আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এবার আলীম

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে আজ। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল এ তথ্য জানান। উভয় পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষা করছে। আলীমের জামিন বাতিল করে ওই দিন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে দাবি করে বিএনপির এই সাবেক মন্ত্রীর সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে প্রসিকিউশন।

তবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি দাবি করে আসামিপক্ষ অভিযুক্তের খালাস চেয়েছে। তার বিরুদ্ধে ১৭টি অভিযোগ আনা হয়। ইতিমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধবিষয়ক সাতটি মামলার রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

অভিযোগ
২০১২ সালের ১১ জুন ১৭ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল-২-এ আবদুল আলীমের বিচার শুরু হয়। প্রথম অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল আলীমের নেতৃত্বে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার দমদমা গ্রামের মেহেরউদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে হামলা চালায় রাজাকার বাহিনী।

ঘটনার পর মেহেরউদ্দিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য হন। দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল আলীমের নেতৃত্বাধীন রাজাকার বাহিনীসহ পাকিস্তানি সেনারা জয়পুরহাটের কড়ইকাদিপুর এলাকার চকপাড়া, সোনারপাড়া, পালপাড়া ও যুগীপাড়ার হিন্দু-অধ্যুষিত গ্রামের ৩৭০ জন বাসিন্দাকে গুলি করে হত্যা করে। তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের আষাঢ় মাসের প্রথম সপ্তাহে আলীমের পরামর্শ ও প্ররোচনায় এবং চিরোলা গ্রামের শান্তি কমিটির সদস্য রিয়াজ মৃধার সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা নওপাড়া, চরবরকত ও চিলোরা গ্রামের ২৮ জনকে পিছমোড়া করে বেঁধে আফাজের বাড়ির মাটির ঘরে নিয়ে গুলি করে। তাদের মধ্যে ২২ জন নিহত হন। ছয়জন প্রাণে বেঁচে যান।

চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একদিন পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে আলীম পাঁচবিবির বকুলতলা রেললাইনের কাছে নামেন। এরপর বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে কোকতারা, বাগজানা ও কুটাহারা গ্রামে হানা দিয়ে বাড়িঘরে লুটপাট চালানো ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে গুলি করে হত্যা করা হয় ১৯ জনকে। পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের বৈশাখ মাসের শেষ দিকে জয়পুরহাটের দক্ষিণ পাহুনন্দা মিশন স্কুলে আসামি আলীমের নির্দেশে ও প্ররোচনায় ৬৭ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়। ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের মে মাসের প্রথম দিকে আক্কেলপুরের ১০ জনকে আটক করা হয়।

তাদের শেষ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন আলীম। পরে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেওয়া হলে নয়জনকে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্য থেকে মোফাজ্জল নামে এক ব্যক্তি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। সপ্তম অভিযোগ, ২৬ মে নওদা গ্রামের চারজনকে অপহরণের পর আলীমের পরামর্শ ও প্ররোচনায় গুলি করে হত্যা করা হয়। অষ্টম অভিযোগ, একাত্তরের মে মাসের শেষ দিকে আলীমের নির্দেশে বাদল, শচীন ওরফে ভানু, প্রবাস চন্দ্র শীল, মণিভূষণ চক্রবর্তী, কার্তিক চন্দ্র বর্মণ, নিমাই চন্দ্র বর্মণ ও প্রিয়নাথ বর্মণসহ অপরিচিত আরও তিনজনকে হত্যা করা হয়।

নবম অভিযোগ, ১৪ জুন বগুড়ার খোকন পাইকারসহ ১৫ যুবক জয়পুরহাটের আক্কেলপুর হয়ে ভারত যাওয়ার পথে শান্তি কমিটির লোকজনের হাতে ধরা পড়েন। এরপর আলীমের নির্দেশে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন শেষে হত্যা করা হয় তাদের। দশম অভিযোগ, একাত্তরের জুন মাসের শেষের দিকে জয়পুরহাট সদর রোডের শাওনলাল বাজলার গদিঘরে শান্তি কমিটির অফিসে বসে 'মুক্তিযোদ্ধা' সন্দেহে পাহাড়পুর থেকে ধরে আনা ২৬ যুবককে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন আলীম। পরে ওই ২৬ যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। একাদশ অভিযোগ, মুক্তিযুদ্ধের সময় জুন মাসের শেষ দিকে কয়েকজন গাড়োয়াল এবং তাদের স্বজনসহ ২৬ জনকে আটক করা হয়।

এরপর আলীমের নির্দেশে গুলি করে তাদের হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। দ্বাদশ অভিযোগ, ২৪ জুলাই ডাক্তার আবুল কাশেমকে অপহরণের পর ব্যাপক নির্যাতন শেষে আলীমের নির্দেশে ২৬ জুলাই গুলি করে হত্যা করা হয়। ত্রয়োদশ অভিযোগ, একাত্তরের সেপ্টেম্বরে ১১ জন যুবককে আলীমের নির্দেশে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। চতুর্দশ অভিযোগ, ৭ অক্টোবর আক্কেলপুর সদরের ফজলুল করিম ও অন্য দুজনকে আলীমের নির্দেশে মুখে চুনকালি মাখিয়ে জয়পুরহাট শহর প্রদক্ষিণ করানো হয়। পরে গুলি করে হত্যা করা হয় তাদের।

পঞ্চদশ অভিযোগ, ২৫ অক্টোবর আলীমের নির্দেশে ২৫ জনকে পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে নেওয়া হয়। পরে তাদের হত্যা করা হয়। ষোড়শ অভিযোগ, একাত্তরে আক্কেলপুরের বিভিন্ন স্থানে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যদের মানবতাবিরোধী অপরাধে উৎসাহিত করেন আলীম। সপ্তদশ অভিযোগ, চট্টগ্রামের কালুরঘাটের ১৭ উইংয়ের ইপিআর সুবেদার মেজর জব্বল হোসেনকে আলীমের নির্দেশে হত্যা করে রাজাকাররা।

যেভাবে এগিয়েছে মামলাটি : অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ১১ জুন শুরু হয় আলীমের বিচার।

এর আগে ২০১১ সালের ২৭ মার্চ জয়পুরহাটের বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন তিনি। ৩১ মার্চ এক লাখ টাকা মুচলেকা এবং ছেলের জিম্মায় জামিন নেন। পরে বেশ কয়েক দফা বাড়ানো হয় জামিনের মেয়াদ। ২০১২ সালের ১৫ মার্চ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে প্রসিকিউশন। অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরে ১৬ এপ্রিল মামলাটি স্থানান্তর করা হয় ট্রাইব্যুনাল-২-এ।

৪ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর এবং ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট পাঁচ কার্যদিবসে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ ও রানা দাশগুপ্ত। অন্যদিকে ১৫ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর এবং ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ছয় কার্যদিবস আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবী তাজুল ইসলাম, আহসানুল হক হেনা ও আবু ইউসুফ মো. খলিলুর রহমান। ২৭ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আলীমের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন তিনজন। অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে গত বছরের ৬ আগস্ট থেকে এ বছরের ২২ আগস্ট পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তাসহ সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রসিকিউশনের মোট ৩৫ জন।

তবে ১৯তম সাক্ষী আবেদ হোসেনকে বৈরী ঘোষণা করে জেরা করেছে প্রসিকিউশন। অন্যদিকে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া দুজনের জবানবন্দিকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল।

মুক্তিযুদ্ধ সমর্থকদের খতমের নির্দেশ দেন ইউসুফ : একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দ্বিতীয় সাক্ষী নাসির উদ্দিন আহমেদ মলি্লক সাক্ষ্য দিয়েছেন। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ গতকাল তিনি বলেন, 'ইউসুফ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ও হিন্দুদের খতম করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ জন্য রাজাকারদের প্রশিক্ষণও দেন।

' জবানবন্দি শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী সাইফুর রহমান। জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'ইউসুফ খুলনায় শান্তি কমিটি গঠন করেন এবং কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৭ মে তার নির্দেশে রাজাকাররা মোরেলগঞ্জ বাজারে চার-পাঁচশ দোকানে লুটপাটের পর অগি্নসংযোগ করে। ১৯ মে রাতে ইউসুফ গানবোটে মোরেলগঞ্জ বাজারে যাওয়ার পথে চার রাস্তার মোড়ে বক্তৃতায় মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ও হিন্দুদের খতম করতে বলেন।

পরে শান্তি রঞ্জন, সত্য রঞ্জন, কেশব চন্দ্রকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পালিয়ে বাঁচেন অমর দাশ ও পীযূষ কান্তি। '

সাঈদীর আপিল শুনানি মুলতবি : মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর করা আপিলের ওপরে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে গতকাল ১১তম দিনের মতো শুনানি হয়। এ মামলার শুনানি ১২ নভেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

আসামিপক্ষ এরই মধ্যে ট্রাইব্যুনালের রায় পড়া শেষ করেছে। এখন সাক্ষীদের জবানবন্দি উপস্থাপন চলছে।

সময় পেলেন গোলাম আযমের আইনজীবীরা : মানবতাবিরোধী অপরাধে ৯০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের করা আপিলের সারসংক্ষেপ ৫ নভেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। মামলাটি গতকাল কার্যতালিকায় এলে আসামিপক্ষ সময়ের আবেদন করে।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ৫ আগস্ট খালাস চেয়ে আপিল করেন গোলাম আযম। অন্যদিকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করে সরকার।

নিজামীর পক্ষে সাক্ষ্য ২০ অক্টোবর : মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর পক্ষে ২০ অক্টোবর সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল এ দিন নির্ধারণ করেন।



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.