ধতি।
উপকরণ: পাঁঠার মাংস এক কেজি, অন্য সব মসলা ও উপকরণ পরিমাণমতো।
প্রণালি: পাঁঠার মাংস প্রয়োজনমতো হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, জিরা, আদা, দই, তেজপাতা, গরম মসলা, জয়ত্রী গুঁড়া, লবণ ও তেল দিয়ে মাখিয়ে ম্যারিনেট করে নিন। তেলে তেজপাতা, কাজু-কিশমিশের পেস্ট দিয়ে একটু নেড়ে ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে কষান।
মাংস প্রায় সেদ্ধ হয়ে আসছে—এমন সময় তেল ছেড়ে দিলে ভেজে রাখা আলু, কাঁচা মরিচ ও গরম পানি দিয়ে ঢেকে রাখুন। ঝোল ঘন হয়ে এলে ভাজা জিরা গুঁড়া ছড়িয়ে দিয়ে নামিয়ে নিন।
ছানা-মটরশুঁটির ডালনা
উপকরণ: দুই কেজি দুধের ছানা, জিরা এক চিমটি, তেজপাতা কয়েকটি, গুঁড়া হলুদ, শুকনা মরিচ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, আদা বাটা, লবণ ও কাঁচা মরিচ স্বাদমতো।
প্রণালি: ছানার পানি ঝরিয়ে চিপে নিয়ে কিউব করে কাটুন। এগুলো সোনালি রং করে ভেজে নিন।
তেলে তেজপাতা ও জিরা ফোড়ন দিন। অল্প পানিতে গুঁড়া হলুদ, মরিচ, জিরা, ধনিয়া ও আদা বাটা দিয়ে কষান। কষানো মসলায় মটরশুঁটি ও কিউব করে কাটা আলু দিয়ে ২-৩ মিনিট নেড়ে ভেজে রাখা ছানার টুকরা দিয়ে আরও দুই মিনিট ভাজুন।
এরপর লবণ ও গরম পানি দিয়ে ঢেকে রাখুন কিছুক্ষণ। ঝোল ঘন হয়ে এলে কাঁচা মরিচ আর ভাজা জিরার গুঁড়া দিয়ে নামান।
পাঁচমিশালি অম্বল
উপকরণ: কাঁচা আম বা আমড়া ছোট একটি, চালতা অর্ধেকটা, টমেটো মাঝারি একটা। শুকনো মরিচ তিন থেক চারটা, মৌরি, সরিষা, গুড় বা চিনি পরিমাণমতো, চাট মসলা পরিমাণমতো।
প্রণালি: সরষের তেলে পাঁচফোড়ন ও শুকনা মরিচ ফোড়ন দিয়ে কাঁচা আম, চালতা, টমেটো ইত্যাদি পছন্দমতো টক সবজি বা ফল দিন। নেড়েচেড়ে এবার অল্প লবণ, হলুদ, মরিচ দিন। কষানো হলে অল্প করে পানি দিয়ে সেদ্ধ করে নিন।
তারপর এই চাটনিতে আখের গুড় বা চিনি দিয়ে স্বাদমতো মিষ্টি করুন। সরষের তেলে মৌরি ও সরিষার ফোড়ন দিয়ে চাটনিতে মেশান। নামানোর আগে চাট মসলা ছড়িয়ে দিন।
ভাপে সরষে ইলিশ
উপকরণ: একটা মাঝারি আকারের ইলিশ, সরষে বাটা পরিমাণমতো, কাঁচা মরিচ বাটা ১ চা-চামচ, লবণ, হলুদ গুঁড়া কম করে ও সরষের তেল আধা কাপ।
প্রণালি: সব মসলা ভালোমতো মিশিয়ে নিন।
ইলিশের টুকরাগুলো এই মিশ্রণে ২০-২৫ মিনিট ম্যারিনেট করুন। একটি মাইক্রোওয়েভ-প্রুফ ছড়ানো পাত্রে সরষের তেল মাখিয়ে ম্যারিনেটসহ মাছের টুকরাগুলো পরপর সাজান।
কয়েকটি কাঁচা মরিচ মাছের ওপরে ছড়িয়ে পাত্রটি প্লাস্টিক র্যাপ দিয়ে ঢেকে সিল করে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ৫-৬ মিনিট স্টিম করুন। পাত্রটি বের করে সাবধানে ঢাকনা সরিয়ে মাছের টুকরা উল্টে দিয়ে আবার ৩-৪ মিনিট স্টিম করুন। দরকার হলে দ্বিতীয় বার স্টিম করার আগে তেল, লবণ, পানি দিতে পারেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।